কাজিরবাজার ডেস্ক :
তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির সংস্কার উল্টে দিতে চায় শ্রমিক সংগঠন (সিবিএ)। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তিতাসের ঘুষ-দুর্নীতির সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিতে একই জায়গায় অনেকদিন ধরে কাজ করা তিতাস কর্মকর্তা কর্মচারীদের বদলির সুপারিশ করেছিল। দুদকের ওই সুপারিশের আলোকে জ¦ালানি বিভাগের নির্দেশে তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানি পাঁচ থেকে ৩৪ বছর একই জায়গায় রয়েছেন এ রকম সব কর্মীর কর্মস্থল বদলে দিয়েছে। তবে তিতাসের শ্রমিক সংগঠন (সিবিএ) বলছে, আগে যারা যেসব জায়গায় ছিল তাদের আগের জায়গায় ফেরত আনতে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিতাসের একাধিক কর্মকর্তা জানান, দীর্ঘদিন ধরে একই কর্মস্থলে কাজ করলে এক ধরনের সম্পর্ক তৈরি হয়, যা কর্মীদের দুর্নীতিতে উৎসাহিত করে। সরকার সেবাখাতগুলোকে আরও জনবান্ধব করতে চায়। দুদকের অনুসন্ধানের মধ্যে ছিল তিতাসের সেবাখাতও। দুদক স্পষ্টত কিছু বিষয়ে সুপারিশ করে। ওই সুপারিশের আলোকে জ¦ালানি বিভাগের নির্দেশে সব কিছু হয়েছে। তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানি নিজে থেকে কিছু করেনি। কিন্তু বদলির ছয়মাস না পেরোতেই শ্রমিক নেতারা এ বিষয়ে চাপ দিচ্ছে।
দুদকের সুপারিশে গত জুলাইয়ে তিতাসের ৯১৯ জনকে বদলি করা হয়। এর মধ্যে কর্মকর্তা ৩৮৭ ও কর্মচারী ৫৩২। এরা তিতাসের কোন না কোন অফিসে পাঁচ থেকে ৩৪ বছর পর্যন্ত কর্মরত। এসময় তিন বছরের বেশি যারা একই স্থানে কাজ করছেন তাদেরকেই বদলি করতে বলা হলেও তিতাস তা কারেনি। কেন জ¦ালানি বিভাগের নির্দেশ মেনে তিন বছরের বেশি সময় কাজ করছেন এমন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থল বদলি করে দেয়া হয়নি জানতে চাইলে এক উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, তিতাসের কর্মীরা পাঁচ বছরই মানতে চায়নি। আর তিন বছরে নেমে এলে সঙ্কট বাড়বে চিন্তা করেই ওটা করা হয়নি।
তিতাস সূত্র জানায়, সিবিএ নির্বাচনের আগেই শ্রমিকদের কাছে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিলÑ যারা যে জায়গায় আগে ছিল তাদের সেই জায়গায় ফিরিয়ে আনা হবে। ফলে নির্বাচনের পর থেকেই এই তৎপরতা শুরু হয়েছে। সুস্থ মানুষকে অসুস্থ দেখিয়ে আবেদন করা হচ্ছে। এছাড়া নানা সমস্যার কথা বলেও অনেকে বদলির আবেদন করে আগের জায়গায় ফিরে যেতে চাইছেন।
কেন আগের জায়গায় ফিরতে চাইছেন এ প্রশ্নের উত্তরে তিতাসের ওই কর্মকর্তা বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন তাদের প্রতিবেদনে বলেছিল, একই জায়গায় অনেকদিন ধরে কাজ করাতে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এক ধরনের সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। এই সিন্ডিকেট কি করছে তা দুদকের ওই প্রতিবেদনের মধ্যেই আছে। এখন যাদের বদলি করা হয়েছে তারা তো যেখানে রয়েছেন সেখানে চাকরিবিধি অনুযায়ী সকল সমান সুবিধা ভোগ করছেন। কাজেই বদলি কেন হতে চাইছে তা সহজেই অনুমান করা যায়।
তিতাস প্রশাসনের কাছে সিবিএ নেতারা প্রায় প্রতিদিনই বদলির আব্দার নিয়ে আসছে। এ বিষয়ে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছেও তারা দেনদরবার করছেন। এরমধ্যেই কয়েকজনকে বদলিও করা হয়েছে। তবে এভাবে সবাই আগের জায়গায় ফিরে এসে একই কাজ শুরু করলে সরকারের সুউদ্যোগটি ভেস্তে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। কর্মকর্তারা বলছেন বরং নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্য সরকারী চাকরির মতো এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীরও বদলির বিধান রাখা উচিত।
এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য তিতাস সিবিএ সভাপতি কাজিম উদ্দিনকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। পরে সিবিএ সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।
গৃহস্থালির গ্যাসের চাপ ইচ্ছাকৃত কমিয়ে ঘুষ নিয়ে যেসব শিল্পে গ্যাস সংযোগ দেয়া হয় সেখানে সরবরাহ বাড়িয়ে দেয় তিতাস। এতে সাধারণ মানুষ গ্যাস পায় না। এর কোন প্রতিকার বছরের পর বছর ধরে সরকারও করতে পারেনি। শুধু কি তাই, আবাসিক গ্রাহকের কাছ থেকে সরবরাহের তুলনায় বেশি অর্থ আদায়ের প্রমাণ মিলেছে অনুসন্ধানে। অনুসন্ধান শেষে দুদক জানিয়েছিল, আবাসিক খাতে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১০ হাজার ৩১৭ কোটি ৬৯ লাখ ৩৫ হাজার ৫৬৮ সিএফটি গ্যাস ব্যবহারের প্রাক্কলন করা হয়। কিন্তু প্রকৃত ব্যবহার তা থেকে ৪১ কোটি ৮৫ লাখ ৬ হাজার ৭০৩ ঘনমিটার কম হয়েছে, যার মূল্য প্রায় ২৯৩ কোটি টাকা।
আবাসিকের বিপুল গ্যাস শিল্পকারখানায় অবৈধ সংযোগ দিয়ে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। শুধু এই গ্যাসই নয় বিতরণ কোম্পানিটি এত বেশি অবৈধ সংযোগ দিয়েছে যে মোট বিতরণ করা গ্যাসের ৬ ভাগ তারা সিস্টেম লস দেখাচ্ছে। অর্থাৎ এই গ্যাসও অবৈধভাবে বেচে দিয়েছে। দুদক বলছে অবৈধ চুলা চিহ্নিত করেও তিতাস তা বিচ্ছিন্ন না করে বৈধ চুলার সমান অর্থ আদায় করেছে। জিনজিরা, ফতুল্লা, সোনারগাঁও, নরসিংদী ও গাজীপুর এলাকায় তিতাসের এক লাখ ১৮ হাজার ৪৫৫ অবৈধ আবাসিক সংযোগ রয়েছে, যেখান থেকে প্রতিমাসে ৯২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা আদায় করে ভাগ করে নিচ্ছে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এছাড়া অবৈধ পন্থায় বিভিন্নভাবে সংযোগ দিয়েও নিয়মিত মাসোহারা নেয়ার অভিযোগ এনেছে দুদক।