কাজিরবাজার ডেস্ক :
নয়াদিল্লীতে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির শীর্ষ বৈঠকে বাংলাদেশ-ভারত সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে, উদ্বোধন হয়েছে তিনটি যৌথ প্রকল্প। শনিবার দুপুরে নয়াদিল্লীর হায়দরাবাদ হাউসে বৈঠকে বসেন দুই দেশের সরকার প্রধান। এরপর তাদের উপস্থিতিতে চুক্তি সই ও চুক্তিনামা বিনিময় হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হায়দরাবাদ হাউসে পৌঁছলে প্রধান ফটকে তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এরপর তারা বৈঠকে বসেন। স্বাক্ষরিত একটি সমঝোতা স্মারকের আওতায় ফেনী নদীর ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি যাবে ভারতে, ওই পানি তারা ত্রিপুরার সাবরুম শহরে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ প্রকল্পে ব্যবহার করবে।
উপকূলে সর্বক্ষণিক মনিটরিং ব্যবস্থার (কোস্টাল সার্ভিলেন্স সিস্টেম, সিএসএস) বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারকে সই করেছে দুই দেশ।
চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দর দিয়ে ভারতীয় পণ্য পরিবহনের বিষয়ে একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিউডর (এসওপি) সই হয়েছে।
চুক্তি হয়েছে বাংলাদেশকে প্রদত্ত ভারতীয় ঋণের প্রকল্প বাস্তবায়নের। সহযোগিতা বিনিময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ইউনিভার্সিটি অব হায়দরাবাদের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
এছাড়া সাংস্কৃতিক কার্যক্রম বিনিময়, নবায়ন ও যুব উন্নয়নে সহযোগিতা নিয়ে দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। চুক্তি ও সমঝোতাপত্র বিনিময়ের পর শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি যৌথভাবে তিনটি প্রকল্প উদ্বোধন করেন। এগুলো হলো খুলনায় ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে ‘বাংলাদেশ-ভারত প্রফেশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট, ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনে বিবেকানন্দ ভবন ও বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরায় এলপিজি আমদানি প্রকল্প।
প্রকল্পগুলো উদ্বোধন করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিগত এক দশকে আমাদের উভয় দেশের মধ্যে বিভিন্ন প্রথাগত সহযোগিতা প্রভূত পরিমাণে বেড়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন নতুন ও অপ্রচলিত খাত যেমন ব্লু ইকোনমি ও মেরিটাইম, পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার, মহাকাশ গবেষণা, ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথস রফতানি ও সাইবার সিকিউরিটি ইত্যাদি খাতে উভয় দেশ সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করেছে।
‘এসব বহুমুখী ও বহুমাত্রিক সহযোগিতার ফলে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বিশ্ববাসীর সামনে সু-প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্কের দৃষ্টান্ত হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে।’
এলপিজির প্রকল্প নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা আমাদের উভয় দেশের বিদ্যমান বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করবে বলে আমি মনে করি। এর ফলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যসমূহের জ্বালানি চাহিদা পূরণ অনেকাংশে সহজ হবে বলে আশা করছি।’
খুলনার বিআইপিএসডিআই বাংলাদেশের ওই অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে বিভিন্ন রকম উন্নতমানের যন্ত্রপাতি দিয়ে অবদান রাখবে বলে আশা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আশা করেন, ভারত সরকারের আর্থিক অনুদানে স্থাপিত রামকৃষ্ণ মিশনের বিবেকানন্দ ভবন শিক্ষা বিস্তারে সহায়তার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে ভূমিকা রাখবে।
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক সারা বিশ্বের জন্য দৃষ্টান্ত বলে উল্লেখ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘গত এক বছরে আমি ভিডিও লিংকের মাধ্যমে ৯ প্রকল্প উদ্বোধন করেছি। আজকে তিনটি প্রকল্প যোগ হয়ে এক ডজন যৌথ প্রকল্পের উদ্বোধন করলাম। এসব প্রকল্পের উদ্দেশ্য আমাদের নাগরিক জীবনমানকে উন্নত করা। এটা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের মূল মন্ত্র’
শীর্ষ বৈঠকের পর হায়দরাবাদ হাউসে শেখ হাসিনার সম্মানে দেয়া ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যাহ্ন ভোজে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।