কাজিরবাজার ডেস্ক :
মুজিববর্ষে বড় বাজেটের কোন কর্মসূচী না নেয়ার জন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে মুজিববর্ষের কর্মসূচী নির্ধারণ করারও নির্দেশ দেন তিনি। পাশাপাশি মন্ত্রী সভা সমবায়ভিত্তিতে জমি চাষাবাদ ও ফসল বাজারজাতকরণের নিয়ম রেখে ‘জাতীয় কৃষি সম্প্রসারণনীতি-২০২০’ অনুমোদন দিয়েছে। এছাড়া সুনামগঞ্জের দুর্গম হাওরাঞ্চলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় করতে যাচ্ছে সরকার। এজন্য ‘সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০২০’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার মন্ত্রী সভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন বলে জানান মন্ত্রী পরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন শেখ হাসিনা।
আগামী ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। এ উপলক্ষে আগামী এক বছরকে মুজিববর্ষ হিসেবে পালন করবে সরকার।
মুজিববর্ষের কর্মসূচী নিয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে কোন আলোচনা হয়েছে কি না? জবাবে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে মন্ত্রী পরিষদ সচিব বলেন, উনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, আমরা প্রিসাইসলি (ব্যাখ্যা) বলে দিয়েছি, মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রত্যেকটা মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তার একটা নোটেবল প্রোগ্রামকে মুজিববর্ষের প্রোগ্রাম হিসেবে ঘোষণা করবে। তার নরমাল বাজেট থেকে। যদি ভিন্ন কোন কাজ থাকে তার জন্য অতিরিক্ত টাকা চিন্তা করা যেতে পারে। কিন্তু বড় বড় বাজেট দিয়ে নতুন কাজ করার দরকার নেই।
তিনি বলেন, উদাহরণ হিসেবে এসেছে, অর্থ বিভাগ মুজিববর্ষ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে প্রোগ্রাম নিল- ডিসেম্বরের মধ্যে ছয় লাখ পেনশনারের বাড়িতে বসে পেনশন দেবে। এ প্রোগ্রামটা তারা মুজিববর্ষের প্রোগ্রাম হিসেবে ঘোষণা করেছে। এরকম ভাল কোন প্রোগ্রামকে মুজিববর্ষের প্রোগ্রাম হিসেবে ঘোষণা করা যাবে।
আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, কোন কোন প্রোগ্রাম করতে গিয়ে যদি ফান্ড লাগে, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিল্পী আনবেন, এটার জন্য পেমেন্ট করতে হবে। স্টেজ হবে, এজন্য আলাদা টাকা দেয়া হবে না। পিডব্লিউডি তার মেইনটেইনেন্স বাজেট থেকে করে দেবে। পেমেন্টের দরকার হলে এএফডি (সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ) তার বাজেট থেকে করে দেবে, এ জন্য আলাদা কোন টাকা দেয়া হবে না।
সচিব বলেন, সবাইকে কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে প্রোগ্রাম নিতে বলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, খালি বাজেট নয়, সবার নতুন নতুন কিছু করার দরকার নেই। আমার যে প্রোগ্রাম আছে মানুষের কল্যাণে বা দেশের উন্নয়নে কনট্রিবিউট করতে পারি ওটা মুবিজববর্ষের সঙ্গে মোর সিনোনিমাস। ওইজাতীয় প্রোগ্রাম, নরমাল যে প্রোগ্রামটা আছে সেটাকে আরও ইফেকটিভ করেন। অনেকে বুঝতে পারেন না, মনে করেছেন নতুন প্রোগ্রাম নিতে হবে।
এক মন্ত্রীর কর্মকান্ডে প্রধানমন্ত্রীর অসন্তোষ : এদিকে এক মন্ত্রীর কর্মকান্ডে প্রধানমন্ত্রী অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি বগুড়ার পুলিশ লাইনস স্কুল এ্যান্ড কলেজের নবনির্মিত বঙ্গবন্ধু একাডেমিক ভবন উদ্বোধন করতে গেলে সেখানে উপস্থিত ছাত্রীরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুখোশ পরে তাকে স্বাগত জানান। এ নিয়ে দেশব্যাপী সমালোচনার সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রী সভার বৈঠকে এ নিয়ে শেখ হাসিনা অসন্তোষ প্রকাশ করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বৈঠকে উপস্থিত কয়েকজন মন্ত্রী পরিষদ সদস্য।
