দীর্ঘদিন থেকে কোর্ট বন্ধ থাকায় জামিন আটকে আছে অনেক আসামীর

4

কাজিরবাজার ডেস্ক :
দীর্ঘদিন ধরে কোর্ট বন্ধ থাকায় বিচারপ্রার্থীরা ভোগান্তিতে রয়েছেন। অনেকের জামিন হয়েছে কিন্তু বন্ধের কারণে আদেশ পাওয়া যাচ্ছে না, এ কারণে তারা বের হতে পারছে না।
আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এ রকম অনেক ব্যক্তিই সমস্যায় পড়েছেন। সুপ্রিম কোর্ট বন্ধ থাকায় মৌলিক অধিকার খর্ব হওয়া অনেক ব্যক্তিও প্রতিকার পাচ্ছেন না।
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া কারোনা ভাইরাসের প্রার্দুভাবের মধ্যে বিভিন্ন সমস্যা বিবেচনায় ইতোমধ্যে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন কয়েকটি নির্দেশনাও জারি করেছেন। যেমন করোনা পরিস্থিতির কারণে আদালত বন্ধ থাকায় ইতোমধ্যে যেসব মামলায় জামিনের মেয়াদ ও অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে সেসব মামলার আদেশের কার্যকারিতা আদালত খোলার পর দুই সপ্তাহ পর্যন্ত বাড়িয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট।
এছাড়া বিশেষ আইনের মামলায় আদেশ ও রায়ের বিরুদ্ধে আদালত খোলার দিন আপিল দায়ের করা যাবে।
এছাড়া দেশের প্রত্যেকটি জেলায় চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জরুরি মামলার জন্য এক বা একাধিক ম্যাজিস্ট্রেট কর্মরত আছেন বলে নির্দেশনায় জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
তবুও জরুরি বিষয়ে শুনানির জন্য স্বল্প পরিসরে সুপ্রিম কোর্ট খোলার অনুরোধ করেছেন আইনজীবীরা।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতির কারণে অপ্রত্যাশিতভাবে আদালত বন্ধ আছে। আমরা বলেছি, মানুষের যে মৌলিক অধিকার মানুষ যেন আইনের প্রতিকার পেতে পারে সেজন্য একটা ব্যবস্থা যেটা সবসময় সংবিধানসম্মত মানুষের যাওয়ার রাস্তা যেন খোলা থাকে এটা হচ্ছে আমাদের মূল উদ্দেশ্য।
‘দীর্ঘদিন ধরে কোর্ট বন্ধ থাকায় আইনজীবীরা পেশাগতভাবে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনি সাধারণ মানুষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।’
রুহুল কুদ্দসু কাজল আরও বলেন, বন্ধের আগে অনেক জামিনের আদেশ হয়েছে যেগুলো পাঠানো সম্ভব হয়নি। এগুলো পাঠাতে হলে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, এটার জন্য সেকশন খুলতে হবে অনেক মানুষের সমাগম হবে। এখান থেকে করলেও জেলখানা, স্থানীয় আদালত এসব বিষয়গুলো খোলার প্রশ্ন থাকবে। আমরা বলেছি এ আদেশগুলো পাঠাতে, বিশেষ করে জামিনের আদেশগুলো, যারা জামিন পেয়েছে তারা যেন মুক্তি পেতে পারে।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি এএম আমিন উদ্দিন বলেন, যারা জেলে আছেন তাদের তো সমস্যা হচ্ছে। বর্তমান সমস্যার আগে যারা ছোটখাটো অপরাধে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তাদের মামলাগুলোর শুনানি হচ্ছে না। ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট যদি তাদের রিফিউজ করে তখন তাদের কোনো উপায় থাকছে না। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট খোলা থাকলে তাদের এই সমস্যায় পড়তে হতো না। কারণ প্রত্যেক মানুষের অধিকার আছে জামিনে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করা। সে অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছে। বন্ধের আগের আদেশগুলো (জামিনের) সাইন (স্বাক্ষর) করে যেন ওয়েবসাইটে দিয়ে দেওয়া হয় সে বিষয়টি প্রধান বিচারপতিকে বলেছি। কারণ ওরাতো জামিন পেয়ে গেছে ১৫, ১৬ কিংবা ১৮ দিন আগে। কিন্তু তারা এ সমস্যার কারণে বেরোতে পারছে না।
আইনজীবী এবিএম ওয়ালীউর রহমান খান বলেন, যেসব জামিন আদেশ হয়েছে, সেগুলো সই হওয়ার পর সেকশনের একজন অফিসার দিয়ে ডেসপাস করতে পারে। এতে জামিনপ্রাপ্তদের ভোগান্তি কমবে।
আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, জরুরি বিষয়ে শুনানির জন্য সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের কার্যক্রম স্বল্প পরিসরে হলেও চালু হওয়া দরকার। কারণ কারও বিরুদ্ধে মামলা হলে কী করবে সে। তাকে তো আদালতের দ্বারস্থ হতে হবে। এটা তার অধিকার। কিংবা কারও মৌলিক অধিকার খর্ব হলে সে আদালতের দ্বারস্থ হবে। কিন্তু আদালত বন্ধ থাকায় সেটা সে পারছে না। এ কারণে স্বল্প পরিসরে কোর্ট চালু হওয়া দরকার।
ব্যারিস্টার আব্দুল কাইয়ুম লিটন বলেন, যেহেতু প্রজাতন্ত্রের দায়িত্ব পালনরত কোনো ব্যক্তি বা অন্য কারো দ্বারা দেশের কোনো নাগরিকের মৌলিক অধিকার বিপন্ন হলে তার প্রতিকার চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের শরণাপন্ন হওয়া সংবিধানের ৪৪ এবং ১০২ অনুচ্ছেদে বিবৃত নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। যেহেতু হাইকোর্ট বিভাগ নাগরিকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষায় যথাযথ আদেশ দিতে সংবিধান কর্তৃক দায়িত্ব প্রাপ্ত। সেহেতু, নাগরিকদের জন্য সাংবিধানিক গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠানটিকে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রাখা কোনোভাবেই সমীচীন নয়।
তবে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, এটা একটা বৈশ্বিক সমস্যা। এখানে কিছু ভোগান্তি হবে। যেটা সবাইকে পোহাতে হচ্ছে।