একই জিনিস সব সময় চলে না, পোষাকে বৈচিত্র্য আনুন – প্রধানমন্ত্রী

53
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় বস্ত্র দিবস ২০১৯ উপলক্ষে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে তিন দিনের বহুমুখী বস্ত্র মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে স্টল পরিদর্শন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বস্ত্রখাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের রফতানি আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে পণ্যের বহুমুখীকরণের পাশাপাশি নতুন বাজার খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি বিশ্ববাজারের সঙ্গে ধারাবাহিকতা রেখে টেক্সটাইল পণ্যগুলোর বৈচিত্রকরণ করা খুব প্রয়োজন,’। তিনি বলেন, ‘একই জিনিস সবসময় চলে না। পোষাকের ক্ষেত্রেও তার ডিজাইন, রং এবং সবকিছু পরিবর্তন করতে হয়।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয় বস্ত্র দিবস-২০১৯’ এবং ‘বহুমুখী বস্ত্রমেলা’র উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন। খবর বাসস’র।
তিনি বলেন, ‘একই সঙ্গে, আমাদের বিদ্যমান পণ্যগুলোর ক্ষেত্রে ‘ভ্যালু এ্যাড’ এবং দেশের রফতানি আয় বাড়াতে নতুন নতুন বাজারের সন্ধান করতে হবে।’
‘এখন বিশ্ব পোশাক বাজারে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থান অধিকার করে আছে। বাস্তবিক ক্ষেত্রে তা বিশ্ব বাজারের মাত্র ৬.৪০ শতাংশ। তাই আমাদের এই বিষয়টিতে নজর দিতে হবে, যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে আমাদের পণ্যের চাহিদা বাড়ানোর জন্য আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। আমাদের এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।
তিনি একইসঙ্গে বাজার সম্প্রসারণ এবং বস্ত্র খাতের প্রসারের জন্য বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ক্রেতাদের সঙ্গে যতটুকু সম্ভব দরাদরি করে পণ্যের উপযুক্ত মূল্য আদায়েও ব্যবসায়ীদের মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী সভাপতিত্ব করেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান মির্জা আজম এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে বস্ত্র খাতে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ৯টি সংস্থা এবং উদ্যোক্তাদের মাঝে প্রধানমন্ত্রী পুরস্কার বিতরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন সিজনে বা বছরের কোন সময়ে কোন রঙটা বেশি প্রভাব ফেলে- এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই আমাদের উৎপাদন বহুমুখীকরণ করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। আর এজন্য আমাদের কিছু স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী এবং দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা থাকা উচিত।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আশা করি আপনারা এ ধরনের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও গ্রহণ করবেন এবং সরকারের পক্ষ থেকে এক্ষেত্রে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে তৈরি এসব পোশাক পার পিস খুব অল্প টাকায় আমরা বিক্রয় করি। এক্ষেত্রে আমাদের পণ্য ক্রেতারা এক ডলার করেও যদি দাম বাড়াত তাহলে মনে হয় এই খাতটাকে আমরা আরও উন্নত করতে পারতাম।
তিনি বলেন, যেহেতু প্রতিযোগিতার একটা বিষয়ে থাকে সেহেতু আমাদের রফতানিকারকগণ বায়ারদের সঙ্গে এই ‘বার্গেনিংটা’ করেন কিনা আমি বলতে পারব না। কিন্তু আমার মনে হয় একটু করা উচিত। বায়ার বা দেশগুলোকে বিষয়টি বলা উচিত।
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন যে, যেসব দেশে আমাদের তৈরি পোশাক রফতানি হয় সেসব দেশ সফরে গেলে তাদের সরকার প্রধানদের কাছে তিনি নিজে বিষয়টি তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি একা তুলে ধরলে হবে না। আপনারা যারা ব্যবসা করেন তাদেরও বোধ হয় একটু উদ্যোগ নিতে হবে।’
সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করতে পারেন ব্যবসায়ীরা। আশা করি বিদেশী বিনিয়োগও আসবে।’
প্রধানমন্ত্রী বেসরকারী খাতের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, ‘পোশাক শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশ এবং বিশেষ করে এর আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণে বেসরকারী খাতের ভূমিকা অগ্রগণ্য। তাই এ খাতে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর এগিয়ে আসা দরকার।’
তিনি নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোকে রাষ্ট্রীয় খাতের দূরাবস্থার কথাও এ সময় উল্লেখ করেন।
সরকার প্রধান বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় খাতে গেলেই অজানা কারণে আমরা লাভের মুখ দেখি না। জানি না এর পেছনে মূলত কী কারণ। তাই বেসরকারী খাতের দিকেই আমাদের আগ্রহ বেশি। তাদেরও এগিয়ে আসতে হবে।’
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বস্ত্রখাতের ভূমিকা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের জিডিপিতে এ খাতের অবদান ১৩ শতাংশ। তৈরি পোশাক খাতে প্রায় ৪৪ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে যার অধিকাংশই নারী। পরোক্ষভাবে প্রায় ৪ কোটিরও বেশি মানুষ এ শিল্পের ওপর নির্ভরশীল।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকার প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা ও প্রণোদনা দিয়ে এ খাতকে শক্তিশালী করছে। বর্তমানে তৈরি পোশাক শিল্পের ৪টি খাতে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ হারে প্রণোদনা প্রদান করা হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তৈরি পোশাক রফতানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ বছরে অবশিষ্ট সকল খাতে ১ শতাংশ হারে রফতানি প্রণোদনা প্রদান করা হচ্ছে। এ প্রণোদনা বাবদ বাজেটে অতিরিক্ত ২,৮২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
শ্রমিকদের জন্য কল্যাণ তহবিল গঠন, শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা, ন্যূনতম মজুরি কমিশন শক্তিশালী করা, শ্রম আইন সংশোধন ও শ্রম বিধিমালা জারিসহ শ্রমিকদের অধিকার সংরক্ষণে তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, দেশের বস্ত্র খাতকে যুগোপযোগীকরণ, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা অর্জনে সহায়তাকরণ এবং বিনিয়োগ আকর্ষণে বস্ত্রনীতি, ২০১৭ এবং বস্ত্র আইন, ২০১৮ প্রণয়ন এবং বস্ত্র পরিদফতরকে শক্তিশালী করে বস্ত্র অধিদফতরে উন্নীত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বস্ত্রখাতে দক্ষ জনবল সৃষ্টিতে সারাদেশে এ পর্যন্ত ৭টি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ৭টি টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট এবং ৪২টি টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
তিনি এ সময় বর্ষব্যাপী ‘মুজিব বর্ষ’ উদযাপনের প্রসঙ্গ টেনে এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি এখানেই থেমে না থেকে বাংলাদেশকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য, প্রজন্মের পর প্রজন্ম যাতে একটি সুন্দর দেশ পায়, উন্নত জীবন পায়-তা নিশ্চিত করতে সরকারের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে দীর্ঘ মেয়াদী প্রেক্ষিত পরিকল্পনা এবং শতবর্ষ মেয়াদী ‘ডেল্টা পরিকল্পনা’ বাস্তবায়নের উদ্যোগও তুলে ধরেন।
তিনি উল্লেখ করেন, ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে ১৭ মার্চ থেকে শুরু হতে যাওয়া ‘মুজিব বর্ষ’ উদযাপনের আনুষ্ঠানিক ক্ষণ গণনা শুরু হবে এবং ২৬ মার্চ ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন পর্যন্ত এই ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপিত হবে।