স্পেন থেকে সংবাদদাতা :
কয়েকদিন আগেই এক বাঘের শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আর তা থেকে তৈরি হয়েছে নতুন আতঙ্ক। তবে কি এই ভাইরাস প্রাণী থেকে বহন করতে পারে? এবার স্পেনের একটি বিড়ালের মৃত্যু থেকে বাড়ছে জল্পনা।
তবে গবেষকরা জোর দিচ্ছেন যে প্রাণীজ এই ভাইরাসটি মানুষ ছাড়া অন্য প্রাণীতে সংক্রান্ত হওয়া অকল্পনীয়, এবং তাদের কাছে এখন অব্দি কোন পোষা প্রাণী থেকে মানুষের শরীরে এর সংক্রমণ হওয়ার কোন প্রমাণ নেই।
প্রায় এক সপ্তাহ আগে বার্সেলোনার অ্যানিমেল হেলথ রিসার্চ সেন্টারের (ক্রেসা) বিশেষজ্ঞরা একটি বিড়ালের মরদেহ পেয়েছিলেন। পোষা প্রাণীটি এমন একটি পরিবারের সাথে সম্পর্কিত যেখানে বেশ কয়েকটি সদস্য কোভিড -১৯ এর পরিক্ষায় জন্য পজেটিভ ধরা পড়েছিলেন। শ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছিল বিধায় সেপরিবারের পক্ষ থেকে বিড়ালটিকে পশু চিকিৎসালয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। এটির একটি খুব কম প্লেটলেট গণনাও ছিল এবং হার্টের ব্যর্থতায় ভুগছিল। পশু চিকিৎসকরা প্রাণীটিকে নীচে রাখার সিদ্ধান্ত নেয় এবং তার দেহটি ক্রেসায় প্রেরণ করবে বলে জানায়।
পরে সেখানকার গবেষকরা ঝঅজঝ-ঈঙঠ-২ ভাইরাসের সন্ধানে বিড়ালটির বেশ কয়েকটি অঙ্গ নিয়ে অধ্যয়ন করেন। আশ্চর্যজনক ভাবে যা তারা দুটি জায়গায় আবিষ্কার করতে পেরেছিলেন: অনুনাসিক গহ্বর এবং অন্ত্রের কাছে একটি লিম্ফ নোড। যদিও এর সংক্রামণ হার খুব কম ছিল। শুক্রবার (৮মে) অ্যানিমেল হেলথ রিসার্চ সেন্টারের (ক্রেসার) প্রকাশিত বিশ্লেষণ অনুসারে, বিড়ালের হাইপারট্রফিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি নামে পরিচিত একটি জিনগত হৃদরোগ ছিল যা এটির হঠাৎ মৃত্যুর কারণ হতে পারে। বিড়ালটির শরীরে পাওয়া সমস্যাগুলির কোনোটিই করোনাভাইরাস সংক্রমণের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। পশু চিকিৎসকদের মতে ভাইরাসটি বিড়ালের স্বাস্থ্যের উপরে কোনও প্রভাব ফেলেনি।
বিড়ালটির বয়স চার বছর এবং এর নাম নেগ্রিটো। গবেষকরা গোপনীয়তা রক্ষার জন্য বিড়ালের মালিকদের সম্পর্কে আর কোনও তথ্য সরবরাহ করেননি। “এখন দেখা যাচ্ছে খুবই বিচ্ছিন্ন ভাবে বিড়ালরা এই মহামারীটির সমান্তরাল শিকার হতে পারে, তবে তাদের মাধ্যমে মানুষের কাছে সংক্রামণ করার সম্ভাবনা খুব কম রয়েছে।” বার্সেলোনার অ্যানিমেল হেলথ রিসার্চ সেন্টার (ক্রেসার) প্রধান নাটালিয়া মাখো এই তথ্য জানান।
“আমরা এই তথ্যটি একটি বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশ করার ইচ্ছা করছি, তবে এর আগে আমরা ভাইরাসের জিনোমকে পরিক্ষা করে দেখার চেষ্টা করতে চাই যে এই প্রাণীর মধ্যে কোন অ্যান্টিবডি ছিল কিনা।” খোয়াকিম সেগালেস নামের এক ক্রেসার গবেষক একথা যুক্ত করেন।
করোনাভাইরাসের সাথে এটি সনাক্ত করা পৃথিবীর এটি ষষ্ঠ বিড়াল। মুষ্টিমেয় কিছু প্রাণী এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে, তাদের মধ্যে দুটি কুকুর, নিউ ইয়োর্কে পাঁচটি বিড়াল। হংকংয়ের একটি, বেলজিয়ামের একটি, নিউইয়র্কের একটি এবং ফ্রান্সে সোমবার একটি প্রাণী পাওয়া গেছে।
তাছাড়া সম্প্রতি, নিউ ইয়র্কের ব্রংকস চিড়িয়াখানায় বাঘের শরীরে করোনা ভাইরাস ধরা পড়েছে। একাধিক বাঘ ও সিংহকে সম্প্রতি অসুস্থ হয়ে পড়তে দেখা যায়। প্রত্যেকেরই শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এরপর ওই বাঘটিকে পরীক্ষা করা হয়। চার বছর বয়সী মালয়েশিয়ান বাঘটির নাম নাদিয়া।
শুধু এই বাঘটিই নয়, বাঘটির বোন সহ আরও দুটি বাঘ ও তিনটি আফ্রিকার সিংহের শুকনো কাশি হতে দেখা যায়। যেহেতু পশুদের অজ্ঞান করে পরীক্ষা করতে হয়, তাই সব পশুকে পরীক্ষা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পশু চিকিৎসকরা।
চিড়িয়াখানার এক কর্মীর শরীর থেকে ওই ভাইরাস পশুদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। আপাতত ওই বাঘগুলিকে আলাদা করে রাখা হয়েছে, যাতে বাকি পশুদের শরীরে ভাইরাস না ছড়িয়ে পড়ে। এমনিতে গত ১৬ মার্চ থেকে ওই চিড়িয়াখানা বন্ধ রাখা হয়েছে।