কাজিরবাজার ডেস্ক :
এক সপ্তাহেও সারাদেশে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়নি। নতুন সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ বাস্তবায়ন শুরুর পর থেকেই বিরোধিতা করে আসছেন পরিবহন শ্রমিকরা। যার প্রতিবাদে কৌশলে গাড়ি চলাচল বন্ধ রেখেছেন তারা। তবে পণ্যবাহী পরিবহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। যাত্রীবাহী বাস চলাচল কম। রাজধানী ঢাকায়ও শনিবার অন্য দিনের তুলনায় বাস চলাচল কম দেখা গেছে।
এদিকে নতুন সড়ক আইন নিয়ে দেশের সকল জেলার শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে দুই দিনের বৈঠক শেষে শনিবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হওয়ার কথা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেতাদের। বৈঠকে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে মন্ত্রীর কাছে বিভিন্ন দাবিদাওয়া তুলে ধরা হবে। ধানমন্ডিতে মন্ত্রীর বাস ভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।
বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে পরবর্তী করণীয় তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছেন ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি ও সাবেক নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। সড়ক আইনের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে দেশজুড়ে ধর্মঘট পালন করা হয়। ঐদিন রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে পরিষদের নেতারা নয়দফা তুলে ধরেন। এরমধ্যে দুটি বিষয়ে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত জানানো হয় সরকারের পক্ষ থেকে। বাদবাকি বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার জন্য সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এরমধ্য দিয়ে পণ্যবাহী পরিবহন শ্রমিকদের সমস্যা আপাতত শেষ হলেও যাত্রীবাহী পরিবহন শ্রমিকরা অনেকটাই কঠোর অবস্থানে রয়েছেন।
সন্ধ্যার পর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক মোখলেছুর রহমান বলেন, শনিবার রাত নয়টার মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এতে ফেডারেশনসহ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারাও উপস্থিত থাকবেন।
সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে শাজাহান খানের সঙ্গে শ্রমিক ফেডারেশনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত থাকবেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এ বৈঠকে শ্রমিকদের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন শাজাহান খান। শুক্রবার রাতে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে দুই দিনের বৈঠক শেষে শাজাহান খান বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত হয়েছে দুর্ঘটনার তদন্ত বুয়েটের এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এআরআই) ও পুলিশের যৌথ উদ্যোগে করতে হবে। তাহলে কে দায়ী বেরিয়ে আসবে। মামলাগুলো বিচার-বিশ্লেষণ করে চার্জশীট দিতে হবে। সেখানে পথচারী, যাত্রী, রাস্তা, ড্রাইভার নাকি মালিকের পুরনো গাড়ির কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে সেটি দেখতে হবে। নুতন আইনের কোন্ কোন্ ধারা পরিবর্তন চায় ফেডারেশন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শাজাহান খান বলেন, আমরা এখনও ধারা নির্ধারণ করিনি। আইনের কোন্ কোন্ ধারায় পরিবর্তন আনা উচিত তা আমরা কালকেই (শনিবার) বসে নির্ধারণ করব। সড়ক পরিবহন সেক্টরে অন্যান্য যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলোও আমরা তুলে ধরব। সেই দাবিনামা আমরা সরকারের কাছে পেশ করব।
তিনি আরও বলেন, ২৪ নবেম্ব^র সড়ক পরিবহন টাস্কফোর্সের বৈঠক রয়েছে। এর আগে আমরা যে ১১১টি সুপারিশ নির্ধারণ করেছি সেই সুপারিশ বাস্তবায়ন নিয়ে সেখানে আলোচনা হবে। সেখানেও আমরা বিষয়গুলো তুলে ধরব। আমি বিশ্বাস করি, যে সুপারিশ করা হয়েছে তা যদি বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা কাক্সিক্ষত পর্যায়ে নেমে আসবে।
শাজাহান খান বলেন, আইনটি করার আগে আমরা বেশ কিছু প্রস্তাব করেছিলাম। কিন্তু তা গ্রহণ করা হয়নি। এ বিষয়ে স^রাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আমরা উনার সঙ্গে বৈঠক করে সেখানে আমাদের আলোচনাগুলো তুলে ধরব। কীভাবে সমস্যাগুলো সমাধান করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করব। পরবর্তীতে সংবাদ সম্মেলন করে আমাদের কর্মসূচী জানাব।
ট্রাক-শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করেছিল কি ফেডারেশনের নির্দেশে এমন প্রশ্নের জবাবে শাজাহান খান বলেন, কেউ কেউ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে। তেজগাঁওয়ের যে পণ্যপরিবহন সমিতির সেটা আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। ২৩৩টি সংগঠন আমাদের ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত। তার মধ্যে দেড় শতাধিক সংগঠনের প্রতিনিধি আজকের শুক্রবারের সভায় যোগ দিয়েছেন। এ ছাড়া যেসব শ্রমিক আন্দোলন করতে চেয়েছিল বলতে গেলে আমাদের হস্তক্ষেপে সেটি বন্ধ হয়েছে।