নেতাকর্মীরা নিষ্ক্রিয়, ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে বিএনপি

10

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে বিএনপি। না পারছে দল গুছিয়ে এগিয়ে যেতে, না পারছে আন্দোলন করে রাজনৈতিকভাবে দলের অবস্থান মজবুত করতে। সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ এ দলটির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে এখন বিরাজ করছে চরম হতাশা। এ পরিস্থিতিতে নেতাকর্মীদের মধ্যে কেউ কেউ দলে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছে, আবার কেউ দল থেকে দূরে থেকে সরকারী দলের নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করে ব্যক্তিগত ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হেরে যাওয়ার এক বছর পর ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চেয়েছিল বিএনপি। কিন্তু এ নির্বাচনেও পরাজিত হওয়ায় এবং নির্বাচনের পর রাজপথে আন্দোলন শুরু করতে না পারায় রাজনৈতিকভাবে চরম বেকায়দায় পড়ে বিএনপি। আশা করেছিল খালেদা জিয়ার জামিন হলে নতুন করে আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে। কিন্তু সে চেষ্টায়ও গুড়েবালি। এখন চারদিকে শুধু হতাশা আর হতাশা।
এদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কারাবন্দী হওয়ার আগে দল গুছিয়ে এগিয়ে যাওয়ার যে নির্দেশ দিয়েছিলেন সে নির্দেশও বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে দলটির বর্তমান নেতৃত্ব। দলের সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলের ৪ বছর পরও নতুন কাউন্সিলের প্রস্তুতি নিতে পারছে না তারা। এ কারণে যারা নতুন করে দলের নেতৃত্বে আসতে চায় তাদের মধ্যেও হতাশা বিরাজ করছে।
আগের জাতীয় কাউন্সিলের পর বিএনপি ৫৯২ সদস্যের যে ঢাউস কমিটি করেছিল তাদের মধ্যে অধিকাংশ নেতাই এখন দলে নিষ্ক্রিয়। দলীয় কোন কর্মসূচীতেই দেখা যায় না তাদের। আবার পদও ছাড়ছে না। এরকম পরিস্থিতিতে আদালতে খালেদা জিয়ার জামিন খারিজ হওয়ার পর সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ পালনের ঘোষণা দেয়। যদিও বিএনপির সিনিয়র নেতারা আগে হাঁকডাক দিয়েছিল খালেদা জিয়ার জামিন না হলে রাজপথে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচী পালন করবে। কঠোর কর্মসূচীর ডাক দিলে রাস্তায় নেতাকর্মীরা নামবে না মনে করেই বিএনপি দায়সারা কর্মসূচী ঘোষণা করেছে বলে জানা গেছে।
খালেদা জিয়া কারাবন্দী হওয়ার পর থেকে দুই বছর শত চেষ্টা করেও দলের নেতারা না পেরেছে দল গুছিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে, না পেরেছে রাজপথে আন্দোলন চাঙ্গা করতে। সর্বশেষ ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর তারা আন্দোলনকে টার্গেট করে এ নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সিটি নির্বাচনে হেরে গিয়ে হরতালসহ দুটি কর্মসূচী ঘোষণা করে তা সফল করতে না পেরে তারা প্রমাণ করেছে দলটি এখন সকল ক্ষেত্রেই ব্যর্থ।
অভিজ্ঞ মহলের মতে, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে রাজনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর ইস্যু করতে পারত বিএনপি। সে ক্ষেত্রে তারা যদি ভোটের দিন কেন্দ্র ও আশপাশের এলাকায় জোরালো অবস্থান নিতে পারত তাহলে তাদের দলের আরও কিছু ভোটার হয়তো ভোট দিতে যেত। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনে হেরে গেলেও আওয়ামী লীগের কাছাকাছি ভোট পেলে দলের ইমেজ বৃদ্ধি পেত। দলের নেতাকর্মীরা এভাবে হতাশ হতো না। তবে নির্বাচন পরবর্তী আন্দোলন কর্মসূচী কিছুটা হলেও সফল হতো। কিন্তু বিএনপি নিজেদের ব্যর্থতার কারণে নির্বাচনে পরাজয়ের পাশাপাশি আন্দোলনেও ব্যর্থ হয়।
২০১৩ সালে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে নেতিবাচক আন্দোলন কর্মসূচী পালন করতে গিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে রাজনৈতিকভাবে চরম বেকায়দায় পড়ে বিএনপি। বিএনপি এ নির্বাচন বর্জন করায় আওয়ামী লীগ অতি সহজে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে এবং রাজনৈতিকভাবে অবস্থান আরও শক্তিশালী করে।
২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে শুরু করে সারাদেশে টানা ৯২দিন সহিংস অবরোধ কর্মসূচী পালন করে দেশ-বিদেশে চরম সমালোচনার মুখে পড়ে বিএনপি। ওই আন্দোলনের সময় পেট্রোলবোমাসহ বিভিন্নভাবে জ্বালাও-পোড়াও হওয়ার কারণে শতাধিক মানুষ নিহত, কয়েক হাজার যানবাহন পুড়িয়ে দেয়াসহ ব্যাপক সহিংসতা হওয়ায় বিএনপির রাজনীতি সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হয় সর্বমহলে। এ কারণে ওই কর্মসূচীর পর রাজপথে আর কোন কর্মসূচী সফল করতে পারেনি বিএনপি। এবার ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের আগে সে পরিস্থিতির মোড় ঘোরানোর জোর প্রস্তুতি নেয় বিএনপি। কিন্তু নির্বাচনে হেরে যাওয়া ও নির্বাচন পরবর্তী আন্দোলনে ব্যর্থ হওয়ায় দলটি নতুন করে হতাশায় পড়ে। আর বহু চেষ্টা করেও খালেদা জিয়াকে জামিনে মুক্ত করতে না পারার পর দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা আরও বেড়েছে।