সোনার তরী ও অচিন পাখি উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী ॥ বিমানে চড়ার নিয়ম না মানলে তার বিমানে চড়াই বন্ধ হয়ে যাবে

25

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বিমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিমানবন্দরের নিরাপত্তার নিয়মগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যেভাবে আছে, সব যাত্রীকে সেটা মেনে নিতে হবে। কেউ যদি এতে বাধা দেন, ভবিষ্যতে তার বিমানে চড়াই বন্ধ হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, শুধু বিমান নয়, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে। যেই দুর্নীতি করবে, ছাড়া হবে না। সে যেই হোক না কেন।
প্রধানমন্ত্রী শনিবার সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান এয়ারলাইন্সের নতুন ২টি ড্রিমলাইনার ‘সোনার তরী’ ও অচিন পাখি উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের ভিত্তি স্থাপন করেন। এরপর বিমানের মোবাইল এ্যাপও উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর আমরা বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছি। আমাদের যারা বিদেশে কাজ করে, যাদের অর্থে আমরা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করি। তারা যখন কর্মস্থল থেকে ফেরে তাদের অনেক সময় হয়রানি করা হয়। যদিও এখন এটা অনেকটা কমে গেছে। তারপরও আমি বলব, তাদের সুবিধাগুলো দেখতে হবে। তাদের যেন কোনরকম হয়রানি করা না হয়। সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। এখন আমরা নিরাপত্তার বিষয়টাতে অনেক গুরুত্ব দিয়েছি। নিরাপত্তার যে নিয়মগুলো আছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, আমাদের সকল যাত্রীকে সেটা মেনে নিতে হবে। আমি স্পষ্ট বলতে চাই, এখানে সংসদ সদস্যরা আছেন, মন্ত্রীরা আছেন, বাহিনী প্রধান বা অন্য ঊর্ধ্বতন অফিসাররাও আছেন। বিদেশে গেলে যেভাবে আপনাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়, ঠিক সেইভাবে আমাদের বিমানবন্দরেও করতে হবে। এখানে কেউ কোন বাধা দিতে পারবেন না। আর যদি কেউ এক্ষেত্রে বাধা দেন, তাহলে ভবিষ্যতে তার বিমানে চড়াই বন্ধ হয়ে যাবে। আপনাদের মনে রাখতে হবে, অন্তত আমি সেটা করব। একটা কথা মনে রাখবেন, আমার তো আর কোন কাজ নাই। সারাদিন আমি দেশের কাজই করি। কোথায় কি হয় না হয়- টুকটাক খোঁজখবর নেয়ার চেষ্টা করি। কাজেই কেউ কোন রকম অনিয়ম ঘটাতে গেলে, সঙ্গে সঙ্গে আমার কাছে খবর চলে আসে। এটা সবাইকে মনে রাখতে হবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি তাকে সপরিবারে হত্যার পর প্রতিকূল অবস্থায় নিজের রাজনীতিতে আসার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আমার জীবন উৎসর্গ করেছি বাংলাদেশের জনগণের জন্য। এই দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন যেভাবে আমার পিতা চেয়েছিলেন আমি সেভাবে করতে চাই। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন- যেই দুর্নীতি করবে তাদের কিন্তু ছাড়া হবে না। সে যেই হোক না কেন।
বিমানের নানামুখী সমস্যার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমানে খালি টিকেট নাই বা এরকম বহু কিছু হতো। আর একসময় আমি ঠাট্টা করে বলতাম, স্বর্ণপ্রসবিনী বিমান হয়ে গেছে আমাদের। বিমানে শুধু সোনার বারই পাওয়া যায়। বলতাম ভালই তো, আমাদের স্বর্ণের রিজার্ভ বেড়ে যাচ্ছে। আর তো কিছু হচ্ছে না। এইগুলোও বন্ধ করতে হবে। কারণ বিমানের সুনাম আন্তর্জাতিকভাবে যেন বাড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিমানের যাত্রীসেবা আরও বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা অন্যান্য এয়ারলাইন্সের সঙ্গে কোড শেয়ারিং করতে পারি, তার মাধ্যমে যেন অনেক স্টেশনে আমাদের যাত্রী পাঠাতে পারি। সেটাও আমরা ভবিষ্যতে করব, এটা আমাদের চিন্তা রয়েছে। নতুন যোগ হওয়া ‘সোনার তরী’ ও ‘অচিন পাখি’ অন্তর্ভুক্ত করার প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অচিন পাখি’ নামটা অবশ্য আমার ছোট বোন রেহানার দেয়া। আমি ওকে জিজ্ঞেস করছিলাম কি নাম দেয়া যায়।
