করোনা রোধে সার্বিক প্রস্তুতি নিন

16

টানা দ্বিতীয় দিনের মতো বাংলাদেশে নতুন কারো মধ্যে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েনি বলে জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের জন্য এটি সুখবর হলেও বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চল থেকে যে খবর পাওয়া যাচ্ছে, তা মোটেও সুখকর নয়। এরই মধ্যে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসে বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে। বিশ্বের ২০৩টি দেশ ও অঞ্চলের ছয় লাখ ৬২ হাজার ৭৫১ জনকে আক্রান্ত বলে জানাচ্ছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। অন্যদিকে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী, নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিশ্বের ১৭৭ দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে ছয় লাখ ৬৩ হাজার ৮২৮ জন।
কভিড-১৯ নামের নতুন এই ভাইরাস সারা বিশ্বকে ভীতসন্ত্রস্ত করে রেখেছে প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে। এ থেকে সুরক্ষা পেতে প্রাণান্ত চেষ্টা করছে সব দেশ। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। ঘরবন্দি পুরো দেশের মানুষের মনে কাজ করছে অজানা ভীতি। এই পরিস্থিতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দিকনির্দেশনায় চলছে দেশগুলো। ডাব্লিউএইচওর এক পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে ধারাবাহিকভাবে একদিকে আফ্রিকা অঞ্চল এবং অন্যদিকে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা তুলনামূলক কমই থাকছে। দৈনিক আক্রান্ত ও মৃত্যুর হারও ইউরোপ ও আমেরিকা অঞ্চলের দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম, যা এ অঞ্চলের মানুষের জন্য অনেকটাই স্বস্তিদায়ক বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য তা কতটা স্বস্তিদায়ক? জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর নাগরিক সমাজের বেশ কিছু অংশীদার ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় তৈরি পরিকল্পনা নথি তো নতুন শঙ্কার জন্ম দিচ্ছে। ওই নথি বলছে, অতি দ্রুত কোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া না হলে বাংলাদেশে নভেল করোনাভাইরাস অত্যন্ত দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী পরিকল্পনা নথির শুরুতেই বলা হয়েছে, এটি এমন একটি প্রাণঘাতী রোগ, যা আমাদের সাড়া দেওয়ার গতির চেয়ে বেশি গতিতে সংক্রমিত হয়। ৭৭০ কোটি জনগোষ্ঠীর এই বিশ্বে করোনাভাইরাস মহামারি সংক্রমণের হার উচ্চ ও আন্তর্জাতিকভাবে ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে। বাংলাদেশে ব্যাপক মাত্রায় জনঘনত্ব বিবেচনা করে বৈশ্বিকভাবে স্বীকৃত পন্থা অবলম্বন করে ধারণা করা যায়, প্রতিরোধমূলক উদ্যোগ নেওয়া না হলে মহামারির প্রভাবে ব্যাপকসংখ্যক মানুষের মৃত্যু ঘটতে পারে। অবশ্য বাংলাদেশ এরই মধ্যে বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বাধ্যতামূলক ‘কোয়ারেন্টিন’ ও ‘আইসোলেশন’, এই ভাইরাসের ঝুঁকির ব্যাপারে ব্যাপকভাবে অবহিত করা, সামাজিক দূরত্ব, সামাজিক সুরক্ষা এবং বিদ্যালয় ও জনসমাগম হয় এমন স্থানগুলো বন্ধ করে দেওয়া।
সার্বিক প্রস্তুতিই করোনা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।