সিলেটে একের পর এক ডাক্তার-নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন

5

স্টাফ রিপোর্টার :
চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোর একটি। স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয়। তাদের দেওয়া ওষুধ-পথ্য বা হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্মীদের সেবায় মানুষ রোগ থেকে সেরে ওঠে। একটি দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যেমন অস্ত্রহাতে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন সৈনিকরা, তেমনি আহতদের চিকিৎসা সেবায় সারথি হন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।
যেকোনো মহামারিতেই অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। করোনা ভাইরাস মোকাবিলায়ও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে।
এরই মধ্যে সিলেটে প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত ডা. মঈন উদ্দিনসহ দেশে দুই চিকিৎসক মারা গেছেন।
তাদের হারানোর পরও থেমে নেই চিকিৎসক সমাজ। করোনা ভাইরাস থেকে মানুষকে সুস্থ করে তুলতে অবারিত চেষ্টা করে যাচ্ছেন তারা। গত ৭ এপ্রিল থেকে সিলেটে বিভাগে এখন পর্যন্ত ২৮ চিকিৎসকসহ ৫৭ জন স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে গাইনি বিভাগের অধ্যাপকসহ নারী চিকিৎসক রয়েছেন ১৭ জন। সিলেট জেলায় ১৬ ইন্টার্ন চিকিৎসকসহ ২৮ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন ডা. মঈন উদ্দিন। এ জেলায় হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুই কর্মীরও কোভিড-১৯ পজিটিভ এসেছে। এছাড়া সুনামগঞ্জে দুইজন চিকিৎসক, একজন স্বাস্থ্যকর্মী ও পাঁচজন কর্মচারী, হবিগঞ্জে পাঁচজন চিকিৎসক, সাতজন নার্স ও ১৩ স্বাস্থ্যকর্মী এবং মৌলভীবাজারে একজন চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন। সংশ্লিষ্ট জেলার সিভিল সার্জনদের বরাত দিয়ে বাংলানিউজের জেলা প্রতিবেদকরা এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন তৌহীদ আহমদের বরাত দিয়ে শ্রীমঙ্গলে কর্মরত ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন জানান, জেলায় ২৬ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে একজন চিকিৎসক আছেন।
হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মুখলেছুর রহমান উজ্জ্বলের বরাত দিয়ে জেলা প্রতিবেদক বদরুল আলম জানান, গত ১১ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা এক গাড়িচালকের মাধ্যমেই সেখানে করোনা ভাইরাসের গণসংক্রমণ শুরু হয়েছে। বর্তমানে জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ৭৬। তাদের মধ্যে নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী ২৩ জন। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ৮ জন। বাকিরা নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ।
সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন শামস উদ্দিনের বরাত দিয়ে জেলা প্রতিবেদক আশিকুর রহমান পীর বলেন, সুনামগঞ্জে মূলত নারায়ণগঞ্জ থেকে আগতদের মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের গণসংক্রমণ শুরু হয়। সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হচ্ছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় দুই চিকিৎসক, এক নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের আরও পাঁচজনের করোনা পজিটিভ এসেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেটের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান জানান, সোমবার (৪ মে) দিন পর্যন্ত চার জেলায় চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মী ৪১ জনের করোনা পজিটিভ এসেছে। তবে রাতে ১৬ জন ইন্টার্ন চিকিৎসকের শনাক্ত হওয়ার বিষয়টি তিনি এখনো হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করেননি।
তিনি জানান, করোনা পজিটিভধারীরা কোনো না কোনোভাবে চিকিৎসা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন। বিশেষ করে হবিগঞ্জে ঢাকা থেকে আগত লোকজনের মাধ্যমে ৮০ ভাগ আক্রান্ত হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট কার্যালয়ের তথ্য মতে, সোমবার ৫ জনসহ বিভাগে এ পর্যন্ত করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন ১৯৪ জন। এর মধ্যে হবিগঞ্জে ৭৬ জন, সুনামগঞ্জে ৫৮ জন, সিলেটে ৫১ ও মৌলভীবাজারে ২৬ জন। এরপর সোমবার রাতে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের আরও ১৭ জন শনাক্তের খবর মিলেছে হাসপাতাল সূত্রে।
এছাড়া গত ৭ এপ্রিল থেকে ৫৭ চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীসহ সিলেট বিভাগে করোনা পজিটিভ ২৪৬ জন। এর মধ্যে ঢাকার পিসিআর ল্যাব থেকে প্রায় সহস্রাধিক নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে মৌখিকভাবে ৯৯ জন শনাক্ত হওয়ার খবর মিললেও ২০ জনের ইমেইল রিপোর্ট এসেছে। বাকি ৭৯ জনের মৌখিক রিপোর্ট পাওয়ায় সেগুলো মূল হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এ হিসাবের মধ্যে ডা. মঈন উদ্দিন, হবিগঞ্জের এক শিশু ও মৌলভীবাজারের এক ব্যক্তি মারা গেছেন। বিপরীতে সুস্থ হয়ে ফিরেছেন কেবল সুনামগঞ্জের একজন রোগী।
শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বাড়বে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেটের ডা. আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমরা ঢাকার পিসিআর ল্যাব থেকে মৌখিকভাবে জানা হিসাব কাগজে কলমে অন্তর্ভুক্ত করিনি।’