বর্তমানের সঙ্গে অতীতের তুলনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালের পূর্বে যদি ঢাকা এয়ারপোর্টের কথা কারো স্মরণ থাকে, একটু চিন্তা করে দেখবেন যে, সেটা কী ধরনের অতি সাধারণ একটা এয়ারপোর্ট! বোর্ডিং ব্রিজ বা কোন কিছুই ছিল না। একটা মাত্র সিঁড়ি। গাড়িতে নেমে ওখানে দোতলায় উঠে আবার নিচে নেমে হেঁটে প্লেনে উঠতে হতো। আর বিমান বহরে যেগুলো ছিল, একেবারে ঝরঝরে অবস্থা। আমি যখন প্লেনে যেতাম, ঝর ঝর করে পানি পড়ত। তোয়ালে টিস্যু দিয়ে বন্ধ করতে হতো। এন্টারটেইনমেন্টের কোন ব্যবস্থাই ছিল না। বিমানের এই দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থার জন্য ওই সময় দেশ পরিচালনাকারীদের দায়ী করে শেখ হাসিনা বলেন, দোষটা ছিল আমাদের এখানেই যারা রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্বে ছিল, তাদেরই।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আমাার পর গত ১০ বছরে বিমানবন্দরের উন্নয়নে নেয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের বিমানের নিজস্ব কোন কার্গো বিমান নেই। কাজেই কার্গো বিমান আমাদের প্রয়োজন। থার্ড টার্মিনালের সঙ্গে অত্যন্ত আধুনিক কার্গো ভিলেজ হবে। তাতে আমাদের মালামাল প্রেরণ করা, এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যবসা সেগুলোরও অনেক বেশি সুবিধা হবে। ভবিষ্যতে আমরা দুটি কার্গো বিমান ক্রয় করব। কারণ কার্গো ছাড়া বিমান লাভজনক হবে না। দেশের আঞ্চলিক বিমানবন্দরগুলোকে নতুন করে চালু করে উন্নত করার বিভিন্ন পদক্ষেপও তুলে ধরেন তিনি। এ সময় কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসাবে উন্নীত করা হচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন-প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্য, পাশ্চাত্য থেকে প্রাচ্যে যত প্লেন যাতায়াত করবে, তাদের একটা হাব হতে পারে কক্সবাজার। সেই কাজও শুরু করা হয়েছে।
বিমানের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য তিনটি উড়োজাহাজ আসছে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের যারা বিদেশে কাজ করে, যাদের অর্থে আমরা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করি আমাদের রিজার্ভ নিশ্চিত হয়, তারা যখন একটা কর্মস্থল থেকে ফেরে নানাভাবে তাদের কিন্তু অনেক সময় হয়রানি করা হয়। এখন এটা অনেকটা কমে গেছে। তারপরও আমি বলব, আমাদের দেশের যারা বিদেশে যায়, আমরা সেখানে জনশক্তি রফতানিও করি এবং সেখান থেকে বিরাট অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রাও আমরা অর্জন করি। তাদের সুবিধাগুলো দেখতে হবে। তাদের যেন কোন রকম হয়রানি এখানে করা না হয়। বিমান সেবার মান বাড়াতে মোবাইল এ্যাপ উদ্বোধন করার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যে এ্যাপটা উদ্বোধন করলাম, এখন আপনি অনলাইনে বা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে টিকেট কেনা থেকে শুরু করে সবকিছুই করতে পারবেন। অর্থাৎ আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবস্থা যাত্রীদের সেবার জন্য করে দিচ্ছি।
অনুষ্ঠানে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, বিমান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র আ ম ওবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরী, সিনিয়র সচিব মহিবুল হক, জাপানের রাষ্ট্রদূত নোয়াকি ইতো, বিমানের চেয়ারম্যান ইনামুল বারী, বেবিচকের সাবেক চেয়ারম্যান এয়ারমার্শাল নাইম হাসান, বতর্মান চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান, প্রধান প্রকৌশলী সুধেন্দু বিকাশ গোস্বামী, বিমানের সাবেক এমডি মোঃ মোকাব্বের হোসেন ও বিমানের সিবিএ সভাপতি মশিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মন্তাছার রহমান উপস্থিত ছিলেন।