শিপন আহমদ ওসমানীনগর থেকে :
বালাগঞ্জে ভুয়া জন্ম নিবন্ধন তৈরী করে স্কুলছাত্রীর বিয়ের আয়োজন করা হলেও শেষ পর্যন্ত কনে ছাড়াই বরকে ফিরে যেতে হয়েছে। উপজেলার দেওয়ান বাজার ইউনিয়নের তালতলা দক্ষিণ আজিজপুর গ্রামের মৃত শামীম মিয়ার কন্যা আজিজপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্রী মাহমুদা আক্তার রেশমার বিয়ের আয়োজন ছিল গতকাল রবিবার। রেশমা বাল্য বিয়ের শিকার বিষয়টি জানতে পেরে সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা কমিউনিটি সেন্টারে উপস্থিত হয়ে ওই বিয়ে ভঙ্গ করে দেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রেশমা বাল্য বিয়ের শিকার উল্লেখ করে শনিবার আজিজপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪৬জন শিক্ষার্থী স্বাক্ষরিত প্রধান শিক্ষকের নিকট একটি লিখিত আবেদন দেয়া হলে বিষয়টি জানা জানি হয়। গতকাল রবিবার উপজেলা মহিলা বিষয় কর্মকর্তা, সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি আজিজপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে যান। বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ, ৮ম ও ৯ম শ্রেণির রেজিস্ট্রার ঘেটে তারা নিশ্চিত হন- মাহমুদা আক্তার রেশমার জন্ম তারিখ ২০০৪ সালের ২৫ জানুয়ারি অর্থাৎ তার বর্তমান বয়স ১৫ বছর। কিন্তু চলতি বছরের ২৮ জুন দেওয়ান বাজার ইউনিয়ন পরিষদ সচিব এহিয়া সিদ্দিক ও চেয়ারম্যান নাজমুল আলম স্বাক্ষরিত জন্ম নিবন্ধন কার্ডে রেশমার তার জন্ম তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ২০০১ সালের ২৬ জানুয়ারি। ভুয়া এই জন্ম নিবন্ধনের বিষয়টি নিয়ে সবার মনে প্রশ্ন ওঠেছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য খন্দকার আব্দুর রকিব বলেন, আমি বিয়ের আগের দিন অভিভাবকদের বলেছি বিয়ে বন্ধ করে দেয়ার জন্য কিন্তু তারা আমার কথায় গুরুত্ব দেননি। আজিজপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনতোষ সরকার জানান, রেশমা ছাত্রী হিসাবে ভালো, আমি চাই সে আবার বিদ্যালয়ে আসবে, লেখাপড়া করবে। আমরা তাকে সাধ্যমত সহযোগীতা করবো। মানবাধিকার ও সামাজিক সংগঠনের সংগঠক সাংবাদিক শাহাব উদ্দিন শাহীন বলেন, বাল্য বিয়ের কারণে কোনো কিশোর-কিশোরীর সুন্দর ভবিষ্যত যেনো নষ্ট না হয়। সে ক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যাতে ভুয়া জন্ম নিবন্ধন না দেয়া হয় সে বিষয়ে প্রশাসনকে আরো কঠোর হতে হবে। বালাগঞ্জ উপজেলা মহিলা বিষয় কর্মকর্তা গৌরাঙ্গ চন্দ্র মন্ডল বলেন, বাল্য বিয়ের আয়োজনের খবর পেয়ে কমিউনিটি সেন্টারে গিয়ে রেশমার অভিভাবক হিসেবে তার চাচা আব্দুস শহিদকে পাই। বিয়ে বন্ধ করে দেয়ার বিষয়ে তিনি আমার কাছে লিখিত অঙ্গীকারে স্বাক্ষর করেন এবং বর পক্ষকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। তিনি বলেন, বালাগঞ্জ উপজেলা বাল্য বিয়ে মুক্ত। ভুয়া জন্ম নিবন্ধনের বিষয়ে রেশমার অভিভাবক, ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ও চেয়ারম্যান কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। এছাড়া জন্ম নিবন্ধন সংশোধনীর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিকট কোনো আবেদন দাখিল সংক্রান্ত প্রমাণাদিও দেখাতে পারেননি।