আসছে সমবায়ভিত্তিক চাষাবাদ-ফসল বাজারজাতকরণ : সমবায়ভিত্তিতে জমি চাষাবাদ ও ফসল বাজারজাতকরণের নিয়ম রেখে ‘জাতীয় কৃষি সম্প্রসারণ নীতি-২০২০’ অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রী সভা।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রী পরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, এ নীতির মূল লক্ষ্য হচ্ছে সব শ্রেণির কৃষক ও উদ্যোক্তাদের চাহিদাভিত্তিক প্রযুক্তি ও তথ্যসেবা প্রদানের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঘাত সহনশীল, পরিবেশবান্ধব, নিরাপদ, টেকসই ও পুষ্টিসমৃদ্ধ লাভজনক ফসল উৎপাদন নিশ্চিত করা।
নীতিতে মোট ৬টি অধ্যায় রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, অধ্যায়গুলোর মধ্যে রয়েছে- পটভূমি, ফসল খাতের মূল প্রতিবন্ধকতা, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, কৃষি সম্প্রসারণের ধারণা ও বৈশিষ্ট্য, কৌশলগত সম্প্রসারণ পরিকল্পনা এবং উপসংহার।
কৃষি সম্প্রসারণ সেবার বর্তমান অবস্থা, ভবিষ্যৎ লক্ষ্য এবং পরিকল্পনাগুলো নীতিমালায় বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার মধ্যে কার্যকর সমন্বয় ও সহযোগিতার মাধ্যমে এ নীতিটি বাস্তবায়ন করা গেলে কৃষকের চাহিদা অনুযায়ী সম্প্রসারণ সেবা প্রদানের মাধ্যমে কৃষি উন্নয়ন ও উপাদনকে আরও ত্বরান্বিত করা সম্ভব হবে বলে আমরা মনে করি।
সুনামগঞ্জে হচ্ছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় : সুনামগঞ্জের দুর্গম হাওরাঞ্চলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় করতে যাচ্ছে সরকার। এজন্য ‘সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০২০’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রী সভা। এ বিষয়ে বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রী পরিষদ সচিব বলেন, এটা প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ। কনসেপ্টটা ওনার কাছ থেকে এসেছে যে, এটা খুব রিমোট এরিয়া। রিমোট এরিয়াতেও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থাকা দরকার। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় (মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ) সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইনটি নিয়ে এসেছে। এর আগে গত ৩ ডিসেম্বর মন্ত্রী সভা বৈঠকে খসড়া আইনটি নীতিগতভাবে অনুমোদন দেয়া হয়।
খসড়া আইনে ৫৫টি ধারা রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী পরিষদ সচিব বলেন, সংক্ষিপ্ত শিরোনাম, প্রবর্তন ও সংজ্ঞা ছাড়াও উল্লেখযোগ্য ধারাগুলোর মধ্যে ৯ ধারায় চ্যান্সেলর, ১০ থেকে ১১ ধারায় ভাইস চ্যান্সেলর, ১২ ধারায় প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর, ১৩ ধারায় কোষাধ্যক্ষ, ১৮ থেকে ২০ ধারায় সিন্ডিকেট, ২১ থেকে ২২ ধারায় একাডেমিক কাউন্সিল, ২৯ থেকে ৩০ ধারায় অর্থ কমিটি সম্পর্কিত বিষয় রয়েছে।
এই আইনের আলোকে ২১টি অনুচ্ছেদ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সংবিধির খসড়া আইনের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে। বর্তমানে ৪২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী পরিষদ সচিব বলেন, এর মধ্যে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় ১৭টি, ৬টি কৃষি ও ভেটেরিনারি, ১৯টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যালয়। এছাড়া আরও চারটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। বর্তমানে দেশের ৩২টি জেলায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নেই। দেশে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০৫টি।