কাজিরবাজার ডেস্ক :
গত ছয় মাসে একে একে সাতটি সংসদীয় আসন এমপিশূন্য হয়েছে। এর মধ্যে গত প্রায় এক মাস সময়ে (২৬ দিন) শূন্য হয়েছে পাঁচটি আসন। একটি পদত্যাগ আর বাকি ছয়টি আসন সাংসদের মৃত্যুজনিত কারণে শূন্য হয়। এই সাংসদদের সবাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত সদস্য।
গত ২৭ ডিসেম্বর থেকে ও চলতি জানুয়ারি মাসে ২১ তারিখ পর্যন্ত মারা যান দলটির চারজন সংসদ সদস্য। সবশেষ আজ মঙ্গলবার সকালে মারা গেছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক। আর মেয়র নির্বাচন করার জন্য পদত্যাগ করেন ঢাকা-১০ আসনের সাংসদ ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস। বর্তমানে মোট পাঁচটি আসন এমপিশূন্য।
ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের মহাজোটের শরিক জাসদের সাংসদ মঈনুদ্দিন খান বাদলের শূন্য আসনে উপনির্বাচন হয়েছে। সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোছলেম উদ্দিন নির্বাচিত হয়ে শপথও নিয়েছেন। আর সংরক্ষিত আসনের এমপি রুশেমা বেগমের শূন্য আসন গত ১৮ আগস্ট পূরণ করা হয়।
বাকি আসনগুলোতে কবে নাগাদ নির্বাচন হবে সে বিষয়ে এখনো নির্বাচন কমিশনের কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। তবে শূন্য আসনে ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচনের বিধান রয়েছে।
কোন আসন কবে শূন্য হলো
যশোর-৬ আসনের এমপি ও সাবেক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক আজ মঙ্গলবার মারা গেছেন। রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
ইসমাত আরা সাদেক ও তার স্বামী এ এস এইচ কে সাদেক ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালে তিনি কেশবপুর মহিলা আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করেন ও তখন থেকে কার্যনির্বাহী কমিটির ১ নম্বর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ মহিলা কল্যাণ পরিষদের সদস্য ছিলেন।
ইসমাত আরা সাদেক দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-৬ ( কেশবপুর) নির্বাচনী এলাকা থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। ১২ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে নতুন সরকার গঠিত হলে তাকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করা হয়। পরবর্তী সময়ে ১৫ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি।
ইসমাত আরা সাদেকের স্বামী এ এস এইচ কে সাদেক সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। সাবেক এই সচিব আওয়ামী লীগ থেকে দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
আব্দুল মান্নান
বগুড়ার এমপি আব্দুল মান্নান হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গত ১৮ জানুয়ারি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। বগুড়া-১ আসনে সংসদ সদস্য মান্নান ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর। ২০০৮ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন মান্নান। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালেও নির্বাচিত হন তিনি।
ডা. মোজাম্মেল হোসেন
বাগেরহাট-৪ ( মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা) আসনের সংসদ সদস্য ডা. মোজাম্মেল হোসেন গত ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
১৯৪০ সালের ১ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করা ডা. মোজাম্মেল হোসেন বাগেরহাটের খুবই জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে পাঁচবার জয়লাভ করেন।
মক্তিযোদ্ধা ডা. মোজাম্মেল হোসেন ১৯৭৩ সালে মোরেলগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। পর পর দুবার তিনি এই পদে নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে বাগেরহাট আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে আমৃত্যু এই পদে ছিলেন তিনি। ১৯৯১ সালে বাগেরহাট-১ আসন থেকে তিনি জয়লাভ করে প্রথমবার সংসদে বাগেরহাটের প্রতিনিধিত্ব করেন।
মো. ইউনুস আলী
গত ২৭ ডিসেম্বর মারা যান গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্লাপুর-পলাশবাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য মো. ইউনুস আলী সরকার। তিনি ফুসফুসের ক্যান্সারে ভুগছিলেন। বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
ইউনুস আলী ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-৩ আসন থেকে প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে এলাকার ভোটাররা তাকে আবার নির্বাচিত করে সংসদে পাঠায়। একাদশ সংসদে ইউনুস আলী স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় সর্ম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৫৩ সালের ১৫ জুন জন্মগ্রহণ করা মো. ইউনুস আলী ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়ান এবং রংপুর মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। পেশাজীবী সংগঠন বিএমএর সঙ্গেও তিনি যুক্ত ছিলেন।
পদত্যাগে শূন্য তাপসের আসন
রাজধানী ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এমপি পদ থেকে পদত্যাগ করেন ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে নূর তাপস। সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী হিসেবে তার নাম ঘোষণা করার পরই তিনি সাংসদ পদ ছাড়েন। কারণ নির্বাচন করতে হলে তাকে সংসদ সদস্য পদ ছাড়তে হবে।
এ ছাড়া গত ছয় মাসে আারও দুটি আসন শূন্য হয়েছিল। জাসদের সংসদ সদস্য চট্টগ্রাম-৮ আসনের মঈনউদ্দিন খান বাদল মারা যান গত ৭ নভেম্বর। আর সংরক্ষিত আসনের এমপি রুশেমা বেগম মারা যান ১০ জুলাই।