স্পোর্টস ডেস্ক :
ফের ঝুলে গেল ভাগ্য। এক বছর পেছানোর পর এখন শোনা যাচ্ছে আগামী বছরেও গেমস আয়োজনে সন্দিহান আয়োজকরা। আদৌ কি অনুষ্ঠিত হবে টোকিও অলিম্পিক? প্রবল সংশয়ে রয়েছে ক্রীড়াবিশ্ব। নোভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের জেরে ঠিক এক বছর পিছিয়ে দেয়া হয়েছে অলিম্পিক গেমস। আশা করা হয়েছিল, এই এক বছরে পরিস্থিতি হয়তো সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। কিন্তু এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি, তার দিকে তাকালে স্বস্তিতে থাকতে পারছেন না টোকিও অলিম্পিকের আয়োজকরা। এক সাক্ষাতকারে আয়োজক কমিটির প্রধান ইয়োশিরো মোরি জানিয়ে দিয়েছেন, সংক্রমণ যদি নিয়ন্ত্রণে না আসে, তাহলে টোকিও অলিম্পিক বাতিলই করতে হবে। তার এই মন্তব্যের পরই বিশ্বজুড়ে আশঙ্কা ছড়িয়েছে ক্রীড়াবিদদের মনে। শুধু তাই নয়, জাপান মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইয়োশিতাকে ইয়োকোকুরাও জানিয়েছেন, সংক্রমণ না থামলে এবং করোনাভাইরাসের টিকা আবিষ্কার না হলে টোকিও অলিম্পিক আয়োজন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
এক বছর পিছিয়ে ২০২১ সালের ২৩ জুলাই অলিম্পিক শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। ইয়োশিরো মোরি জানান, অলিম্পিক পেছনো আর সম্ভব নয়। এর আগে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অলিম্পিক বাতিল হয়েছিল। এবারও কি তাই হবে? মোরি বলেছেন, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ মানে তো অদৃশ্য শত্রুর সঙ্গে লড়াই। এটা বিশ্বযদ্ধের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তার কথায়, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এলে পরের বছর অবশ্যই অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু এখানেই রয়েছে বড় প্রশ্নচিহ্ন। জাপানের চিকিৎসক মহলের সংশয় রয়েছে এই ব্যাপারে। শুধু জাপানই নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশেও করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসা দরকার বলে তাদের অভিমত। সঙ্গে দরকার করোনার টিকা। ইয়োকোকুরা বলেছেন, আশা করছি দ্রুত ভ্যাকসিন এবং ড্রাগ আবিষ্কৃত হবে। কার্যকরী ভ্যাকসিন ছাড়া অলিম্পিক আয়োজন কোনভাবেই সম্ভবই নয়। আপনি কি টিকা ছাড়া অলিম্পিকের বিরোধী? ইয়োকোকুরার মন্তব্য, অলিম্পিক আয়োজন করা উচিত নয়, এটা আমি কখনও বলছি না। কিন্তু ভ্যাকসিন ছাড়া আয়োজন হওয়া খুবই কঠিন ও ভয়ঙ্কর ঝুঁকিপূর্ণ হবে।
উল্লেখ্য, এর আগে জাপানের কোবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবাণু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক কেনতারো আইওয়াতাও বলেছিলেন, সত্যি বলতে কী, পরের বছরও অলিম্পিক আয়োজন করা সম্ভব বলে আমি মনে করি না। ইয়োকোকুরাও বলেছেন, যদি দেখা যায় জাপানে সংক্রমণ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কিন্তু বিশ্বের অন্য প্রান্তে আসেনি, তাহলেও অলিম্পিক আয়োজন সম্ভব নয়। যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে, টিকা আবিষ্কার এবং তার ব্যবহার কার্যকরী করতে ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লাগে। ফলে টিকা যদি আবিষ্কার হয়ও, সেক্ষেত্রে কি আগামী বছর অলিম্পিকের আগে তা বাজারে চলে আসবে? এই প্রশ্নেও সরগরম ক্রীড়ামহল। বিশ্বজুড়ে ক্রীড়াবিদ এবং নানা দেশের ফেডারেশনের আপত্তিতেই পিছিয়ে ছিল অলিম্পিক। এখন আবার বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে, করোনার টিকা আবিষ্কৃত না হলে অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করা সম্ভব নয়। সব মিলিয়ে টোকিও অলিম্পিকের ভবিষ্যত নিয়েই সন্দিহান সবাই।
সাক্ষাতকারে টোকিও অলিম্পিক আয়োজক কমিটির প্রধান মোরি আরও জানান, খরচ কমাতে তাদের পরিকল্পনা ছিল অলিম্পিক এবং প্যারালিম্পিকের উদ্বোধনী এবং সমাপ্তি অনুষ্ঠান একসঙ্গে করার। সেক্ষেত্রে ২৩ জুলাই অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেই সূচনা হতো প্যারালিম্পিকের। আবার সেপ্টেম্বরে প্যারালিম্পিকের সমাপ্তি অনুষ্ঠানেই যবনিকা পড়ত অলিম্পিকের। আবার আয়োজক কমিটির একাংশের বক্তব্য, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা কঠিন।
অলিম্পিক পিছিয়ে যাওয়ায় অর্থনৈতিক দিক থেকেও চিন্তায় রয়েছেন আয়োজকরা। কারণ খরচ অনেকটাই বেড়ে যাবে। যা নিয়েও শুরু হয়েছে চাপানউতোর। যদি আগামী বছর অলিম্পিক হয়, তাহলে বর্ধিত খরচ কীভাবে সামলাবেন? মোরির জবাব, আইওসির উচিত ওই খরচের অর্ধেকটা বহন করা।