কাজিরবাজার ডেস্ক :
রমজানুল মোবারকের আজ ১৪তম দিবস। দেখতে দেখতে আমরা মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার প্রায় অর্ধেক মঞ্জিল পার করে এসেছি। আজ পবিত্র জুমাবার। ইসলামে সপ্তাহের এ দিনটির মর্যাদা অনেক বেশি। একে বলা হয় সাইয়্যিদুল আইয়াম বা শ্রেষ্ঠ দিন। মুহাম্মদ ইবনে সীরীন (রহ.) বলেন, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর হিজরতের পূর্বে এবং জুমা’র নামাজ ফরজ হওয়ার আগে মদীনা শরিফের লোকেরা মুসলমানদেরকে একত্রিত করার ব্যবস্থা করেন এবং তারাই এই দিনকে জুমার দিন বলে নামকরণ করেন। এর প্রেক্ষাপট হলো এই যে, একবার মদীনার আনসারী সাহাবীগণ পরস্পর এ কথা বলাবলী করলেন যে, খ্রীস্টান ও ইহুদীরা নিজেদের একত্রিত হওয়ার জন্য একটি দিন সাব্যস্ত করে নিয়েছে। সুতরাং আমাদের ও এমন একটি দিন সাব্যস্ত করা আবশ্যক যে, এ দিনে আমরা সালাত আদায় করব, জিকির করব এবং আলাহর শুকরিয়া আদায় করব। পরামর্শক্রমে জুমার দিনকে তারা এ কাজের জন্য সাব্যস্ত করেন। এর পূর্বে এ দিনকে ‘ইয়াওমুল আরূবাহ’ বলা হতো। এর পর একদা আনসারী সাহাবাগণ হযরত আসয়াদ ইবনে যুরারাহ (রাদি.)-এর নিকট একত্রিত হলে তিনি তাদেরকে নিয়ে দু’রাকাত নামাজ আদায় করেন এবং একে জুমার দিন বলে নামকরণ করেন। এরপর তিনি তাদের জন্য বকরি যবেহ করেন এবং সকলেই তা থেকে আহার করেন। তাফসিরে মাআরিফুল কোরানে বর্ণনা করা হয়েছে আরবে কাব ইবনে লুয়াই সর্বপ্রথম এর নাম ইয়াওমুল জুমা রাখেন। এদিনে কুরাইশদের সমাবেশ হতো এবং কাব ইবনে লুয়াই ভাষণ দিতেন। এটা রাসূল (স.) আবির্ভাবের পাঁচ শ’ ষাট বছর পূর্বের ঘটনা। কাব ইবনে লুয়াই ছিলেন রাসূল (স.)-এর পূর্ব পুরুষদের অন্যতম। মহান কোরান ব্যাখ্যা তা হযরত ইবনে কাসির বর্ণনা করছেন মদীনা শরিফে নবীজী (স.) যখন জুমার নামাজ ও খুতবা দিতেন তা সুসমাপ্ত হওয়ার আগেই কিছু সংখ্যক মুসল্লি সিরিয়া থেকে আসা দেহইয়া ইবনে খালফ কালবির বাণিজ্যিক কাফেলা দেখে সস্তায় কেনাকাটার জন্য মসজিদ থেকে বেরিয়ে যান। তাদের বারণ করার জন্য আল্লাহ তায়ালা সূরা জুমুআ নাযিল করলেন।
ইরশাদ হচ্ছে : হে ঈমানদারগণ! যখন জুমুআর নামাজ আদায় করার জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ত্বরা কর এবং ব্যবসা-বাণিজ্য স্থগিত কর, এটি তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা গভীরভাবে উপলব্ধি কর। ’
কারও কারও মতে, ‘ইয়াওমুল জুমুআ’ অর্থ একত্রিত হওয়ার দিন। যেহেতু হযরত আদম (আ.) ও হযরত হাওয়া (আ.) দুনিয়ায় এ দিনেই একত্রিত হয়েছিলেন। তাই এ দিনকে ‘ইয়াওমুল জুমুআ’ বলা হয়। আবার কেউ কেউ বলেছেন, যেহেতু এ দিনের মাঝে অনেক কল্যাণ জমা করা হয়েছে তাই এই দিনকে ‘ইয়াওমুল জুমুআ’ বলা হয়। জুমার দিনের ফজিলতের কথা বেশ কিছু হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। কয়েকটি হাদিস নিম্নে উলেখ করা হল :
হযরত রাসূলে কারীম (স.) বলেছেন, সর্বোত্তম দিন হলো জুমার দিন। এ দিনে হযরত আদম (আ.)কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ দিনে তাকে জান্নাতে দাখিল করা হয়েছে, এ দিনে হযরত আদম (আ.)কে জান্নাত থেকে দুনিয়ায় পাঠানো হয়েছে এবং এ দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে। -(মুসলিম শরিফ ১ম খণ্ড)। জিন এবং ইনসান ব্যতীত সকল প্রাণিকুল শুক্রবার দিন সুবহি সাদিক থেকে নিয়ে সূর্যোদয় পর্যন্ত, কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার ভয়ে সন্ত্রস্ত হয়ে অপেক্ষমাণ থাকে। এ শুক্রবার দিন এমন একটি সময় আছে, যে সময় কোন মুসলিম বান্দা নামাজ আদায়রত অবস্থায় আল্লাহর কাছে যে কোন জিনিসের প্রার্থনা করবে আল্লাহ তাকে তা দান করবেন।
জুম্মার দিনে কিছু সুন্নাত ও মুস্তাহাব কাজ রয়েছে। যেমন- (১) গোসল করা। (২) মিসওয়াক করা। (৩) সুগন্ধি ব্যবহার করা। (৪) উত্তম কাপড় পরিধান করা। (৫) জুুমার নামাজের জন্য সকাল সকাল যাওয়া। (৬) ধীরস্থির গাম্ভীর্যের সঙ্গে হেঁটে নামাজের দিকে যাওয়া। (৭) ইমামের কাছে বসা। (৮) জুমার দিনে এবং রাতে রাসূলুল্লাহ (স.)-এর ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা। (৯) দু’আ কবুলের বিশেষ মুহূর্তটি পাওয়ার জন্য অধিক পরিমাণে দু’আ করা। (১০) জুমার দিনে গোসলের পূর্বে হাত-পায়ের নখ কাটা। (১১) জুমার নামাজে রাসূলুল্লাহ (স.) সূরা জুমা এবং সূরা মুনাফিকুন অথবা সূরা আ’লা এবং সূরা গাশিয়া পড়তেন। (১২) জুমার দিন নামাজের পূর্বে অথবা পরে সূরা কাহ্ফ তিলাওয়াত করা খুবই সওয়াবের কাজ। এ বছর মাহে রমজানে জুমা মসজিদে যাতায়াতের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের কারণে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে, নিজের জন্য পরিবার ও সমাজের সুস্থতার স্বার্থে তা মেনে চলতে হবে।