স্টাফ রিপোর্টার :
ফোনে কথা বলার সুযোগ পেতে যাচ্ছে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের বন্দিরা। ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে এ সুযোগ চালু করা হবে। একজন বন্দি সপ্তাহে একবার কথা বলার সুযোগ পাবে। কথা বলার জন্য বন্দিরা প্রতি মিনিটে ৫ টাকা করে দিতে হবে কারা কর্তৃপক্ষকে। তবে ফোনে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন না কারাবন্দি জঙ্গি ও শীর্ষ সন্ত্রাসীরা। গত মঙ্গলবার বিভাগীয় কমিশনার মো. মশিউর রহমান এনডিসি ও জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এ মোবাইল ফোন বুথ উদ্বোধন করেন।
কারা সূত্র জানায়, আনুষ্ঠানিকভাবে মোবাইল ফোন বুথ চালু করা হয়েছে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এ। আর ২/৩ দিনের মধ্যে প্রধান সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের বন্দিরাও ফোনে কথা বলার সুযোগ পাবে। এজন্য ফোনসেট ও মোবাইল সিম সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে নিয়ে আসা হবে। আর ফোনের বুথগুলোতে থাকবে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। যাতে করে কোনও বন্দি ফোনে কথা বলার সময় অপরাধ কর্মকাণ্ড না ঘটাতে পারে বা অপরাধ সংশ্লিষ্ট কোনও তথ্য আদান প্রদান করতে না পারে। কথা বলার জন্য বন্দিদের প্রতি মিনিটে ৫ টাকা করে দিতে হবে। কারা কর্তৃপক্ষের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে উপস্থিত হতে হবে। একেকজন বন্দি সর্বোচ্চ ৫ মিনিট করে কথা বলার সুযোগ পাবেন।
বুথ থেকে শুধু কথার বলার সুযোগ থাকবে। বাইরে থেকে কোনও ফোন কারা নম্বরে গেলেও বন্দিদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাবে না। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টায় প্রথম ধাপ এবং ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দ্বিতীয় ধাপ চালু করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে কথা বলতে পারবে কারাবন্দিরা। নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেলে কেউ আর কোনও সুযোগ পাবে না। ফোনে কথা বলার টাকা সরাসরি গ্রহণ না করে যেসব বন্দির টাকা পিসিতে (প্রিজন সেল) থাকবে, তাদের টাকা পিসি থেকে কেটে নেওয়া হবে। একজন বন্দি সপ্তাহে একবার কথা বলার সুযোগ পাবে। আপাতত ২৫০ জন বন্দির জন্য থাকবে একটি বুথ। এক্ষেত্রে কারাগারে আড়াই হাজার বন্দির জন্য থাকছে অন্তত ১০টি ফোন বুথ। নারী বন্দিদের জন্য থাকবে আলাদা ফোন বুথ। কারা অভ্যন্তরে স্থাপন করা ফোন বুথের নিরাপত্তা দায়িত্বে থাকবেন কারারক্ষীরা। তাদের ফোন নম্বর দেওয়ার পর তারা সেই নম্বরে সংযোগ করে বন্দিদের কথা বলার সুযোগ দেবেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বন্দিরা উপস্থিত থেকে সিরিয়াল অনুযায়ী কথা বলার সুযোগ পাবে।
এ বিষয়ে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার মো. মশিউর রহমান জানান, বর্তমান সময়ে বন্দিরা ফোনে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে। বলা যায় এটা একটি যুগোপযোগী ও ভালো সিদ্ধান্ত। কারাবন্দিরা তাদের পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ফোনে কথা বলে উৎফুল্ল থাকবে এবং তাদের পরিবারও দুশ্চিন্তামুক্ত থাকবে। সেই সঙ্গে কারা অভ্যন্তরে বন্দিদের পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের উপস্থিতি অনেকটা কমে যাবে। যার ফলে বন্দিদের জীবনমান ও মানসিকতার উন্নতি হবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল জলিল বলেন, এটি সরকারের একটি মাইফলক সিদ্ধান্ত। এতে উপকৃত হবে কারাবন্দিরা। তারা কথা বলার সুযোগ পাবে পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে। বন্দিরা যখন কথা বলবে তখন আমাদের নজরদারিও থাকবে। আর কারাবন্দিদের আত্মীয়স্বজন দূরে থাকলেও তারা কারাগারে না আসলেও ফোনের মাধ্যমে বন্দির কাছ থেকে খবরাখবর পাবেন। এক্ষেত্রে কারাগারে বন্দিদের আত্মীয়-পরিজনের উপস্থিতি যেমন কমবে, তেমনি কারাবন্দিদের মন মানসিকতাও আরও উন্নত হবে। ফোনের মাধ্যমে তারা কোনও অপরাধ সংক্রান্ত তথ্য আদান-প্রদান করার চেষ্টা করলে ফোনে কথা বলার সুযোগ আর পাবে না এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও জানান, নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন কারণে ফোন বুথ থেকে কথার বলার সুযোগ পাবে না কারাবন্দি শীর্ষ সন্ত্রাসী ও জঙ্গিরা। যদি বন্দিরা এই সেবা পেয়ে উপকৃত হয়, তাহলে তাদের সুবিধার জন্য সিলেট প্রধান কারাগার ও কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এ সুবিধা আরও বাড়ানো হবে।