কাজিরবাজার ডেস্ক :
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের জন্য অনুসরণীয় নির্দেশনা জারি করেছে সুপ্রীমকোর্ট প্রশাসন। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের আদেশক্রমে সুপ্রীমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. মোঃ জাকির হোসেন রবিবার এই সার্কুলার জারি করেন। নির্দেশনায় বিচারিক কর্মঘণ্টার পূর্ণ ব্যবহারের লক্ষ্যে অফিস চলাকালীন অর্থাৎ সকাল সাড়ে নয়টা থেকে সাড়ে চারটা পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের উপস্থিতি কঠোরভাবে পরিহার করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের ১১ দফা অবশ্যই পরিহার করতে বলা হয়েছে এবং ৮ দফা অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, এই নির্দেশনা অমান্য করলে তা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে এবং এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস (শৃঙ্খলা) বিধিমালা ২০১৭ -এর পাশাপাশি প্রচলিত অন্য আইন ও বিধিবিধান প্রযোজ্য হবে।
নির্দেশনায় বলা হয়, বর্তমানে বাংলাদেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়নের সুযোগে ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের মাত্রা অতীতের তুলনায় অনেক গুণ বেড়েছে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে কম্পিউটার, স্মার্ট ফোন, এবং অনুরূপ যে কোন ডিভাইসের মাধ্যমে যে কোন ব্যক্তির তথ্য, ছবি, অডিও, ভিডিও ইত্যাদি আদান-প্রদান করা যায়। তবে অতিমাত্রায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ফলে এক ধরনের আসক্তি তৈরি হয়, যা ব্যক্তি জীবন ও পেশাগত জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
এরই প্রেক্ষিতে সরকারী প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সকল সরকারী কর্মচারীদের জন্য সরকরী প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার সংক্রান্ত নির্দেশিকা ২০১৬ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের কোন নীতিমালা বা নির্দেশিকা গ্রহণ করা হয়নি। বর্ণিতাবস্থায় Supreme court Special Committe for judicial Reforms
এর সুপারিশক্রমে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যাবহারের ক্ষেত্রে একটি অনুসরনীয় নির্দেশনা প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহীত হয়।
সুপ্রীমকোর্ট প্রশাসনের মুখপাত্র স্পেশাল অফিসার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান এ নির্দেশনাবলী জারির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। যে ১১ দফা অবশ্যই পরিহার করতে বলা হয়েছে তা হচ্ছে-
(ক) জাতীয় ঐক্য ও চেতনার পরিপন্থী কোন প্রকার তথ্য, মন্তব্য ও অনুভূতি প্রকাশ ও প্রচার।
(খ) কোন সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে এমন কোন তথ্য, মন্তব্য বা অনুভূতি প্রকাশ ও প্রচার।
(গ) রাজনৈতিক মতাদর্শ বা আলোচনা সংশ্লিষ্ট কোন তথ্য, মন্তব্য বা অনুভূতি প্রকাশ ও প্রচার।
(ঘ) কোন সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্যমূলক বা হেয় প্রতিপন্নমূলক কোন তথ্য, মন্তব্য বা অনুভূতি প্রকাশ ও প্রচার।
(ঙ) কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রকে হেয় প্রতিপন্ন করে কোন তথ্য, মন্তব্য বা অনুভূতি প্রকাশ ও প্রচার।
(চ) লিঙ্গবৈষম্যমূলক কোন তথ্য, মন্তব্য বা অনুভূতি প্রকাশ ও প্রচার।
(ছ) জনমনে অসন্তোষ ও অপ্রীতিকর মনোভাব সৃষ্টি করতে পারে এমন কোন তথ্য, মন্তব্য বা অনুভূতি প্রকাশ ও প্রচার।
(জ) কোন মামলা সংক্রান্তে বিরূপ মন্তব্য বা ব্যক্তিগত অনুভূতি প্রকাশ বা প্রচার।
(ঝ) নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ বা উপর্যুক্ত কর্তৃপক্ষের কোন সিদ্ধান্তের বিষয়ে কোন বিরূপ মন্তব্য বা ব্যক্তিগত অনুভূতি প্রকাশ বা প্রচার।
(ঞ) বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতিদের ছবি বা ভিডিও ক্লিপ প্রকাশ ও প্রচার।
(ট) অপ্রাসঙ্গিক, অপ্রয়োজনীয়, মানহানিকর এবং নৈতিকতা পরিপন্থী কোন স্ট্যাটাস, পোস্ট, লিংক, ছবি ইত্যাদি অন্যজনকে সংযুক্তকরণ, আদান-প্রদান, প্রকাশ ও প্রচার।
এছাড়া যে ৮ দফা অনুসরণ করতে বলা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে-
(ক) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিতব্য লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও ইত্যাদি নির্বাচন ও বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।
(খ) প্রকাশিত তথ্য ও উপাত্তের যথার্থতা ও নির্ভরযোগ্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে।
(গ) ব্যক্তিগত ও পারিবারিক তথ্য আদান-প্রদান, প্রকাশ ও প্রচারের ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্কতা এবং বিচারক সুলভ মনোভাব অবলম্বন করতে হবে।
(ঘ) অপ্রয়োজনীয় ও গুরুত্বহীন বিষয়ে তথ্য, স্ট্যাটাস বা পোস্ট দেয়া যাবে না।
(ঙ) বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের জন্য একটি পোর্টাল, গ্রুপ থাকতে পারে যেখানে বিচারাধীন মামলার বিষয় এবং ব্যক্তিগত বিষয় ব্যতীত কেবল আইনগত বিষয়ে আলোচনা ও তথ্য আদান-প্রদান করা যাবে।
(চ) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ও বিচারক সুলভ আচরণ করতে হবে এবং রাষ্ট্রীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে।
(ছ) তথ্য আদান-প্রদান ও বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। নিজ কর্মক্ষেত্রে মামলার স্বার্থসংশ্লিষ্ট বা মামলা পরিচালনার সঙ্গে জড়িত কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যক্তিগত এ্যাকাউন্টে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না।
(জ) বাস্তব ও স্বাভাবিক অবস্থায় সহকর্মীদের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া সংক্রান্ত নিয়ম-নীতি, করণীয় ও বর্জনীয় দিকসমূহের প্রতিফলন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে।