করোনা মোকাবেলায় গণবিজ্ঞপ্তি জারি

7

কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) মোকাবেলায় জনস্বার্থে আইনের প্রয়োগ বিষয়ে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পাঠানো প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯)-এর সংক্রমণকে একটি বৈশ্বিক প্রাদুর্ভাব হিসেবে ঘোষণা করেছে। এর সঙ্গে বাংলাদেশের চলমান প্রস্তুতি সঙ্গতিপূর্ণ। জনসাধারণের আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। তবু পরিবর্তনশীল বিশ্ব ও জাতীয় পরিস্থিতির আলোকে সর্বোচ্চ সতর্কতার অংশ হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদফতর কর্তৃক ‘সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮’-এর কতিপয় ধারা প্রয়োগ করার প্রয়োজন হতে পারে। গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই আইন অনুযায়ী স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধিকারের মধ্যে রয়েছে- ধারা-১(চ) অনুযায়ী বাসগৃহ, অন্যান্য গৃহ, ক্লিনিক, হাসপাতাল এবং রোগ নির্ণয় কেন্দ্র বা কোন স্থাপনায় সংক্রামক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সেবা প্রদান করলে বা অনুরূপ রোগে সংক্রমণের আধার হিসেবে বিবেচিত হলে উক্ত স্থান বা স্থাপনা পরিদর্শন ও তদানুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। ধারা-১(জ) অনুযায়ী সংক্রামক রোগের তথ্য রয়েছে এমন কোন ব্যক্তিকে উক্ত রোগের বিষয়ে অধিদফতরের নিকট তথ্য প্রদানের নির্দেশনার কথা বলা হয়েছে। ধারা-১ (ট) অনুযায়ী সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়েছেন এমন কোন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট হাসপাতাল, অস্থায়ী হাসপাতাল, স্থাপনা বা গৃহে অন্তরীণ (কোয়ারেন্টাইন) রাখা বা পৃথককরণ (আইসোলেশন) রাখা যাবে। ধারা-১(ত) অনুযায়ী সংক্রামক রোগের বিস্তার রোধে উড়োজাহাজ, জাহাজ, জলযান, বাস, ট্রেন ও অন্য যানবাহন দেশে আগমন, নির্গমন বা দেশের অভ্যন্তরে এক স্থান হতে অন্য স্থানে চলাচল নিষিদ্ধকরণ।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ধারা-১০ অনুযায়ী সংক্রামক রোগের তথ্য প্রদান যদি কোন চিকিৎসক সংক্রামক রোগে আক্রান্ত কোন ব্যক্তির চিকিৎসার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন এবং উক্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তি, কোন বাসগৃহ, প্রাঙ্গণ বা এলাকায় সংক্রামক রোগে অস্তিত্ব সম্পর্কে অবহিত হন, তাহলে তিনি বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সিভিল সার্জনকে অবহিত করবেন। আর যদি কোন বোর্ডিং, আবাসিক হোটেল বা অস্থায়ী বাসস্থানের মালিক বা দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির যুক্তিসঙ্গত কারণে ধারণা হয় যে, উক্ত স্থানে বসবাসকারী কোন ব্যক্তি সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, তাহলে তিনি অবিলম্বে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সিভিল সার্জন এবং জেলা প্রশাসককে অবহিত করবেন।
ধারা-১১ অনুযায়ী সংক্রমিত এলাকা ঘোষণা, প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি মহাপরিচালক বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মচারীর নিকট যদি প্রতীয়মান হয় যে, যথাযথভাবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাৎক্ষণিকভাবে কোন সংক্রামক রোগ সীমিত বা নির্মূল করা সম্ভব নয়, তাহলে তিনি সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে বা সংক্রমিত স্থানে অন্য কোন ব্যক্তির প্রবেশ নিষিদ্ধ, সীমিত বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ধারা-১৪ অনুযায়ী রোগাক্রান্ত ব্যক্তিকে সাময়িক বিছিন্নকরণ- যদি ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মচারীর এমন বিশ্বাস করার কারণ থাকে যে, কোন সংক্রমিত ব্যক্তিকে বিচ্ছিন্ন করা না হলে তার মাধ্যমে অন্য কোন ব্যক্তি সংক্রমিত হতে পারেন, তাহলে উক্ত ব্যক্তিকে সাময়িকভাবে অন্য কোন স্থানে স্থানান্তর বা জনবিচ্ছিন্ন করা যাবে।
ধারা-১৮ অনুযায়ী যানবাহন জীবাণু মুক্তকরণের আদেশ প্রদানের ক্ষমতা- ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মচারীর নিকট যদি এমন বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকে যে, কোন যানবাহন সংক্রামক জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে বা তাতে সংক্রামক জীবাণুর উপস্থিতি রয়েছে, তাহলে তিনি উক্ত যানবাহন জীবাণু মুক্তকরণের জন্য উক্ত গাড়ির মালিক বা স্বত্বাধিকারী বা তত্ত্বাবধায়ককে নির্দেশ প্রদান করতে পারবেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ধারা-২০ অনুযায়ী মৃত দেহের সৎকার বিশেষ করে যদি কোন ব্যক্তি সংক্রামক রোগে মৃত্যুবরণ করেন বা করেছেন বলে সন্দেহ হয় তাহলে উক্ত ব্যক্তির মৃতদেহ ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মচারীর নির্দেশনা মোতাবেক দাফন বা সৎকার করতে হবে।
ধারা-২৫ অনুযায়ী দায়িত্ব পালনে বাধা প্রদান ও নির্দেশ পালনে অসম্মতি জ্ঞাপনের অপরাধ ও দ-নীয় অপরাধ। যদি কোন ব্যক্তি -(ক) মহাপরিচালক, সিভিল সার্জন বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তার ওপর অর্পিত কোন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বাধা প্রদান বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন, এবং (খ) সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলের উদ্দেশে মহাপরিচালক, সিভিল সার্জন বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কোন নির্দেশ পালনে অসম্মতি জ্ঞাপন করেন, তাহলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হবে একটি দ-নীয় অপরাধ।(২) যদি কোন ব্যক্তি (এই ধারার) উপধারা (১)-এর অধীন কোন অপরাধ সংঘটন করেন, তাহলে তিনি অনুর্ধ ৩ (তিন) মাস কারাদ-ে, বা অনুর্ধ ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদ-ে, বা উভয় দ-ে দ-িত হবেন।
ধারা-২৬ অনুযায়ী মিথ্যা বা ভুল তথ্য প্রদানের অপরাধ ও দ-নীয় অপরাধ। যদি কোন ব্যক্তি সংক্রামক রোগ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা বা ভুল তথ্য প্রদান করেন তাহলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হবে একটি অপরাধ। যদি কোন ব্যক্তি (এই ধারার) উপধারা (১)-এর অধীন কোন অপরাধ সংঘটন করেন, তাহলে তিনি অনুর্ধ ২ (দুই) মাস কারাদ-ে, বা অনুর্ধ ২৫ (পঁচিশ) হাজার টাকা অর্থদ-ে, বা উভয় দ-ে দ-িত হবেন। ধারা-২৭ অনুযায়ী ফৌজদারি কার্যবিধির অধীন সংঘটিত কোন অপরাধের অভিযোগ দায়ের, তদন্ত, বিচার ও আপীল নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির বিধানাবলী প্রযোজ্য হবে।
বিদেশ থেকে প্রত্যাগত কিছু প্রবাসী বা তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিবর্গ স্বাস্থ্য অধিদফতর কর্তৃক আরোপিত কোয়ারেন্টাইনের শর্ত সঠিকভাবে প্রতিপালন করছেন না। অনেকেই মিথ্যা তথ্য ও গুজব রটিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতর সংশ্লিষ্ট সকলকে বর্ণিত আইন অনুযায়ী এবং নির্দেশিত পন্থায় যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের অনুরোধ জানাচ্ছে। ব্যত্যয়ের ক্ষেত্রে আইনের সংশ্লিষ্ট শাস্তিমূলক ধারা প্রয়োগ করা হবে জানিয়েছেন মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ।