লাউয়াছড়া উদ্যান ঘেঁষা বনের টিলায় পরিকল্পিতভাবে লাগানো আগুনে পুড়ে ছারখার, তদন্তের নির্দেশ মন্ত্রীর

10

পিন্টু দেবনাথ কমলগঞ্জ থেকে :
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মালিকানাধীন বনের টিলাভূমির প্রায় তিন একর পরিমাণ লতাগুল্ম পুড়িয়ে দিয়েছে একটি চক্র। বনের ওই টিলাভূমি দখলে নিতে গত মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) দুপুর সাড়ে ১২টায় আগুন দেয়া হলে সন্ধ্যা পর্যন্ত আগুন জ্বলতে থাকে। ফায়ার সাভিস ও সিভিল ডিফেন্স, হীড বাংলাদেশ এর স্টাফ, পুলিশ ও স্থানীয়দের চেষ্টায় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আগুন নেভানো হয়। তবে বুধবার দুপুর পর্যন্ত পুড়ে যাওয়া এলাকায় আগুনের ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। বন, পরিবেশ ও জলাবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রীর নির্দেশনায় সরেজমিন তদন্ত শুরু করেছে বনবিভাগ। ফলে লতা-গুল্মজাতীয় গাছ গাছালিসহ জীব বৈচিত্রের ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানায় বন বিভাগ।
সরেজমিন ঘটনাস্থল বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা হীড বাংলাদেশের পিছনের বনে গিয়ে দেখা যায়, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের লাউয়াছড়া বন রেঞ্জ কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন, লাউয়াছড়া বনবিট কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে একটি দল তদন্ত করছেন। এসময় ঘটনাস্থল ৩ একর এলাকা জুড়ে ধোঁয়া উড়ছিল। লাউয়াছড়া বনরেঞ্জ কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে না আনলে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ছড়িয়ে পড়ত। পুরো এলাকায় ব্যাপকভাবে বাঁশ, লতা ও গুল্ম জাতীয় ছোট আকারের গাছ গাছালি পুড়ে গেছে। অনেক জীব বৈচিত্র্য বিনষ্ট হয়েছে।
ভূমির মালিকানা সম্পর্কে বনরেঞ্জ কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ১৯৭৫ সাল থেকে এখানে হীড বাংলাদেশ নামক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অবস্থান করছে। এখানে ১৮৯ একর জমির পরিমাপ নিয়ে জটিলতা রয়েছে। এ সুযোগে স্থানীয় একটি মহল বেশ কিছু জমি দখল নিয়ে লেবু বাগান ও মৎস্য খামার গড়ে তুলেছে। একইভাবে একটি মহল মঙ্গলবার পরিকল্পিতভাবে এখানে আগুন লাগিয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
হীড বাংলাদেশ, কমলগঞ্জ এর লিয়াজোঁ অফিসার নুরে আলম সিদ্দিক বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তারা এ জমির বন্দোবস্ত নিয়ে তাদের কর্মকান্ড পরিচালনা করছেন। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র এ সংস্থার ভূমি দখলের পায়তারা করছে। কিছু ভূমিতে বসতঘরও নির্মাণ শুরু করেছে। বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ উপজেলা প্রশাসনে অবহিত করা হয়েছে। তিনিও মনে করেন এই চক্রটি আগুন লাগিয়েছে। তবে পুড়ে যাওয়া অংশটি বনবিভাগের বলে তিনি জানান। এসব ভূমি যৌথভাবে জরিপ করে দেখার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, এখানকার ১৮৯ একর ভূমির মাঝে মাত্র ৭৫ একর ভূমির সঠিক কাগজপত্র আছে। বাকী ভূমির কাগজপত্র পাওয়া যাচ্ছে না। এ সুযোগেই ভূমি দখলে ভূমিদস্যূরা মঙ্গলবার পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগাতে পারে বলে তিনি মনে করেন। তবে শিগগিরই কমলগঞ্জ উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) কে প্রধান করে উপজেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, বন বিভাগ ও হীড বাংলাদেশ মিলে যৌথভাবে জরিপ করে দখলকৃত জমি উদ্ধার করবে। তাছাড়া তদন্তকালে আগুন লাগানোর সঠিক প্রমাণ পাওয়া গেলে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও নির্বাহী কর্মকর্তা জানান।