জগন্নাথপুর থেকে সংবাদদাতা :
জগন্নাথপুরে দিনে দিনে প্রযুক্তির প্রভাবে কমে যাচ্ছে গরু-মহিষ পালন। মাত্র কয়েক বছর আগেও উপজেলার প্রতিটি মাঠ ও হাওরে দেখা যেতো বড়-বড় গরু-মহিষের পাল। বিভিন্ন গ্রামের গরু এক মাঠে চরানো হতো। এক মাঠে গরু চরাতে গিয়ে রাখালদের মধ্যে গড়ে উঠতো সুসম্পর্ক। প্রতিটি কৃষক পরিবারে পালন করা হতো গরু ও মহিষ। সংখ্যায় মহিষ কম হলেও গরুর কদর ছিল বেশি। তখন বলদ দিয়ে মানুষ জমি হালচাষ ও বৈশাখ মাসে হাওর থেকে গরুর গাড়ি দিয়ে বাড়িতে আনা হতো ধানের বস্তা। আর খাঁটি দুধ খেতে পালন করা হতো গাভী গরু। প্রতিটি গ্রামের অসংখ্য মানুষ গরু পালন করতেন। প্রতিটি পরিবারে ৫ থেকে ২০টি পর্যন্ত গরু থাকতো গৃহস্থের গোয়ালে। এসব গরুর গোবর পরিস্কারের জন্য রাখা হতো কাজের মহিলা। প্রতিদিন ভোরে বাড়ি থেকে রাখালরা গরু নিয়ে চলে যেতো মাঠে। মাঠে গিয়ে সকল রাখাল এক হয়ে ঘটতো রাখাল সমাবেশ। তাদের মধ্যে অনেকে জানতো চমৎকার গল্প, গান ও কিচ্ছা। যে জানে তাকে, সবাই মিলে চেপে ধরতো থাকে। শুরু হতো গল্প-গানের মিলন মেলা। এ সময় তাদের মধ্যে পালা বদল করে গরু চরাতো রাখালরা। এখন আর সেই দিন নেই। আগের মতো মাঠে-মাঠে গরুর পাল দেখা যায় না। দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার চিরচেনা ঐতিহ্য। প্রযুক্তির প্রভাবে কমে যাচ্ছে গরু পালনের সংখ্যা। বেশ কয়েক বছর ধরে মানুষ গরু-মহিষের বদলে মেশিন দিয়ে করছেন জমি চাষাবাদ সহ সকল কাজ। যে কারণে কমে যাচ্ছে গরু-মহিষের কদর ও লালন-পালন। তবুও পূর্ব পুরুষের স্মৃতি ধরে রাখতে অনেক গৃহস্থ এখনো কিছু গরু পালন করেন। যে কারণে হাওর ও মাঠে গরুর পাল খুব কম দেখা যায়। প্রযুক্তির প্রভাবে দিনে দিনে কমে যাচ্ছে গরুর কদর। তাইতো কবি বাংলাদেশের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ও চিরচেনা চিত্রকে ভালবেসে বলেছিলেন “রাখাল বাজায় বাঁশি কেটে যায় বেলা”। “চাষি ভাই করে চাষ কাজে নেই হেলা”।
১৯ জানুয়ারি রোববার সরজমিনে দেখা যায়, মাঠে গরুর পাল। রাখালরা এক পাশে বসে গরু নিয়ন্ত্রন করছে। অনেক দিন পর গ্রাম বাংলার চিরচেনা ঐতিহ্যবাহী চিত্র গরুর পাল দেখে এগিয়ে যান সাংবাদিকরা। আলাপ হয় রাখাল ও কৃষকদের সাথে। জানাযায় গরু-মহিষ নিয়ে পুরনো দিনের অনেক কথা। কিভাবে গরু-মহিষের কদর কেঁড়ে নিয়ে প্রযুক্তির যন্ত্র ট্রাক্টর মেশিন। তবুও সৌখিন মানুষরা এখনো কিছু গরু-মহিষ পালন করছেন। যা ধরে রেখেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য।