এক নজরে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সরকারের অর্জন

42

কাজিরবাজার ডেস্ক :
মন্ত্রী সভার বৈঠকে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর ২০১৮-১৯ অর্থবছরের কার্যাবলি সম্পর্কিত বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়েছে। এ প্রতিবেদনে সরকারের বিভিন্ন খাতের অগ্রগতি ও অর্জনের তথ্য উঠে এসেছে।
সোমবার (২১ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রী সভার নিয়মিত বৈঠকে এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রী পরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
প্রতিবদনে বলা হয়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় এক হাজার ৭৫১ মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে এক হাজার ৯০৯ ডলারে উন্নীত হয়েছে। রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ দুই কোটি ৫১ লাখ ৮৩৬ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ২৯ শতাংশ।
পণ্য ও সেবা খাতে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ ৩ দশমিক ৮৮৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ৫০ দশমিক ৭৩ শতাংশ বেশি।
২০১৮-১৯ অর্থবছরের বেপজায় বিনিয়োগ এসেছে ৩৩৩ দশমিক ৩২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বেপজাধীন আটটি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার (ইপিজেড) ৪৫৮টি চালু শিল্প প্রতিষ্ঠানে ১৯ হাজার ৫৪৮ জন বাংলাদেশি নাগরিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো বৈধ পথে প্রবাসী আয়ের (রেমিট্যান্স) পরিমাণ ১৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ছয় লাখ ৫৯ হাজার ১২৯ জন বাংলাদেশি কর্মী বৈদেশিক কর্মসংস্থান লাভ করে।
প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট ২৩টি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সব সভায় ৩১৮টি প্রকল্প অনুমোদিত হয়। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে এক হাজার ৯৭৮টি প্রকল্পে ব্যয় হয় এক লাখ ৬৬ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা, যা বরাদ্দের ৯৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) সমাপ্তিযোগ্য ৩৪৫টি প্রকল্পের মধ্যে ৩১৭টি প্রকল্প সমাপ্ত হয়।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে দারিদ্র্যের হার ২৩ দশমিক ১ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২১ দশমিক ৮ শতাংশে এবং চরম দারিদ্র্যের হার ১২ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমে ১১ দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
কৃষি উৎপাদনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সার, বিদ্যুৎ, ইক্ষু ইত্যাদি খাতে ৭৬৯৩ দশমিক ৪৭৮৪ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়। ২০১৮ সালের কোরবানি পশুর চাহিদা শত ভাগ দেশীয় গরুর মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সর্বমোট ১৫ দশমিক ২২৪ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য অভ্যন্তরীণ উৎস হতে সংগৃহীত হয়। দেশের সবচেয়ে বড় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে ১০ টাকা কেজি দরে মোট ৫০ লাখ পরিবারের মধ্যে ৩০ কেজি করে সর্বমোট সাত লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য শস্য বিতরণ করা হয়।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠী শতকরা ৯০ শতাংশ থেকে বেড়ে শতকরা ৯৪ শতাংশে উন্নীত হয়। কক্সবাজারের মহেশখালীতে দু’টি ভাসমান তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) টার্মিনাল স্থাপন করা হয় এবং তা সরবরাহ শুরু হয়। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের প্রথম ও দ্বিতীয় ইউনিটের কোর কার্টার স্থাপন করা হয়।
৩০ দশমিক ০৬ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ; ৮৯৪ দশমিক ৭২ কিলোমিটার মহসড়ক সার্ফেসিং; এক হাজার ৬৩৬ দশমিক ৬০ কিলোমিটার মহাসড়ক প্রশস্তকরণ; ১২৮টি সেতু ও ৫৬১টি কালভার্ট নির্মাণ সম্পন্ন করা হয়।
২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ (এমআরটি লাইন-৬) বাংলাদেশে প্রথম উড়াল মেট্রোরেলের পূর্ত কাজের গড় অগ্রগতি ৪৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের মূল সেতুর ৮১ শতাংশ ভৌত অগ্রগতি সাধিত হয়। রাজশাহী-ঢাকা রুটে আন্তঃনগর বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেন, পঞ্চগড়-ঢাকা রুটে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেন চালু করা হয়। দু’টি ৭৮৭-৮ উড়োজাহাজ বিমান বহরে সংযোজিত হয়।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ নৌপথের প্রায় ১৩৯ দশমিক ৬৩ লাখ ঘন মিটার সংরক্ষণ ড্রেজিং এবং ৪১৫ দশমিক ০২ ঘন মিটার উন্নয়ন ড্রেজিং সম্পন্ন হয়।
নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের সুপারিশের প্রেক্ষিতে ৪৫ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা সুবিধা দেওয়া হয়।
স্থানীয় সরকার বিভাগ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫৮টি উপজেলা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ, ১১০টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ, ৫ হাজার ৪০০ কিলোমিটার উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রাম সড়ক নির্মাণ করা হয়।
দেশের টেলিডেনসিটি ৯৮ দশমিক ৫১ শতাংশ এবং ইন্টারনেট ডেনসিটি ৫৭ দশমিক ৩৩ শতাংশে উন্নীত হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি গঠন, ইউনিয়ন পর্যায়ে ফাইবার অপটিক কানেক্টিভিটি স্থাপন, ফোর টিয়ার ডাটাসেন্টার স্থাপন, সফটওয়্যার কোয়ালিটি পরীক্ষাকরণ ও সাটিফিকেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠাকরণ, উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠাকরণসহ ২৩টি হাই-টেক পার্ক স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে।
২০১৯ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের ৩৫ কোটি ২১ লাখ ৯৭ হাজার ৮৮২ কপি পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৯৭টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সরকারি করা হয়। শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। কারিগরি শিক্ষায় এনরোলমেন্ট এক শতাংশের কম থেকে ১৬ দশমিক ২৫ শতাংশে উন্নীত হয়।
স্বাস্থ্য সেবার মানোন্নয়নে ৯৪টি হাসপাতালে উন্নতমানের টেলিমেডিসিন কার্যক্রম চালু করা হয়। নওগাঁ, নীলফামারী, মাগুরা, চাঁদপুর ও নেত্রকোনায় একটি করে মোট ৫টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন করা হয়।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নামে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ঢাকা অঞ্চলের একমাত্র নৌ অপারেশনাল ঘাটি ‘বানৌজা শেখ মুজিব’ কমিশনিং করা হয়।
৩৬তম বিসিএস এর মাধ্যমে ২ হাজার ২৫২ জন এবং ৩৭তম বিসিএসের মাধ্যমে এক হাজার ২২৪ জন কর্মকর্তাকে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগ দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রীর ১০টি বিশেষ উদ্যোগ ‘শেখ হাসিনা বিশেষ উদ্যোগ ব্র্যান্ডিং এবং ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্পগুলোর ত্বড়িত বাস্তবায়ন কাজ নিবিড়ভাবে তদারকি অব্যাহত থাকে।
জাতিসংঘ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘হিউম্যানিটেইন অ্যাওয়ার্ড’, ‘স্পেশাল ডিশটিংশন অ্যাওয়ার্ড ফর লিডারশিপ’, ‘ভ্যাকসিন হিরো’ ও ‘চ্যাম্পিয়ন অব স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফর ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’ – এ ভূষিত করা হয়। এছাড়া প্রধানমনীকে ‘ ড. কালাম স্মৃতি ইন্টারন্যাশনাল এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০১৯’ এবং ‘ টেগর পিস অ্যাওয়ার্ড’ – এ ভূষিত করা হয়।