আবরার হত্যায় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ ॥ শেখ হাসিনা এই ঘটনায় চোখ বুঝে থাকেন নাই – ড. আব্দুর রাজ্জাক

11

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে হত্যার ঘটনা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বা সরকারকে চরম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে বলে দলটির নেতাদেরই অনেকে মনে করেন।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, বুয়েটের হত্যাকান্ডের এই ঘটনায় ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীর যে নৃশংস চেহারা ফুটে উঠেছে, সে জন্য আওয়ামী লীগকেই একটা রাজনৈতিক মূল্য দিতে হবে।
কতটা মূল্য দিতে হতে পারে-সেই প্রশ্ন দলটির ভেতরেও রয়েছে।
তবে আওয়ামী লীগের নেতারা বলেছেন, ছাত্রলীগ বা রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনায় না নিয়ে অভিযুক্ত বা সন্দেহভাজনদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হয়েছে এবং এই বিষয়গুলো মানুষ বিবেচনা করবে বলে তারা মনে করেন।
বুয়েটের শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার যে ভয়াবহ বর্ণনা বা তথ্যপ্রমাণ প্রকাশ হয়েছে, তা দেশজুড়ে নাড়া দিয়েছে।
আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকে মনে করেন, ঘটনাটি সারাদেশে শিক্ষার্থী অর্থাৎ তরুণ প্রজন্মের পাশাপাশি অভিভাবকদের প্রভাবিত করছে। ফলে সমাজের একটা বড় অংশের মাঝে সংগঠন হিসেবেই ছাত্রলীগের প্রতি একটা নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, পরিস্থিতির জন্য দিনশেষে আওয়ামী লীগকেই চড়া দাম দিতে হতে পারে।
তবে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, পরিস্থিতি যাতে
সরকারবিরোধী ক্ষোভ জোরালো না হয় বা অন্য কোনো দিকে মোড় না নেয়, সেই চিন্তা থেকে সরকার বুয়েটের ঘটনা দ্রম্নত সামাল দিতে চায়।
আর সেজন্য সরকার তাদের পদক্ষেপগুলো দৃশ্যমান করছে।
আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা এবং মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, রাজনৈতিক মূল্য দিতে হতে পারে, এটি বিবেচনায় নিয়েই তারা সন্দেহভাজনদের সাথে সাথে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করাসহ রাজনৈতিক এবং আইনগত সব ব্যবস্থা তারা নিচ্ছেন। জনগণ তাদের পদক্ষেপগুলো বিবেচনা করবে বলে তারা মনে করেন।
তবে এই ঘটনাটি আমাদের সরকার বিশেষ করে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা যেভাবে কঠোর হস্তে এটাকে বিচারের মুখোমুখি করার চেষ্টা করছেন, সেটিও কিন্তু মানুষ দেখছে যে উনি চোখ বুজে থাকেন নাই, ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন নাই।’
‘আমাদেরও হয়তো কিছুটা দুর্বল দিক থাকতে পারে। কিন্তু আমরা কিভাবে এটিতে পদক্ষেপ নিচ্ছি, সেটিও কিন্তু মানুষ বিবেচনা করবে। তারা যদি বুঝে যে, আমরা সততার সঙ্গে এটা মোকাবিলা করছি। তাহলে আমাদের অত বেশি মূল্য দিতে হবে না এবং মানুষ সেটা বুঝবে।’
সেই ২০১২ সালে পুরান ঢাকায় দর্জি দোকানের কর্মী বিশ্বজিৎ দাসকে প্রকাশ্যে দিনদুপুরে কুপিয়ে হত্যার ঘটনাসহ বিভিন্ন সময়ে ছাত্রলীগের অনেক কর্মকান্ড আওয়ামী লীগকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।
সর্বশেষ বুয়েটে শিক্ষার্থীকে হত্যার ঘটনারও সবকিছুই প্রকাশ পাচ্ছে, এখানেও ধামাচাপা দেয়া সুযোগ নেই। ফলে ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারাদেশে মানুষের মধ্যে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, সেটা আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব বিবেচনা করছে।
আর সেই প্রেক্ষাপটে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য বুয়েটে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতি নমনীয় থেকে সন্দেহভাজনদের দ্রম্নত বিচারের মুখোমুখি করার চেষ্টাকে সরকারের পক্ষ থেকে তুলে ধরা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেত্রী সাগুফতা ইয়াসমিন বলেন, নতুন লোক নেয়ার ক্ষেত্রে আরও সজাগ থাকার বিষয়টি আবারও তাদের আলোচনায় এসেছে।
‘যে দলটা স্বাধীনতা এনেছে, তারা আদর্শ বিচ্যুত হয়নি। কিন্তু আমার এলাকায় ধরে নেন যে, ছাত্রলীগের ১০০ জন সদস্য আছে, তার মধ্যে পাঁচজন হয়তো খারাপ। তারা ছাত্রলীগের জন্য নয়। তারা হয়তো পরিবার থেকে সঠিক শিক্ষা পায়নি। এখন পরিবার পর্যন্ত যাচাই করে দলে লোক নেয়া এটা খুবই কঠিন।’
‘এখন এতবড় একটা দলে কোথাও ভুল মানুষ ঢুকে যেতে পারে, সে ব্যাপারও এখন দল সচেতন হচ্ছে।’
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, এখন বুয়েটের ঘটনার প্রেক্ষাপটে দলটির এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। যাতে অন্য কোন ইস্যু সৃষ্টির সুযোগ না থাকে। বিবিসি বাংলা