স্পেন থেকে সংবাদদাতা :
স্পেনের ১১৩ বছর বয়সী একজন বৃদ্ধা করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে সেরে উঠছেন বলে দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
দেশটিতে তাকে সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যে কেয়ার হোমে তিনি ছিলেন সেখানকার আক্রান্ত অন্য বাসিন্দারা মারা গেছেন। কেয়ার হোম থেকে মঙ্গলবার (১২ মে) এ কথা বলা হয়েছে।
স্পেনের ওলোত শহরের শান্তা মারিয়া ডেল তুরা কেয়ার হোমে মারিয়া ব্রায়ানাস এপ্রিলে করোনায় আক্রান্ত হন। যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেয়া মারিয়া ব্রানিয়াস এখানে ২০ বছর ধরে বাস করছেন।
কেয়ার হোমের একজন মুখপাত্র জানান, তিনি করোনা থেকে সেরে উঠেছেন এবং ভালো আছেন। করোনার সামান্য উপসর্গ তার মধ্যে দেখা দিয়েছিল বলে ওই মুখপাত্র উল্লেখ করেন। গত সপ্তাহে তার করোনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। সেটা নেগেটিভ এসেছে। বিস্তারিত উল্লেখ না করে মুখপাত্র এ কথা জানান। তিন সন্তানের জননী মারিয়া ব্রানিয়াস করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর তার রুমে কয়েকসপ্তাহ আইসোলেশনে ছিলেন। এ সময়ে কেবল একজন স্টাফ সুরক্ষা পোশাক পরে তার দেখাশুনা করতো। কাতালানের আঞ্চলিক টেলিভিশন টিভি থ্রিতে তার ওপর একটি প্রমাণ্য ভিডিও প্রচার করা হয়। তাতে তিনি ওই স্টাফকে অনেক দয়ালু, অনেক মনোযোগী হিসেবে উল্লেখ করেন।
মারিয়া ১৯০৭ সালের ৪ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোতে জন্ম নেন। স্পেনের উত্তরাঞ্চল থেকে তার বাবা যুক্তরাষ্ট্রে যান। পেশায় তার পিতা ছিলেন সাংবাদিক। প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালে তারা নৌকায় করে স্পেনে ফেরেন। ১৯১৮-১৯ সালে স্প্যানিশ ফ্লু মহামারির সময়েও তিনি বেঁচে গেছেন। এছাড়া স্পেনের ১৯৩৬-৩৯ সালের গৃহযুদ্ধ দেখার অভিজ্ঞতাও তার হয়েছে। করোনায় পর্যুদস্ত বিশ্বের দ্বিতীয় খতিগ্রস্থ দেশ স্পেন। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেব মতে, কোভিড -১৯ এ এখানে ২৭ হাজার লোক মারা গেছে।
মার্চে স্পেনে যখন লকডাউন শুরু হয় তখন মারিয়ার কোভিড-১৯ ধরা পড়ে। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ আইসোলেশনে থাকার পর তিনি সুস্থ হয়ে উঠতে শুরু করেন। এখন শুধু মৃদু উপসর্গে ভুগছেন তিনি।
এর মাধ্যমে মারিয়া স্প্যানিশ ফ্লু নামে পরিচিত ১৯১৮-১৯ সালের ফ্লু মহামারী, ১৯৩৬-৩৯ সালের স্পেনের গৃহযুদ্ধ ও এবারের করোনাভাইরাস মহামারীতে টিকে গেলেন।
এক টুইটে তার মেয়ে বলেছেন, “এখন উনি সুস্থ, চমৎকার আছেন, কথা বলতে চাইছেন… তার স্বাভাবিকতা ফিরে এসেছে।”
যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেয়া মারিয়া ব্রানিয়াস প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে স্প্যানিশ সাংবাদিক বাবার সঙ্গে স্পেনের কাতালান প্রদেশের জিরোনাতে আসেন। গত দুই দশক ধরে তিনি কাতালান প্রদেশের ওলোট শহরের একটি কেয়ার হোমে থাকছেন।
মারিয়া তিন সন্তানের মা। তার সন্তানদের একজনের বয়স সম্প্রতি ৮৬ পার হয়েছে। ১১ জন নাতিনাতনির মধ্যে সর্বজ্যেষ্ঠ জনের বয়স ৬০। মারিয়ার প্রপৌত্রের সংখ্যা ১৩ জন। গত বছর স্প্যানিশ দৈনিক লা ভাংগুয়ারদিয়াকে তিনি বলেছিলেন, “আমি বেঁচে থাকা ছাড়া কিছুই করিনি।”