3

কাজিরবাজার ডেস্ক :
‘মুক্তির মন্দির সোপানতলে কত প্রাণ হলো বলিদান, লেখা আছে অশ্রুজলে…।’ রক্তক্ষরা-অগ্নিঝরা মার্চের প্রথম দিন আজ। উনিশ শ’ একাত্তর সালের এই মাসে তীব্র আন্দোলনের পরিণতিতে শুরু হয় মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বিশ্ব মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটেছিল বাংলাদেশ নামক স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা হলেও চূড়ান্ত আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল একাত্তরের ১ মার্চ থেকেই।
তবে এবার একাত্তরের মতো নব উদ্দীপনায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি পুরো মাসব্যাপী মার্চের বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করবে। কেননা এ মাসেরই ১৭ তারিখ থেকে শুরু হচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বছরব্যাপী মুজিববর্ষের নানা কর্মসূচী। মুজিববর্ষ শুরু হতে আর বাকি ১৫ দিন। এরপরই শুরু হবে বছরব্যাপী মুজিববর্ষ উদ্যাপনের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান। আগামী ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন। এই দিন থেকেই শুরু হবে বছরব্যাপী মুজিববর্ষের অনুষ্ঠান। উৎসব চলবে পরের বছরের ১৭ মার্চ পর্যন্ত। যখন দেশব্যাপী পালন হবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীও।
লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে আগামী ১৭ মার্চ রাজধানীর জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে মঞ্চ, প্যান্ডেল ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণের মহাযজ্ঞে তুমুল ব্যস্ত সময় পার করছেন আয়োজকরা। শুধু রাজধানী নয়, দেশের প্রতিটি জেলা-মহানগর, শহর-বন্দর, গ্রামগঞ্জ-পাড়া-মহল্লায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষ মুজিববর্ষ উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানাবেন বাংলাদেশ নামক জাতিরাষ্ট্রের স্রষ্টা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। দেশের নতুন প্রজন্ম জানতে পারবে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ এই সন্তানের দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের মহান কীর্তির কথা।
উনিশ শ’ একাত্তরের মার্চ, স্বাধীনতার জন্য গোটা দেশই তখন অগ্নিগর্ভ। পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এদিন বেতার ভাষণে ৩ মার্চের গণপরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। এ সময় ঢাকা স্টেডিয়ামে (বর্তমান বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম) পাকিস্তান বনাম বিশ্ব একাদশের ক্রিকেট খেলা চলছিল। ইয়াহিয়া খানের ওই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে দর্শক খেলা ছেড়ে বেরিয়ে আসে। ততক্ষণে হাজারো মানুষ পল্টন-গুলিস্তানে বিক্ষোভ শুরু করে দিয়েছে। সেই আন্দোলন শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ নেয়।
সেদিন মতিঝিল-দিলকুশা এলাকার পূর্বাণী হোটেলে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। ক্ষুব্ধ ছাত্ররা সেখানে গিয়ে প্রথমবারের মতো শ্লোগান দেয়, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর’। ছাত্ররা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে কর্মসূচী ঘোষণার দাবি জানায়। বিক্ষোভ-শ্লোগানে উত্তাল ঢাকাসহ সারাদেশ। আর কোন আলোচনা নয়, এবার পাক হানাদারদের সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তোলার দাবি ক্রমশঃ বেগবান হতে থাকে।
উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বাইরে চলছে বিক্ষুব্ধ বাঙালির কঠোর কর্মসূচী দাবিতে মুহুর্মুহু শ্লোগান। বৈঠক শেষে বঙ্গবন্ধু ২ ও ৩ মার্চ তৎকালীন পাকিস্তানে সর্বাত্মক হরতালের ডাক এবং ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসভার ঘোষণা দেন।
সেই শুরু। এরপর ১ মার্চ পেরিয়ে ২ মার্চ। একে একে পার হয় ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ ২৫টি দিন। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আক্রমণ চালায়, শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। এই পথ ধরে বাঙালী দামাল ছেলেরা এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনেন একটি স্বাধীন দেশ- গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ।
বছর ঘুরে এক অন্যরকম পরিবেশে বাঙালির জীবনে এসেছে অগ্নিঝরা মার্চ। একাত্তরের পরাজিত শত্রু ও তাদের দোসররা এখন অনেকটাই গর্তে ঢুকে পড়েছে। দেশের বিভিন্নস্থানে চোরাগোপ্তা হত্যাকান্ড চালিয়ে তাদের অস্তিত্বের জানান দিলেও দেশের কোথাও প্রকাশ্য মাথা তুলে দাঁড়ানোর মতো শক্তি নেই তাদের। তবে পরাজিত শত্রুদেশ পাকিস্তানের ষড়যন্ত্র এখনও শেষ হয়নি।
আওয়ামী যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সংগঠন মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন এবং আলোর মিছিল করে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিভিন্ন সংগঠন অগ্নিঝরা মার্চ স্মরণে মাসব্যাপী কর্মসূচী হাতে নিয়েছে।