কাজিরবাজার ডেস্ক :
ফ্লাইট থেকে নেমেই ফুপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ইমিগ্রেশনের দিকে ছুটে যান আকমত আলী। এখান থেকে দ্রুত কাজ সেরে গ্রীণ চ্যানেল হয়ে বাইরে আসার সময়েও তাকে কাঁদতে দেখা যায়। অথচ সবকিছু বিক্রি করে সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে মাত্র পাঁচ মাস আগে বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে সৌদি আরব গিয়েছিলেন কুড়িগ্রামের আকমত আলী। তার সে স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্ন। তার অভিযোগ, আকামার মেয়াদ (বৈধ অনুমোদন) আরও ১০ মাস থাকলেও তাকে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তার সঙ্গে এমন আরও ২০০ বাংলাদেশী শুক্রবার গভীররাতে সৌদি আরব থেকে ঢাকায় ফিরেন। তাদের জোরপূর্বক দেশে ফেরত পাঠানোর অভিযোগ তাদের। শুধু চলতি বছরেই এ পর্যন্ত ১৬ হাজারের বেশি বাংলাদেশী সৌদি আরব থেকে ফেরত আসে। আরও প্রায় চারশত প্রবাসীকে সৌদি থেকে দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
শুক্রবার রাতে বিমানবন্দরে গিয়ে দেখা যায়-বিমানবন্দরে তাদের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কোন প্রতিনিধিকে রিসিভ করেনি। প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের লোকজনকে দায়সারা গোছের কিছু কাজ করতে দেখা গেছে। আর শুধু খাবার-পানিসহ নিরাপদে বাড়ি পৌঁছানোর জন্য সহায়তা করেছে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম। ব্র্যাকের এই মাইগ্রেশন ইউনিটের মতে- চলতি মাসেই ওয়েজ আর্নাস কল্যাণ বোর্ডের সহযোগিতায় ৮০৪ জনকে ব্র্যাক সহযোগিতা দিয়েছে। এরমধ্যে শুক্রবার রাতেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক কর্মী এলেন একত্রে। তারা তাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন বিমানবন্দরেই। এ সময় গোপালগঞ্জের ছেলে সম্রাট শেখ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আট মাসের আকামা ছিল আমার। নামাজ পড়ে বের হতেই পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করে, কোন কিছুই না দেখে দেশে পাঠিয়ে দেয়। আমার মতো আরও ক’জনকে একই কায়দায় পুলিশ আটক করে জোরপূর্বক দেশে পাঠিয়েছে।
একইভাবে ফেরত আসা নারায়ণগঞ্জের সাইফুল ইসলাম বলেন, আকামার মেয়াদ দেখানোর পরেও আমাকে দেশে পাঠানো হয়েছে। সবেমাত্র ৯ মাস আগে সৌদি গিয়েছিলেন, আকামার মেয়াদও ছিল ছয় মাস। এটা কল্পনাও করা যায় না এভাবে বৈধ শ্রমিকদের জোরপূর্বক দেশে পাঠানো হবে।
আব্দুল্লাহ নামের চট্টগ্রামের বাসিন্দা জানিয়েছেন, আকামা তৈরির জন্য আট হাজার রিয়াল জমা দিয়েছেন কফিলকে। কিন্তু পুলিশ গ্রেফতারের পর কফিল কোন দায়িত্ব নেয়নি। ফেরত আসা কর্মীরা সরকারকে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। আর কাউকে যেন তাদের মতো পরিস্থিতির শিকার হয়ে দেশে ফিরতে বাধ্য করা না হয়, সে দাবিও করেন।
এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের একজন কর্মকর্তা জানান, যেভাবে যে ধরনের অভিযোগ দিয়ে প্রায়ই সৌদি আরব থেকে প্রবাসীদের দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে তা কোথায় গিয়ে থামে এটাই এখন দেখার বিষয়। এ বিষয়ে ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচীর প্রধান শরিফুল হাসান গণমাধ্যমকমীদের বলেন, ফেরত আসা কর্মীরা যেসব বর্ণনা দিচ্ছেন সেগুলো মর্মান্তিক। সাধারণ ফ্রি ভিসার নামে গিয়ে এক নিয়োগকর্তার বদলে আরেক জায়গায় কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়লে অনেক লোক ফেরত আসত। কিন্তু এবার অনেকেই বলছেন, তাদের আকামা থাকার পরেও ফেরত পাঠানো হচ্ছে। বিশেষ করে যাওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই অনেককে ফিরতে হচ্ছে, যারা খরচের টাকার কিছুই তুলতে পারেননি। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে এই দায় নিতে হবে। পাশাপাশি নতুন করে কেউ যেন গিয়ে এমন বিপদে না পড়ে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
এদিকে চলতি সপ্তাহে আরও দু’শতাধিক প্রবাসীকে দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন, সৌদি আরব প্রবাসী সাংবাদিক আবুল বশির।