আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো…

21

কাজিরবাজার ডেস্ক :
কবি রফিক আজাদ ‘পঞ্চানন কর্মকার’ কবিতায় ‘যুগ-পরম্পরাক্রমে প্রাগৈতিহাসিক উৎস থেকে/উৎসারিত হতে থাকা নিরন্তর মনুষ্য জীবন;/মুদ্রিত গ্রন্থের মূল্যে ইতিহাস : মানব-সভ্যতা-/দীর্ঘকালব্যাপী অগ্রযাত্রা আর মনন প্রবাহ/বাঙালির দীর্ঘ ইতিহাসে সমৃদ্ধির সূত্রে এই/ গ্রথিত হয়েছে গ্রন্থ : তোমাকেই ঘিরে চলে জানি/ অন্বেষণ-আধুনিক বাঙালীর অন্বি^ষ্ট মনন;’। মাতৃভাষার লড়াইয়ে এমন সব গল্প কবিতার জন্ম দিয়েছে ’৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। সেই থেকে বাঙালি জাতি এই দিনটিকে গভীরভাবে শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করে আসছে।
বাংলাভাষার ওপর প্রথম আঘাত আসে একাদশ শতাব্দীতে ‘সেন রাজাদের’ রাজত্বকালে। তখন বাংলাভাষা এক ভয়ানক সঙ্কট ও অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। এ সময় বাংলার বৌদ্ধশাসন উৎখাত করে সেন রাজবংশ প্রতিষ্ঠিত হয়। তারা বাংলাভাষা চর্চা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবং সংস্কৃতিকে রাষ্ট্রভাষা করেন। বাংলাভাষার বিরুদ্ধে প্রথম আঘাত ও ষড়যন্ত্র প্রসঙ্গে ড. দীনেশ চন্দ্র সেন বলেছিলেন, ‘ইতরের ভাষা বলিয়া বঙ্গভাষাকে ‘দূর দূর’ করিয়া তাড়াইয়া দিতেন, হাড়ি ডোমের স্পর্শ হইতে ব্রাহ্মণরা যে রূপ দূরে থাকেন, বঙ্গভাষা তেমনই সুধীজনের অপাঙক্তেয় ছিল, তেমনি ঘৃণার, অনাদরের ও উপেক্ষার পাত্র ছিল।’ ভাষা আন্দোলন গবেষক মোহাম্মদ আমীন লিখেছেন, ‘দেড় হাজার বছর আগে প্রকৃত ভাষা থেকে বাংলাভাষা জন্ম নেয়ার পর বাংলার কবি এবং গায়েনরা বাংলা ভাষায় কবিতা, গান গেয়ে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষ কথাবার্তার মাধ্যমে বাংলা ভাষাকে প্রসারের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা শুরু করে। শিশু ভাষাটি যখন আস্তে আস্তে বেড়ে উঠছিল তখনই সেন রাজবংশ বাংলাভাষার সর্বপ্রকার ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এমআর মাহবুব ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ও একুশের ইতিহাসে প্রথম’ বইয়ে এমন তথ্য উল্লেখ করেন। তার ওই বইয়ে বলা হয়েছে, ষোল ও সতের শতকে বাংলাভাষা রাষ্ট্রীয় কাজে ও বেসরকারীভাবে ব্যবহৃত হতো। সেই থেকে বাংলাভাষা প্রথম রাষ্ট্রীয় মর্যাদা লাভ করে। ভাষাবিজ্ঞানী ড. এসএম লুৎফর রহমান এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন, ‘বাংলাভাষার রাষ্ট্রীয় মর্যাদা বা সরকারী কাজে তার ব্যবহার ঠিক কবে থেকে শুরু হয়, তার নির্দিষ্ট তারিখ জানান না দেয়া গেলেও, এ তরফে সব নমুনা-নিশানা করা গিয়েছে।’ তা থেকে দেখা যায়- সতের শতকের পহেলা দশক থেকেই রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার স্বীকৃতি ও সরকারী ব্যবহার ঘটে চলেছে।