রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রীর ৪ দফা

36
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে ভাষণ দেন।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
রোহিঙ্গা সঙ্কটকে আঞ্চলিক নিরাপত্তার প্রতি হুমকি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেছেন, মিয়ানমার ও তাদের নাগরিকদের মধ্যকার সমস্যার বোঝা বহন করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তিনি আহ্বান জানান, তারা যেন এই সঙ্কটের বিষয়টি উপলব্ধি করে। রোহিঙ্গাদের স্বভূমিতে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করতে জাতিসংঘে চারটি প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রস্তাবগুলো হলো- ১. রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসন এবং আত্মীকরণে মিয়ানমারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক সদিচ্ছার পূর্ণ প্রতিফলন দেখাতে হবে, ২. বৈষম্যমূলক আইন ও রীতি বিলোপ করে মিয়ানমারের প্রতি রোহিঙ্গাদের আস্থা তৈরি করতে হবে। রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের উত্তর রাখাইন সফরের আয়োজন করতে হবে, ৩. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে বেসামরিক পর্যবেক্ষক মোতায়েনের মাধ্যমে মিয়ানমার কর্তৃক রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার ও সুরক্ষার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে, ৪. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবশ্যই রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণসমূহ বিবেচনায় আনতে হবে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অন্যান্য নৃশংসতার দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে।
শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে তিনটায় নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৪তম অধিবেশনে এই ইস্যুতে চার দফা প্রস্তাব পেশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বিশ্ব শান্তি, নিরাপত্তা, জাতিসংঘে বাংলাদেশের শান্তি রক্ষা মিশন, এসডিজি বাস্তবায়ন ও বাংলাদেশের উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। শেখ হাসিনার ভাষণের সময় গ্যালারি ছিল পরিপূর্ণ। এমনটা খুব কম সময়েই ঘটে থাকে বলে জাতিসংঘ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এছাড়া বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাঙালী এই সময় জাতিসংঘ সদর দফতরের বাইরে মোবাইল ফোনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সরাসরি দেখেছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও নিউইয়র্ক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো।
শেখ হাসিনা বলেন, এই সমস্যা এখন আর বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না। সব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বিষয়টি এখন আঞ্চলিক নিরাপত্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি এই এলাকার পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাও ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতে মানুষের মনে শান্তি ও স্বস্তি ফিরে এসেছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে বর্তমানে চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে। একটি শক্তিশালী বহুপাক্ষিক ফোরাম হিসেবে জাতিসংঘের প্রতি বাংলাদেশের সমর্থন অব্যাহত রাখার প্রত্যয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এর সংগঠন এবং সনদে বর্ণিত দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে সদা প্রস্তুত থাকব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এমন একটি সমস্যার বোঝা বহন করে চলেছি যা মিয়নামারের তৈরি। এটি সম্পূর্ণ মিয়ানমার এবং তার নিজস্ব নাগরিক রোহিঙ্গাদের মধ্যকার একটি সমস্যা। তাদের নিজেদেরই এর সমাধান করতে হবে। রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসন এবং আত্মীকরণে মিয়ানমারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক সদিচ্ছার পূর্ণ প্রতিফলন দেখাতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষী মোতায়েনে জাতিসংঘের আহ্বানে নিয়মিতভাবে সাড়া দিয়ে আসছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমকে ভবিষ্যতের জন্য উপযোগী করে তুলতে জাতিসংঘ মহাসচিবের গৃহীত উদ্যোগের প্রতি আমরা সমর্থন ব্যক্ত করছি। তাঁর ‘এ্যাকশন ফর পিস কিপিং’ উদ্যোগ বাস্তবায়নের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমরা অন্যতম চ্যাম্পিয়ন দেশ হিসেবে এই উদ্যোগে শামিল হয়েছি।
