সিঙ্গাপুরে করোনা ভাইরাসে দুই বাংলাদেশী শনাক্ত, আরো ১০ কোয়ারেন্টাইনে

28

কাজিরবাজার ডেস্ক :
নতুন করোনা ভাইরাস নিয়ে আইইডিসিআর এর নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।
সিঙ্গাপুরে এখন পর্যন্ত দুইজন বাংলাদেশি শনাক্ত হয়েছে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হিসেবে। প্রথম যিনি শনাক্ত হয়েছিলেন দ্বিতীয় শনাক্ত হওয়া ব্যক্তি তার সংস্পর্শেই ছিলেন। এ তথ্য জানিয়েছেন জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তবে আরও উদ্বেগের যে তথ্য তিনি জানিয়েছেন তা হচ্ছে, এই দুই রোগীর সংস্পর্শে ছিলেন এমন ১৯ জনকে কোয়ারেন্টাইনে রেখেছে সিঙ্গাপুর সরকার। এর মধ্যে ১০ জনই বাংলাদেশি।
বুধবার ( ১২ ফেব্রুয়ারি) নতুন এই করোনা ভাইরাস নিয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান। এসময় উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর।
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা সিঙ্গাপুরে আক্রান্ত দুজনের বিষয়ে আরও জানান, তারা দুজনই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এরমধ্যে একজন আইসিইউতে রয়েছেন, আরেকজন সাধারণভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সিঙ্গাপুর সরকার তাদের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে, তারা নিয়মিতভাবে আমাদের দূতাবাস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। আর দূতাবাস এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। তবে এই দুই রোগীর সংস্পর্শে আসারা আক্রান্ত না হলেও তাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্যই কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এদের ১০ জনই বাংলাদেশি। তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।
তিনি জানান, বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) চীনের স্বাস্থ্য কমিশন যে তথ্য দিয়েছে তাতে এ পর্যন্ত চীনে এই ভাইরাসে মারা গেছেন ১ হাজার ১ শত ১৩ জন।
সংবাদ সম্মেলেন ভাইরাসটির নামকরণ করার কথাও জানান তিনি। বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ভাইরাসের নতুন নামকরণ করেছে কভিড-১৯ (ঈঙঠওউ-১৯)। করোনা থেকে সিও, ভাইরাস থেকে ভিআই এবং ডিজিজ থেকে ডি। আর যেহেতু এটা ২০১৯ সালে শনাক্ত হয়েছে তাই শেষে ১৯ দিয়ে লেখা হচ্ছে।
অধ্যাপক সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, চীনের পাশাপাশি এখন সিঙ্গাপুরের প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নজর দিচ্ছে বিশেষ কারণে। আর যেহেতু সেখানে বাংলাদেশিরা শনাক্ত হয়েছে তাই আমরা সেখানে বিশেষ নজর রাখছি।
চীনের সঙ্গে যাতায়াতের বিষয়ে যেভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল সেভাবে এখন সিঙ্গাপুরের ক্ষেত্রে নির্দেশনা দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আলাদা করে এখনও কোনও নির্দেশনা দিচ্ছি না। যদিও সব এয়ারলাইন্সকে স্ক্রিনিং এর আওতায় নিয়ে এসেছি, তারপরও নজর দিচ্ছিলাম চীন থেকে আসা ফ্লাইটের বিষয়ে। এখন সিঙ্গাপুর থেকে আসা ফ্লাইটের বিষয়েও আমরা বিশেষ নজরদারি দিচ্ছি।
সম্প্রতি যারা সিঙ্গাপুর থেকে এসেছেন বা এখনও আসছেন তাদের প্রতি অধ্যাপক ফ্লোরা অনুরোধ জানিয়ে বলেন, তারা যেন যথাসম্ভব নিজেদের ঘরের মধ্যে থাকেন, বিশেষ করে যদি কেউ করোনা আক্রান্ত কোনও রোগীর সংর্স্পশে এসে থাকেন তাহলে তিনি যেন হোম বা সেলফ কোয়ারাইন্টাইনে থাকেন।
আইইডিসিআরের হটলাইনে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩০টি ফোন কলের মধ্যে নতুন এই ভাইরাস নিয়ে কল এসেছে ১০৭টি। এছাড়া ৫৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে, যার মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষা হয়েছে তিনটি। তবে এসব নমুনার মধ্যে এখন পর্যন্ত নতুন এই করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। আমাদের একজন রোগী আইসোলেশনে ছিলেন, তার মধ্যেও করোনার উপস্থিতি নেই। যদিও তার মধ্যে করোনার কোনও লক্ষণ-উপসর্গ ছিল না, তারপরও অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে তার পরীক্ষা করা হয়েছে।
আইসোলেশনে রোগী নেই : এই মুহূর্তে আইসোলেশনে কোনও রোগী নেই জানিয়ে অধ্যাপক ডা. সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, গত ১ ফেব্রুয়ারি উহান ফেরত যেসব বাংলাদেশিকে হজ ক্যাম্পে রাখা হয়েছিল তাদের আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি বিকাল পর্যন্ত কোয়ারাইন্টাইনে রাখা হবে। তারপরে তাদের কীভাবে সেখান থেকে রিলিজ করা হবে সে বিষয়ে প্রস্তুতি চলছে।
এতদিন স্থল-সমুদ্র এবং বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছিল। কিন্তু একটি ট্রেন – মৈত্রী, যেটা সপ্তাহে ঢাকা এবং কলকাতাতে চারদিন যাতায়াত করে সেটি আসলে বেনাপোল বন্দর অতিক্রম করলেও সেখানে কোনও যাত্রী নামেন না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা নামেন ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশনে। গতকাল থেকে তাদেরকেও স্ক্রিনিং এর আওতায় আনা হয়েছে।’