কাজিরবাজার ডেস্ক :
শীর্ষ নেতাদের কয়েকজনের অপকর্মে ইমেজ সংকটে পড়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের দায়িত্বে কারা আসছেন তাদের নিয়ে বেশ আগে থেকে জল্পনা-কল্পনা আছে। তালিকাটি ছোট হয়ে তা এখন রূপ নিয়েছে গুঞ্জনে। এরই মধ্যে সম্ভাব্য কয়েকজনের নাম এসেছে গণমাধ্যমে। তবে রাজনৈতিক অঙ্গনের জল্পনা-কল্পনা, নেতাকর্মীদের ধারণা, কিংবা গণমাধ্যমের গুঞ্জন- সবকিছু হার মানতে পারে যুবলীগের নেতৃত্ব নির্বাচনের চমকে।
দীর্ঘ সাত বছর পর আজ শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হতে যাওয়া সংগঠনটির সম্মেলন ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। সম্মেলন সামনে রেখে রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কের পাশে বিভিন্ন দেয়ালে আঁকা স্লোগানে বলা হচ্ছে, নতুন যুবলীগের যাত্রা শুরু হোক জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে যুবসমাজের মাধ্যমে দেশ গড়ার জন্য আওয়ামী যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শেখ ফজলুল হক মনি। সাম্প্রতিক সময়ে জৌলুশপূর্ণ এই সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে ক্যাসিনো চালানো, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, অস্ত্র প্রদর্শনসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। ইতিমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেফতার, কাউকে কাউকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার এমনকি খোদ সংগঠনের চেয়ারম্যানসহ আরও কয়েকজনকে যুবলীগের সব ধরনের কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে সংগঠনের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে তৎপর দলটির নেতারা। সপ্তম জাতীয় কংগ্রেসের মাধ্যমে সংগঠনটিতে ক্লিন ইমেজের নেতা উপহার দিতে তারা সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
দলের একটি সূত্রমতে, যুবলীগের বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে সংগঠনটি নেতাদের ওপর ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত খোদ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তাই আগামী সম্মেলনে নতুন, ত্যাগী ও গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচন করতে চান তিনি।
ইতোমধ্যে যারা সুবিধাবাদী এবং বিভিন্ন অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জাড়িত তাদের তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে। একই সঙ্গে যোগ্য নেতাদের একটি তালিকাও রয়েছে শেখ হাসিনার হাতে। তিনি নিজেই এবার যুবলীগের কমিটি দিতে চান। তাই প্রতিবারের মতো এবার পদ পাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত তদবির করার সাহস দেখাচ্ছেন না কেউ।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী এবার এমন একজনের হাতে নেতৃত্ব দিতে চান যার হাতে যুবলীগ ফিরে পাবে তার হারানো গৌরব। তিনি নিজে বিভিন্ন মাধ্যমে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। পরিচ্ছন্ন ইমেজ, দক্ষ সংগঠক, ত্যাগী এবং রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড আছে এমন কাউকে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের সম্পর্কে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমেও খোঁজ-খবর নেয়া হয়েছে।
এর মধ্যেই প্রভাবশালী নেতাদের কেউ কেউ যার যার যার অবস্থান থেকে প্রার্থিতা জানান দিতে চেষ্টা করছেন।
যুবলীগের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক পদে অনেকেই আলোচনায় আছেন। তাদের মধ্যে সভাপতি হিসেবে সবার আগে আছে যুবলীগের প্রতিষ্ঠা শেখ মনির দুই ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশ ও শেখ ফজলে নূর তাপসের নাম। এ ছাড়া জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর আলম চৌধুরী, যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজম, আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর ভাই খোকন সেরনিয়াবাতের নামও এসেছে আলোচনায়।
আলোচনায় আছেন যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের দুই ছেলে শেখ ফজলে ফাহিম ও শেখ ফজলে নাঈম।
আওয়ামী লীগের একটি সূত্রে জানা গেছে, দলের হাইকমান্ড থেকে শেখ পরশ, শেখ তাপস ও লিটন চৌধুরীকে সংগঠনটির হাল ধরার জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু টালমাটাল পরিস্থিতিতে তাদের কেউ দায়িত্ব নিতে আগ্রহী নন।
তবে আরেকটি সূত্রমতে, শেখ মণির বড় ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশ এখন দায়িত্ব নিতে আগ্রহী। পেশায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক পরশ আগ্রহী থাকলেই তাকেই যুবলীগের কাণ্ডারি করা হবে।
অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় শীর্ষে রয়েছেন যুবলীগের বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য বেলাল হোসেন, সুব্রত পাল, আতাউর রহমান আতা, মোতাহের হোসেন সাজু। এ ছাড়া আসাদুল হক আসাদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ মহি, বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মনজুর আলম শাহীন, প্রচার সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ বাবলু, সাবেক উপ-দপ্তর সম্পাদক কাজী নাছিম আল মোমিন রূপকের নামও রয়েছে।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে আলোচনায় আছেন- ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বাহাদুর বেপারি, ইসহাক আলী খান পান্না, মাহমুদ হাসান রিপন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু, মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন।
যুবলীগের কর্মীদের ভাষ্যমতে, যুবলীগের ঐতিহ্য আছে। কিন্তু কিছু দুষ্ট মানুষ সংগঠনকে কলুষিত করেছে। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি দেখভাল করছেন, তাই তারা আশা করছেন, এবার এমন এক যুবকের হাতে দলের দায়িত্ব যাবে, যিনি হবেন সত্যিকারের যুবক। যার নেতৃত্বে যুবলীগ ফিরে পাবে হারানো গৌরব।