তিনি বলেন, পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের মূলনীতিকে উপজীব্য করে বর্তমান সরকার রূপপুরে প্রথম পারমাণবিক বিদুত কেন্দ্র নির্মাণ করছে। পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের প্রতি অঙ্গিকার মূলত পারমাণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের দৃঢ় অবস্থানেরই বলিষ্ঠ প্রতিফলন। জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, সদ্যসমাপ্ত ক্লাইমেট এ্যাকশন সামিটের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক যে কার্যক্রম গ্রহণের ঘোষণা এসেছে, তা টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের অংশ হিসেবে প্যারিস চুক্তির বাস্তবায়ন আরও বেগবান করবে। তিনি বলেন, ‘ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স এ্যান্ড এ্যাডাপটেশন সংক্রান্ত জোটের অংশীদার হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নানা বাধা-বিপত্তি ও দুর্যোগ ঝুঁকি মোকাবেলায় আমরা রূপান্তরযোগ্য এবং জলবায়ু-সহনশীল প্রযুক্তি ও শস্য উদ্ভাবন করেছি এবং এ বিষয়ে গবেষণা অব্যাহত রাখতে হবে।
নিরাপদ, সুষ্ঠু ও নিয়মিত অভিবাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনিয়মিত অভিবাসন ও মানবপাচার একটি বৈশ্বিক সমস্যা। যার মূলে রয়েছে জটিল ও সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্র। জাতীয় পর্যায়ে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন এবং মানবপাচার সংক্রান্ত সমস্যা মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সম্প্রতি আমরা মানবপাচার বিষয়ক ‘পালেরমো প্রোটোকল-এ যোগদান করেছি। অভিযোজন ও ক্ষয়ক্ষতি সামলে নেয়ার জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ডেল্টাপ্ল্যান-২১০০ গ্রহণ করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের জন্য এটি একটি অর্থ-প্রযুক্তিগত, সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। বাংলাদেশ পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করলেও পরমাণু অস্ত্রের বিরুদ্ধে তার অবস্থান তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অভিবাসন সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ নিরাপদ, সুষ্ঠু ও নিয়মিত অভিবাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘গ্লোবাল কমপ্যাক্ট অন মাইগ্রেশন’ সফলভাবে গৃহীত হওয়ার পর বাংলাদেশ এটি বাস্তবায়নের কার্যবিধি প্রণয়ন করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। জাতীয় পর্যায়ে বাংলাদেশ অভিবাসনের বিভিন্ন ইস্যুকে জাতীয় উন্নয়ন কৌশলের সঙ্গে অঙ্গিভূত করেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে তাঁর সরকারের বিগত ১০ বছরের কিছু বেশি সময়ের দেশ শাসনে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের পথে বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য দিকও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আজকাল প্রায়ই ‘উন্নয়নের বিস্ময়’ হিসেবে আলোচিত হচ্ছে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বিশ্বে নানা অস্থিরতা এবং বিশ্বব্যাপী ক্রমাগত আর্থিক মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশ ১০ বছর ধরে সমৃদ্ধি বজায় রেখেছে। স্পেক্টেটর ইনডেক্স ২০১৯ অনুযায়ী, গত ১০ বছরে মোট ২৬ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সর্বোচ্চ। এ সময়ে বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী মোট দেশজ উৎপাদনের ব্যাপ্তি ঘটেছে ১৮৮ শতাংশ। ২০০৯ সালে আমাদের জিডিপির আকার ছিল ১০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা বেড়ে চলতি বছরে দাঁড়িয়েছে ৩০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। এদিকে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াও পেছনে ফেলে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের শরণার্থী জীবনের আরও একটি বছর পার হয়ে গেছে। মিয়ানমারের মনোভাব খুব একটা বদলায়নি। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এমন একটি সমস্যার বোঝা বহন করে চলেছি যা মিয়নামারের তৈরি। সম্পূর্ণ মিয়ানমার এবং তার নিজস্ব নাগরিক রোহিঙ্গাদের মধ্যকার একটি সমস্যা। তাদের নিজেদেরই এর সমাধান করতে হবে।
প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও তার বাস্তবায়ন এখনও হয়নি। দুই দফায় প্রত্যাবাসন শুরুর দিনক্ষণ ঠিক হলেও তা পিছিয়ে যায় এখনও সেখানে জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে ভয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের অনীহায়। এই বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যদিও রোহিঙ্গা সমস্যা প্রলম্বিত হয়ে তৃতীয় বছরে পদার্পণ করেছে, কিন্তু মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সুরক্ষা, নিরাপত্তা ও চলাফেরার স্বাধীনতা এবং সামগ্রিকভাবে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাও মিয়ানমারে ফিরে যায়নি। অধিকার প্রতিষ্ঠায় সংগ্রামরত ফিলিস্তিনীদের পক্ষে বাংলাদেশের সুদৃঢ় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী দখলদার বাহিনী এবং তাদের স্থানীয় দোসরদের পরিচালিত গণহত্যায় ৩০ লাখ নিরাপরাধ মানুষ নিহত এবং দুই লাখ নারী নির্যাতনের শিকার হন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের এই নির্মম অভিজ্ঞতাই সব সময় আমাদের নিপীড়িতদের পাশে দাঁড়াতে সাহস জুগিয়েছে। যতদিন পর্যন্ত আমাদের ফিলিস্তিনী ভাই-বোনদের ন্যায়সঙ্গত ও বৈধ সংগ্রাম সফল না হচ্ছে, ততদিন