মৌলভীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
‘চায়ের দেশ’ বলে পরিচিত শ্রীমঙ্গলে জেঁকে বসতে শুরু করেছে শীত। প্রায় দিনই সন্ধ্যার পর এখানে অনুভূত হচ্ছে কনকনে ঠাণ্ডা। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সে শীতের তীব্রতা। পরদিন সকালে সুর্য উত্তাপ ছড়ানোর আগ পর্যন্ত প্রকৃতিকে জড়িয়ে রাখছে কুয়াশার হিমেল চাদর।
মূলত পরিবেশগত কারণেই দেশের অন্য অঞ্চলের চেয়ে শ্রীমঙ্গলে শীতের প্রকোপ বেশি। বুধবারও (৪ ডিসেম্বর) সারাদেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৪ পাওয়া যায় শ্রীমঙ্গলে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি) জানায়, মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) শ্রীমঙ্গলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। এখন পর্যন্ত চলতি শীত মৌসুমে শ্রীমঙ্গলে ৭ দিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
গত ১৯ নভেম্বর ছিল ১৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২১ নভেম্বর ১৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২৩ নভেম্বর ছিল ১৪ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২৫ নভেম্বর ছিল ১৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ২৬ নভেম্বর ১৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শীত ঘিরে ধীরে ধীরে বদলে যেতে শুরু করেছে শ্রীমঙ্গলের প্রাকৃতিক রূপ। সকাল-সন্ধ্যা সারি সারি চা বাগান আর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা ছায়াবৃক্ষগুলো ঢাকা পড়ে যাচ্ছে কুয়াশায়। আর তাতে রহস্যের মতো সুন্দর হয়ে উঠছে প্রকৃতি। শীতের শহরের অপরূপ এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে এরই মধ্যে শ্রীমঙ্গলে বাড়তে শুরু করেছে দেশি-বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা।
পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধ থেকে ডানায় ভর দিয়ে পরিযায়ী পাখিরাও এসে ভিড়েছে প্রসিদ্ধ বাইক্কা বিলে। তাদের জলকেলি আর কলকাকলিতে মুখর এ জলাভূমি।
বিএমডির আবহাওয়াবিদ আশরাফুল ইসলাম জানান, শুধু আজ নয় গতকাল মঙ্গলবারও (৩ ডিসেম্বর) সারা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল শ্রীমঙ্গলে। এর আগের দিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল কুড়িগ্রামের রাজারহাটে। তার আগের দিন ১ ডিসেম্বর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পাওয়া যায় পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ায়।
পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, শীত মৌসুমে বেশির ভাগ সময়ই শ্রীমঙ্গলে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকে। সারা দেশেই ধীরে ধীরে তাপমাত্রা কমতে শুরু করবে।
আর কয়েক দিনের মধ্যেই শ্রীমঙ্গলে তাপমাত্রা আরও নিচে নেমে হাড়কাঁপানো শীতের প্রকোপ বাড়বে বলে জানান শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মো. জাহেদুল ইসলাম মাসুম। সাধারণত ৮ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার সঙ্গে কনকনে ঠাণ্ডা থাকলে তাকে শৈত্যপ্রবাহ বলে। চলতি মাসের মাঝামাঝি থেকে শেষের দিকে দুটি শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
এদিকে শীতমৌসুমে দুর্ভোগের আশঙ্কায় চা বাগান এলাকাসহ গ্রামাঞ্চলের নিম্ন আয়ের হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে নানান উদ্বেগ।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান বলেন, ইতোমধ্যেই উপজেলার শীতার্ত মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রায় পাঁচ হাজার কম্বল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। উপজেলার নয় ইউনিয়নের ছিন্নমূল মানুষের মাঝে সেগুলো বিতরণ করা শুরু হয়েছে।