সিন্টু রঞ্জন চন্দ :
সম্মেলক আবৃত্তি, নৃত্য, সঙ্গীত ও আলোচনাসহ বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্যে দিয়ে সিলেটে রবীন্দ্রনাথ: শতবর্ষ স্মরণোৎসব উদযাপিত হয়েছে। গত ৫ নভেম্বর থেকে রবীন্দ্র স্মরণোৎসব (১৯১৯-২০১৯)এর চারদিনব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা শতবর্ষ এই স্মরণোৎসব শুরু হয়। তবে মূলপর্ব শুরু হয় গত বৃহস্পতিবার থেকে। রবীন্দ্রনাথকে মন ও মননে ধারণের আবাহনে গতকাল শুক্রবার রাতে শেষ হয় এই স্মরণোৎসবের। সিলেট নগরীর চাঁদনীঘাটস্থ সুরমা নদীর তীরে, রিকাবীবাজার সিলেট জেলা স্টেডিয়াম ও নজরুল একাডেমী, সিংহবাড়ী, মাছিমপুর মনিপুরীপাড়াসহ ৫টি স্থানে জাকজমকপূর্ণভাবে নানা অনুষ্ঠান মালার মধ্যে দিয়ে রবীন্দ্রনাথের এ স্মরণোৎসব সফলভাবে পালন করা হয়।
গতকাল শুক্রবার বিকেল ৪টায় সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় রবীন্দ্র স্মরণোৎসবের শেষ দিনের অনুষ্ঠানমালা। এরপর ছিল একক ও সম্মেলক আবৃত্তি, নৃত্য, সঙ্গীত ও আলোচনা প্রভৃতি। আলোচনা পর্বে রবীন্দ্র স্মরণোৎসব পর্ষদের আহবায়ক ও সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, সিলেটের সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীসহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ প্রমুখ।
বাঙালির দ্রোহে, নান্দনিক উচ্ছ্বাসে রবীন্দ্রনাথ অপরিহার্য মানব। শ্রীহট্ট তথা সিলেটের সাথে রবীন্দ্রনাথ ও জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির সম্পর্কের গভীরতা অতলস্পর্শী। শতবর্ষ পূর্বে বিশ্বকবি এসেছিলেন শ্রীভূমে। শতাব্দির কালপটে দাঁড়িয়ে তাই আয়োজন করা হয় ‘সিলেটে রবীন্দ্রনাথ: শতবর্ষ স্মরণোৎসব’। এই স্মরণোৎসবের সমাপনীতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সিলেটে প্রায় তিন বছর আগে বেঙ্গল উৎসব হয়েছিল। এবার রবীন্দ্রনাথ স্মরণোৎসব হলো, যা সিলেটের সর্ববৃহৎ উৎসব। সিলেট সবসময়ই আলাদা। শতবর্ষ পূর্বে রবীন্দ্রনাথ যখন সিলেটে আসেন, তখন তাকে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান সবাই স্বাগত জানায়। আর আজ শতবর্ষ পরে হিন্দু, মুসলিম সবাই একাত্ম হয়ে রবীন্দ্র স্মরণোৎসবকে সফল করেছেন। সিলেটে সকল ধর্মের মানুষের সম্প্রীতির কথা বলতে গিয়ে মন্ত্রী কিছুটা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
এদিকে শুক্রবার রাতে সমাপনী অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্য দিতে পারেননি তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন তাঁর বক্তব্যের শেষে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জরুরী প্রোপ্রাম থাকায় ভিডিও কনফারেন্সে বক্তৃতা দিতে পারেননি। তবে তিনি সফলভাবে অনুষ্ঠান সম্পন্নের জন্য সিলেটবাসীসহ আয়োজক বৃন্দকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, সিলেটে একটি স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক কেন্দ্র করার দাবি ওঠেছে। এতে আমাদের দ্বিমত নেই। সিলেটের মেয়র যদি একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে পাঠান, তবে তা অনুমোদন পেতে পারে। যেহেতু সিলেট থেকে পরিকল্পনামন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আছেন, তারা এ বিষয়টি নিশ্চয়ই দেখবেন।
রবীন্দ্র স্মরণোৎসবের সমাপনীতে সঙ্গীত পরিবেশন করেন জেরওয়ানা চৌধুরী বন্যা, লাইসা আহমেদ লিসা, অনুপম কুমার পাল, অসীম দত্ত, ভারতের পদ্মশ্রী পূর্ণদাস বাউল, অগ্নিভ বন্দোপ্যাধ্যায় প্রমুখ।