তাদের পক্ষে আমাদের দৃঢ় অবস্থান অব্যাহত থাকবে। অধিবেশনের সভাপতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবারের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন সামনে রেখে দারিদ্র্যদূরীকরণ, মানসম্মত শিক্ষা, জলবায়ু সংক্রান্ত পদক্ষেপ এবং অন্তর্ভুক্তির জন্য মাল্টিলেটারিজম বা বহুপাক্ষিক তাকে উজ্জীবিত করার যে আহ্বান আপনি করেছেন তা খুবই প্রাসঙ্গিক। বিশ্বের বহুপাক্ষিক ফোরামের কর্ণধার হিসেবে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদই এই আহ্বানকে বাস্তবে রূপ দিতে পারে এবং এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন, শান্তি ও নিরাপত্তাকে এগিয়ে নেয়ার সামর্থ্য রাখে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে এবার সভাপতিত্ব করছেন নাইজিরিয়ার তিজানি মুহাম্মদ-বান্দে।
শেখ হাসিনা বলেন, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট বাস্তবায়নে আমাদের যে অঙ্গিকার ও যৌথ আকাক্সক্ষা তারই প্রতিফলন ঘটেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে, যা আমাদের জনগণের আস্থা অর্জনে সাহায্য করেছে। টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করার কথা উল্লেখ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ২১ দফার রাজনৈতিক অঙ্গিকার মূলত জনগণের কল্যাণের নিমিত্ত গৃহীত অঙ্গিকার। সারাদেশে ৫ হাজার ৮০০ ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে ৬০০ সরকারী ই-সেবা দেয়া, সব নাগরিককে স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনার লক্ষ্যে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা এবং প্রতিবন্ধী, অটিজম ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় সম্পৃক্ত করার বিষয়ে বিশেষত্ব দিয়ে এ ধরনের প্রায় সাড়ে ১৬ লাখ ব্যক্তিকে নিয়মিত সরকারী ভাতা দেয়ার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা, শোভন কর্ম পরিবেশ এবং অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে বৈষম্যদূরীকরণ বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন কৌশল। নারী-পুরুষ সমতা এবং বিদ্যালয়ে শতভাগ ভর্তির মাইলফলক অর্জনের পর আমরা এখন মানসম্মত শিক্ষার প্রসারে মনোনিবেশ করেছি। তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে ই-শিক্ষা এবং যোগ্য শিক্ষক তৈরির উপর গুরুত্ব দেয়ায় বিদ্যালয় থেকে ঝরেপড়ার হার ৫০ শতাংশ থেকে ১৮ শতাংশে নেমে এসেছে। দারিদ্র্য ও অসমতা- এ দুটি বিষয় উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দ্রুততম সময়ে দারিদ্র্য হ্রাসকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। ২০০৬ সালে আমাদের দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ, যা ২০১৮ সালে হ্রাস পেয়ে হয়েছে ২১ শতাংশ হয়েছে। ‘আমার গ্রাম আমার শহর’, ‘আশ্রায়ণ’, ‘আমার বাড়ি আমার খামার’র মতো নিজস্ব ও গ্রামবান্ধব উদ্যোগগুলো অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে অবদান রাখছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজ প্রায়শই ‘উন্নয়নের বিস্ময়’ হিসেবে আলোচিত হচ্ছে। দ্রুত অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে আমরা নানাবিধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।
এছাড়া উন্নয়ন কৌশল হিসেবে আমরা মনোনিবেশ করেছি দারিদ্র্যদূরীকরণ, টেকসই প্রবৃদ্ধি, পরিবেশ সুরক্ষা, মানবসম্পদ উন্নয়নের মতো বিষয়গুলোতে। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা মনে করি বহুপাক্ষিকতাবাদ বৈশ্বিক সমস্যা সমাধান এবং সর্বজনীন মঙ্গলের জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম। বিশ্বে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জাতিসংঘই আমাদের সব আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে এই আশাই ব্যক্ত করেছিলেন। একটি শক্তিশালী বহুপাক্ষিক ফোরাম হিসেবে জাতিসংঘের প্রতি বাংলাদেশের সমর্থন সর্বদা অব্যাহত থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা এর সংগঠন এবং সনদে বর্ণিত দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে সদা প্রস্তুত থাকব।
আগামী শতকের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় সক্ষমতার জন্য আগামী বছর জাতিসংঘের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে মানব সভ্যতার জন্য একটি শক্তিশালী জাতিসংঘ তৈরি করতে সবাইকে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা জাতিসংঘ মহাসচিবের বিভিন্ন উদ্যোগ বিশেষত জাতিসংঘ উন্নয়ন ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে গৃহীত সংস্কার উদ্যোগগুলোকে সাধুবাদ জানান। তিনি বলেন, আমরা আশা করছি, নতুন প্রজন্মের জাতিসংঘ কান্ট্রি টিম এবং নতুনরূপে সজ্জিত জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়কারী ব্যবস্থার দ্বারা জাতিসংঘ স্বাগতিক রাষ্ট্রের জাতীয় অগ্রাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সংশ্লিষ্ট দেশের উন্নয়ন ও শান্তি প্রক্রিয়ায় আরও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারবে।