করোনাভাইরাস বিশ্বে শুধু এক মহামারি হিসেবেই দেখা দেয়নি, বিশ্ব অর্থনীতির জন্যও তা এক অশনিসংকেত হয়ে দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার লক্ষণগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ক্ষতি কয়েক ট্রিলিয়ন ডলারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ দিন দিনই বাড়ছে। এই অবস্থায় অর্থনীতির বড় ধরনের বিপর্যয় রোধে প্রায় প্রতিটি দেশ নিজের মতো করে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। বৃহৎ অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রে এই প্যাকেজের পরিমাণ ঘোষণা করা হয়েছে দুই লাখ কোটি ডলার। সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবেলায় বাংলাদেশেও ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষিত হয়েছে। গত রবিবার গণভবন থেকে এই প্যাকেজ ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এর সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের দুর্নীতি বা অপব্যবহার সহ্য করা হবে না। এর আগে গত ২৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণে রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন।
এরই মধ্যে বাংলাদেশেও বিশ্ব অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। আমাদের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পে এরই মধ্যে কয়েক শ কোটি ডলারের বিদেশি অর্ডার বাতিল হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে একইভাবে অর্ডার বাতিল বা স্থগিতের আরো অনেক ঘটনা ঘটতে পারে। ফলে অনেক কারখানাই বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং এ খাতের লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়তে পারে। বাংলাদেশের চামড়া খাত অনেকটাই নির্ভরশীল চীন ও ইতালির ওপর। করোনার কারণে দেশ দুটির অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার বড় প্রভাব পড়েছে আমাদের চামড়াশিল্পেও। হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতেও বড় ধরনের ধস নেমেছে। এরই মধ্যে এসব খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েক লাখ লোক বেকার হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ছোট-বড় অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠানেরই উৎপাদন কমে এসেছে। নির্মাণকাজে এক ধরনের স্থবিরতা নেমে এসেছে। তার প্রভাব পড়ছে সংশ্লিষ্ট শিল্পগুলোতে। এমন প্রেক্ষাপটে এই প্রণোদনা প্যাকেজের ঘোষণা অত্যন্ত সময়োপযোগী।
আমাদের বিশ্বাস, ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প-কারখানাগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের সুফল ভোগ করবে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী প্যাকেজের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা আশা করি, করোনাভাইরাসের কারণে শিল্প-কারখানাগুলো যে বিপর্যয়কর অবস্থার মুখোমুখি হয়েছে, তা তারা এই প্যাকেজের মাধ্যমে অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে পারবে। দেশের অর্থনীতিতে কিছুটা হলেও স্বস্তির সুবাতাস বইবে।