স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেট মাল্টিপ্ল্যান শাহজালাল সিটির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুনসীফ আলীর বিরুদ্ধে প্রতারণা ও হুমকির অভিযোগ করেছেন মাল্টিপ্ল্যান শাহজালাল সিটি হিজল টাওয়ারের ৮৪ জন ফ্ল্যাট মালিক। বুধবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তারা এ অভিযোগ করেন। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মাল্টিপ্ল্যান শাহজালাল সিটি ঔনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমান কুুনু।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, নিজেদের কষ্টার্জিত অর্থের বিনিময়ে ২০০৪ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে ফ্ল্যাট ক্রয় করে আজও রেজিষ্ট্রেশন না পেয়ে উল্টো নানা বিড়ম্বনা ও হুমকি-ধমকির শিকার হচ্ছেন ফ্ল্যাট মালিকরা। মাল্টিপ্ল্যান শাহজালাল সিটির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুনসীফ আলী ফ্ল্যাট মালিকদের সাথে প্রতারণা করছেন। ব্যাংকের পে অর্ডার ও চুক্তিনামার মাধ্যমে ৩৭ লাখ টাকা থেকে শুরু করে ৭৮ লাখ টাকায় একেকজন ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন।
তারা বলেন, ফ্ল্যাট ক্রয়ের সময় মাল্টিপ্ল্যান শাহজালাল সিটির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুনসীফ আলী বলেছিলেন দ্রুত রেজিষ্ট্রেশন করে দেবেন। কিন্তু দিচ্ছি দেব বলে বছরের পর বছর অতিক্রম করে ও তিনি রেজিষ্ট্রেশন করে দিচ্ছেন না। ইতিমধ্যে সরকারি রেজিষ্ট্রেশন ফি বেড়ে তিনগুণ হয়েছে। ফ্ল্যাট মালিকরা রেজিষ্ট্রারির জন্য তাগিদ দিলে তিনি কোন সদুত্তর না দিয়ে উল্টো তাদের উপর বিভিন্নভাবে শাস্তির খড়গ প্রয়োগ করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। মুনসীফ আলী ও তার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ফ্ল্যাট মালিকদের এক ধরনের জিম্মি করে রেখেছেন। মুনসীফ আলী প্রতারণা করছেন বুঝতে পেরে ফ্ল্যাট মালিকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন শুরু করেন। মালিকদের ন্যায়সংগত আন্দোলনের কারনে বাধ্য হয়ে ২০১৮ সালের ৩০ মার্চ মুনসীফ আলী ফ্ল্যাট মালিকদের সাথে এক সভায় মিলিত হন। এ সভায় রেজিষ্ট্রেশনে সময় ক্ষেপন হওয়ায় তিনি ফ্ল্যাট মালিকদের নিকট দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ২০১৯ সালের মার্চ মাসের মধ্যে হিজল টাওয়ারের সকল ফ্ল্যাট রেজিষ্ট্রেশন করে দেবেন বলে লিখিতভাবে প্রতিজ্ঞা করেন। কিন্তু তিনি আজো কথা রাখেননি।
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, ২০১৮ সালের ১০ এপ্রিল মাল্টিপ্ল্যান ঢাকা অফিস থেকে হঠাৎ করে একটি চিঠি আসে। ঐ পত্রের মাধমে হাউজিং ফি, সার্ভিস চার্জ ও সেলস পারমিশনের জন্য ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা করে পরিশোধ করতে ফ্ল্যাট মালিকদের নির্দেশ দেয়া হয়। এমন চিঠি পেয়ে মালিকরা হতবাক হয়ে যান। কারণ সেলস পারমিশন ফি তাদেরকে দেয়ার কথা নয়। এটি কোম্পানী বহন করবে এমনটি জেনেই সবাই চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন। ২০১৯ সালের ২৩ জুলাই মুনসীফ আলী আরেকটি চিঠির মাধ্যমে জানিয়ে দেন, জাতীয় গৃহায়ন কর্র্তৃপক্ষের অফিসে ঢাকা থেকে সিলেটে আসা যাওয়া, রেজিষ্ট্রারী অফিসে যাথায়াত ও বিভিন্ন কাগজ সত্যায়ন বাবদ মাল্টিপ্ল্যানকে আরো ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা করে ফ্ল্যাট মালিকদেরকে পরিশোধ করতে হবে। ফ্ল্যাট মালিকরা তাৎক্ষণিক এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন। মুনসীফ আলীর এ রকম কুটকৌশলের কারণে ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর হিজল ভবনের ঔনার্সরা কোম্পানীর চেয়ারম্যান বরাবরে একটি উকিল নোটিশ পাঠান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গত ১১ জানুয়ারী আবারো ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা পরিশোধের জন্য মুনসীফ আলী চিঠি পাঠান। সেই সাথে হিজল ভবনের মাসিক সার্ভিস চার্জ ১২০০ টাকার পরিবর্তে আগামী মার্চ মাস থেকে ২৫০০ টাকা পরিশোধ করতে হবে মর্মে আরেকটি পত্র দেয়া হয়। যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও হিংসার বহিঃপ্রকাশ মাত্র। সম্প্রতি কোম্পানীর চেয়ারম্যান সৈয়দ মুনসীফ আলী মাল্টিপ্ল্যান শাহজালাল সিটির হিজল টাওয়ারের নিচে এসে গাড়ি থেকে নেমেই চিল্লাচিল্লি করে ফ্ল্যাট মালিকদের গালিগালাজ করেন। বিষয়টি নিয়ে মামলা করলে খবর আছে বলে হুমকি দিয়ে তিনি বলেন, প্রশাসন তার পকেটে থাকে। টাকা থাকলে প্রশাসন কেনা যায়। ৫ লক্ষ টাকা খরচ করলেই সব কিছুর সমাধান হয়ে যাবে। যারা বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে তাদেরকে দেখে নেবেন বলে ও হুমকি দেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে ফ্ল্যাট মালিকরা জানান, বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি মাল্টিপ্ল্যানের চেয়ারম্যান সৈয়দ মুনসীফ আলী কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছেন। কানাডায় বিশাল একটি বাড়ি ক্রয় করেছেন। নামে বেনামে অবৈধ প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। ফ্ল্যাট গ্রহিতারা সকল টাকা পরিশোধ করে ফ্ল্যাটের মালিকানা বুঝে নেওয়ার পর ও হঠাৎ করেই সাউথইষ্ট ব্যাংক একটি সাইনবোর্ড সাঠিয়ে দেয়। যেটিতে লিখা মাল্টিপ্ল্যান শাহজালাল সিটি সম্পূর্ণ প্রজেক্ট সাউথইষ্ট ব্যাংকের নিকট বন্ধক রয়েছে। উক্ত সাইনবোর্ড দেখে মালিকরা আতংকিত হয়ে যান। পরবর্তীতে হেড অফিসের পত্রের মাধ্যমে জানানো হয়, রেজিষ্ট্রেশনের পূর্বে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করে দেয়া হবে। অথচ চুক্তিতে এমন কিছু ছিলনা। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মাল্টিপ্ল্যান সিটির ফ্ল্যাট মালিকদের অধিকাংশই প্রবাসী। প্রধানমন্ত্রী, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা সকলেই বারবার প্রবাসীদের দেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। এমন পরিস্থিতিতে প্রবাসীরা কিভাবে বিনিয়োগ করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে তারা তিনটি দাবি তুলে ধরেন। সেগুলো হল- দ্রুত রেজিষ্ট্রেশন করে দিতে হবে। সময়মত রেজিষ্ট্রেশন করে না দেওয়াতে রেজিঃ ফি যে পরিমাণ বেড়েছে, সেই টাকা সৈয়দ মুনসীফ আলীকে পরিশোধ করতে হবে। সেলস পারমিশন ফি চুক্তি অনুযায়ী কোম্পানীকেই বহন করতে হবে। সার্ভিস চার্জের নামে অহেতুক ফি কমাতে হবে। ফ্ল্যাট মালিকদের সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা প্রদান করতে হবে। বিভিন্ন সময় হুমকি ধমকির জন্য এভং অসৌজন্যমূলক আচরণের জন্য মুনসীফ আলীকে ক্ষমা চাইতে হবে। ফ্ল্যাট মালিকরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সংশ্লিষ্ট মহলের সহযোগিতা কামনা করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে ফ্ল্যাট মালিকদের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন বদরুজ্জামান সেলিম, আব্দুল কাদির, আশরাফ হোসেন পাটোয়ারী, দিদারুল আলম, মাহবুবুল আলম, ডা. শাখাওয়াত, মো. মনিরুজ্জামান তাহমিদ, ডা. মো. নাছিমুজ্জামান প্রমুখ।