বর্ষীয়ান রাজনীতিক জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদল আর নেই, মরদেহ আসছে আজ

7

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বর্ষীয়ান রাজনীতিক মুক্তিযোদ্ধা ও জাসদ (একাংশ) নেতা মইন উদ্দীন খান বাদল আর নেই। ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি … রাজিউন)। ৬৭ বছর বছর বয়সী এই সংসদ সদস্য দীর্ঘদিন হৃদযন্ত্রের জটিলতায়ও ভুগছিলেন। বেঙ্গালুরুতে নারায়ণ ইনস্টিটিউট অব কার্ডিয়াক সায়েন্সেস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার ভোর ৫টার দিকে তার মৃত্যু হয় বলে তার ছোট ভাই মনির উদ্দীন খান জানান। আজ শুক্রবার তাঁর মরদেহ দেশে আসার কথা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে বাদলের মৃত্যুর খবর সারাদেশে ছড়িয়ে যায়। রাজনৈতিক অঙ্গনে নেমে আসে শোকের ছায়া। তাঁর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়াও জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ, দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী, সতীর্থ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিকসহ পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকে শোক জানানো হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে নিয়ে অনেকে শোক প্রকাশ করে আবেকঘন স্ট্যাটাস দেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, তিন পুত্র ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।
বছর দুই আগে ব্রেইন স্ট্রোক হওয়ার পর থেকেই অসুস্থ ছিলেন বাংলাদেশ জাসদের কার্যকরী পরিষদের সভাপতি বাদল। ছোট ভাই মনির জানান, দুই সপ্তাহ আগে নিয়মিত চেকআপের জন্য ভারতে গিয়েছিলেন বাদল। সেখানে প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ দেবী শেঠীর তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মইন উদ্দীন খান বাদল। তার বাবা আহমদ উল্লাহ খান ও মা যতুমা খাতুন। ষাটের দশকে ছাত্রলীগের ‘নিউক্লিয়াসে’ যুক্ত বাদল একাত্তরে ভারতে প্রশিক্ষণ নেন এবং পরে যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে। চট্টগ্রাম বন্দরে অস্ত্র বোঝাই জাহাজ সোয়াত থেকে অস্ত্র খালাস প্রতিরোধের অন্যতম নেতৃত্বদাতা ছিলেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধের পর সমাজতান্ত্রিক রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন বাদল। জাসদ হয়ে বাসদ এবং পরে আবারও জাসদে ফেরেন। এরশাদের সামরিক শাসনের সময় তাকে কারাগারে যেতে হয়।
২০১৬ সালের ১২ মার্চ হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাসদের জাতীয় কাউন্সিলে আবার দুই ভাগ হয় দলটি। হাসানুল হক ইনু ও শিরীন আখতার নেতৃত্বাধীন অংশটি ইসির স্বীকৃতি পাওয়ার পর শরীফ নুরুল আম্বিয়া ও সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান নেতৃত্বাধীন অংশটি বাংলাদেশ জাসদ নামে আলাদা দলের স্বীকৃতি চায়। তবে ইসি তাদের নিবন্ধন দেয়নি। এই অংশের কার্যকরী সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন মইন উদ্দীন খান বাদল। মূলত নেতৃত্ব নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সর্বশেষ ইনুর জাসদ ছেড়ে আলাদা প্লাটফরম গড়ে তোলেন তিনি।
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী-চান্দগাঁও আসন থেকে ২০০৮ সালে মহাজোটের মনোনয়ন পান শরিক দল জাসদের নেতা বাদল। নৌকা প্রতীকে তার বড় জয়ের মধ্য দিয়ে ওই আসনে বিএনপির দীর্ঘদিনের আধিপত্যের অবসান ঘটে।
এরপর ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে আরও দুই বার তিনি আসনের এমপি নির্বাচিত হয়ে সংসদে যান। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয়ে দৃপ্ত বক্তব্য দেয়া বাদল সমাদৃত ছিলেন একজন দক্ষ পার্লামেন্টারিয়ান। উগ্রসাম্প্রদায়িক মৌলবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্চার ছিলেন তিনি। কথা বলেছেন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে। এছাড়া দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট যে কোন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন জনপ্রিয় এই নেতা। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দল গঠনেও তার ভূমিকা ছিল।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী বাদলের মরদেহ দেশে আনা এবং দাফনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হলে পরে তা জানিয়ে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন মনির। চট্টগ্রাম ৮ (চাঁদগাও-বোয়ালখালী) আসনের তিনবারের সাংসদ বাদল বর্তমান একাদশ জাতীয় সংসদের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।
রাষ্ট্রপতির শোক
রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বিশিষ্ট এই রাজনীতিবিদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এক শোকবার্তায় বাদলের মৃত্যুতে শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন। রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক ক্ষেত্রে মইন উদ্দীন খান বাদলের অবদানের কথা স্মরণ করে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানান। রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে তার (বাদল) অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। রাষ্ট্রপতি মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, বিভিন্ন স্থায়ী কমিটিতে মইন উদ্দীন খান তার মতামত দিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
মরদেহ আসবে আজ : চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য মইন উদ্দীন খান বাদলের মরদেহ দেশে আসবে আজ শুক্রবার। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তাঁর ছোট ভাই মনির উদ্দিন আহমদ খান। বাদলের গ্রামের বাড়ি সারোয়াতলীর খান মহলে সুনসান নীরবতা। খান মহলের সামনে চলছে শেষবারের মতো প্রিয়মুখ বাদলকে শ্রদ্ধার সঙ্গে বিদায় জানানোর প্রস্তুতি। খান মহলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছেন তাঁর ভাই বোন স্বজনরা। মইন উদ্দীন খান বাদলের বাবা আহমদ উল্লাহ খান ও মা যতুমা খাতুন। ৫ ভাই ও ৩ বোনের মাঝে বাদল তৃতীয়।
সংসদ সদস্য বাদলের ভাই মনির উদ্দিন খান জানান, বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান পিপলস ত্রিদেশীয় কমিটির সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে কমিটি সভায় যোগ দিতে তিনি গত ১৮ অক্টোবর কলকাতা যান। এরপর ২৫ অক্টোবর বেঙ্গালুরুর নারায়ণা হৃদয়ালয়ে চেকআপ করাতে যান। সেখানে তাঁর এনজিওগ্রাম করা হয়। পরে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো ব্রেন স্টোক করেন এবং তাঁর নিউমোনিয়া ধরা পড়ে। তখনই তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছিল।