পাট শিল্পকে রক্ষা করুন

30

বাংলাদেশের সোনালি আঁশ পাট নতুন আশাবাদের জন্ম দিয়েছে। ‘প্রাকৃতিক উদ্ভিজ্জ তন্তু ও টেকসই উন্নয়ন’ শিরোনামে পাটসহ প্রাকৃতিক তন্তু ব্যবহার বিষয়ক একটি নতুন প্রস্তাব গ্রহণ করেছে জাতিসংঘ। প্রস্তাবটি আগামী মাসে সাধারণ পরিষদের প্ল্যানারিতে উপস্থাপন করা হবে। এখন থেকে দ্বি-বার্ষিকভাবে এ প্রস্তাব নিয়ে জাতিসংঘে আলোচনা হবে। বাংলাদেশ এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসে প্রস্তাবটি উত্থাপন করে। তিন মাসের টানা আলোচনায় পক্ষে-বিপক্ষে মতামত বিবেচনায় নিয়ে শেষে বাংলাদেশ সব সদস্য রাষ্ট্রকে এই প্রস্তাবের পক্ষে আনতে সক্ষম হয়।
পাট একসময় ছিল আমাদের প্রধান অর্থকরী ফসল। নানা অবহেলায় গুরুত্ব হারিয়ে ফেলা পাটকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য সরকার সম্প্রতি গ্রহণ করেছে বিভিন্ন পদক্ষেপ। পাট ও পাটজাত পণ্য উৎপাদন ও প্রসার, গবেষণা ও পাট চাষে উদ্বুদ্ধকরণে পাট আইন ২০১৭ জাতীয় সংসদে অনুমোদিত হয়েছে। পাট চাষিদের সহায়তা করার জন্য একটি তহবিল গঠন করা হয়েছে। আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে পাটের বীজ উৎপাদনে ভর্তুকি প্রদান করা হচ্ছে। পরিবেশ রক্ষায় ১৭টি পণ্য বিক্রয়, বিতরণ ও সরবরাহে বাধ্যতামূলক পাটজাত মোড়ক ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন ২০১০’ প্রণীত হয়েছে। পাটকে বিশ্ববাজারে তুলে ধরতে জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারে ১৩৫ ধরনের বহুমুখী পাটপণ্যের স্থায়ী প্রদর্শনী ও বিক্রয়কেন্দ্র চালু হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন গতির সঞ্চার করতে পারে সোনালি আঁশ পাট। পাটকাঠিও নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
পাটকাঠি থেকে উচ্চমূল্যের অ্যাকটিভেটেড চারকোল উৎপাদন করে বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। প্রতিবছর দেশে উৎপাদিত প্রায় ৩০ লাখ টন পাটকাঠির অর্ধেকও যদি সঠিকভাবে চারকোল উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়, তাহলে তা থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। অন্যদিকে পাট দিয়ে তৈরি ২৮৫ ধরনের পণ্য দেশে ও বিদেশে বাজারজাত করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের পাট এখন পশ্চিমা বিশ্বের নানা শিল্পে ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমানে বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করছেন পাটের জাতের মধ্যে এমন বৈশিষ্ট্যগুলো যুক্ত করতে, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে যার চাহিদা রয়েছে। পাটের জীবনরহস্য উন্মোচনের মাধ্যমে চাহিদামাফিক পাটের জাত উদ্ভাবন এবং পাট ও ছত্রাকের সাতটি জিনের পেটেন্ট কাজে লাগিয়ে শিল্পের উপযোগী পাটপণ্য উৎপাদন করতে পারলে তা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট উলের বিকল্প হিসেবে ব্যবহারের লক্ষ্যে পাট সুতাকে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে পরিবর্তন করে পাট উল প্রস্তুত করেছে। তুলা, পশম এবং কৃত্রিম আঁশের সঙ্গে পাটের আঁশ ব্যবহার করে নভোটেক্স কাপড় তৈরি করা হয়েছে। পাট থেকে উদ্ভাবন করা মাইক্রোক্রিস্টালাইন সেলুলোজ ওষুধশিল্পে ব্যবহার করা হচ্ছে। এখন আন্তর্জাতিক বাজারে এই পণ্য বিপণনের সুযোগ দরকার।