নিজ জেলায় দু’দফায় কোন কর্মকর্তা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থাকতে পারবেন না ॥ পদোন্নতি নিতে না চাইলে ব্যবস্থা- খাদ্য অধিদপ্তর মহাপরিচালক

335

কাজিরবাজার ডেস্ক :
নিজ জেলায় এবং পর পর দুই দফায় কোন কর্মকর্তা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) থাকতে পারবেন না। পদোন্নতি নিতে না চাইলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তা অসদাচরণ হিসেবে বিবেচিত হবে। অসদাচরণের দায়ে সরকারী চাকরি বিধি অনুসারে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই বিভাগের বদলি, পদায়ন, পদোন্নতিসহ যাবতীয় কর্মে তদ্বিরে অতিষ্ঠ হয়ে নতুন করে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। ওই নীতিমালায় এ সব কথা উল্লেখ রয়েছে। আর্থিক দুর্নীতির কারণে বিচারে যার কাছ থেকে সরকারী অর্থ আদায়ের আদেশ রয়েছে অথবা গুরুদ-ে দ-িত হয়েছেন এমন কোন কর্মকর্তাকে সরকারী গুদামের ইনচার্জ, বড় গুদামের ম্যানেজার কিংবা সাইলোতে কোনভাবেই পোস্টিং দেয়া যাবে না। নতুন এই নীতিমালা খাদ্য অধিদফতরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণের বদলি, পদায়ন নীতিমালা-২০১৯ নামে অভিহিত হবে।
এ বিষয়ে খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) নাজমান আরা খানম বলেন, সরকারী চাকরিতে বদলির তদ্বিরের প্রথা প্রচলিত আছে। সরকারের অন্যান্য বিভাগের বদলি আর খাদ্য বিভাগের বদলি এক নয়। খাদ্য বিভাগের বদলির সঙ্গে সরকারী স্বার্থ জড়িত থাকে। এ কারণে এই বিভাগের বদলিকে আমরা ভিন্ন চোখে দেখি। এখানে বদলির তদ্বিরের চাপ অন্য যে কোন বিভাগের চেয়ে একটু হলেও বেশি। বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে আমরা নীতিমালা হালনাগাদ করতে বাধ্য হয়েছি। তাছাড়া খাদ্য বিভাগের গুদাম কর্মকর্তারা পদোন্নতি নিতে চান না। পদোন্নতি হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য দেয়া একটি সম্মান ও মর্যাদা। এতে তিনি সামাজিক ও আর্থিকভাবে লাভবান হন। এখন থেকে পদোন্নতি নেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যে পদোন্নতি নেবেন না, তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নতুন এই নীতিমালায় বলা হয়েছে, অতিরিক্ত পরিচালক, সাইলো অধীক্ষক সমমান, তদুর্ধ পর্যায়ের কর্মকর্তা, জেলা পর্যায়ের অফিস প্রধান কর্মকর্তা এবং নবম গ্রেড বা তদুর্ধ গ্রেডের ক্যাডার কর্মকর্তাকে বদলি, পদায়ন করবে খাদ্য মন্ত্রণালয়। জেলা পর্যায়ের অফিস প্রধান, অধিদফতরের নবম গ্রেড বা তদুর্ধ ক্যাডার কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কর্মকর্তা, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অথবা সমমানের নবম গ্রেডের কর্মকর্তা, এ ও বি গ্রেডের এলএসডি’র ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং সিএসডি’র ম্যানেজার, ১০ম থেকে ২০তম গ্রেডের সকল কর্মচারীর আন্তঃবিভাগীয় বদলি, পদায়ন করবে খাদ্য অধিদফতর। ইতিপূর্বে এলএসডি’র ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অনেক পদে কর্মরতদের বদলি করতেন আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকরা (আরসি-ফুড)। খাদ্য পরিদর্শক ও সমমানের কর্মকর্তা এবং সি গ্রেডের এলএসডি’র ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বদলি, পদায়ন করবেন আরসি-ফুডরা। ১১তম থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মকর্তা কর্মচারীদের আন্তঃজেলা বদলির কাজ করবেন আরসি-ফুডরা। জেলার অভ্যন্তরে খাদ্য পরিদর্শক সমমান ছাড়া ১১ থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের বদলি করবেন ডিসি-ফুডরা।
নতুন এই নীতিমালার শুরুতেই বলা হয়েছে, অনেক কর্মকর্তাকে বদলির আদেশ জারি করা হলেও তারা নতুন কর্মস্থলে যোগদান করতে চান না। নতুন কর্মস্থলে যোগদানে তারা অনীহা প্রকাশ করেন। যেন বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদান করতে না হয় সে জন্য অহেতুক কালক্ষেপণ করেন। বদলির আদেশ বাতিলের জন্য অযাচিত তদ্বির করেন। কর্মকর্তাদের মধ্যে উল্লেখিত কর্মের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। উল্লেখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করে পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত খাদ্য অধিদফতরের ক্যাডার নন ক্যাডার কর্মকর্তা কর্মচারীদের বদলি সংক্রান্ত বিষয়ে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং শৃঙ্খলা আনতে এই নীতিমালা প্রণয়ন করা হলো। নীতিমালার শেষ পর্যায়ে তৃতীয় অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বদলির আদেশ জারির সাত কর্মদিবসের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করতে হবে। তা না হলে সাতদিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর তিনি তাৎক্ষণিক অবমুক্ত হয়েছেন বলে গণ্য হবেন। অর্থাৎ স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে বলে ধরে নেয়া হবে। কেউ বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদান না করলে তিনি কর্তৃপক্ষের আদেশ লঙ্ঘন করেছেন এবং তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। যা তার সার্ভিস জীবনের জন্য একটি নেতিবাচক দিক হিসেবে গণ্য হবে।
নীতিমালার দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, একই কর্মস্থলে ধারাবাহিকভাবে দুই বছর দায়িত্বপালন করলে তার চাকরি বদলিযোগ্য হবে। একই কর্মস্থলে কোন কর্মচারীকে তিন বছরের বেশি নিয়োজিত রাখা যাবে না। পার্বত্য ও দুর্গম এলাকায় যারা দায়িত্বপালন করবেন সমগ্র চাকরি জীবনে চার বছরের বেশি দায়িত্বপালন করবেন না। তবে নীতিমালার দ্বিতীয় অনুচ্ছেদের ‘খ’ অংশে বলা হয়েছে জনস্বার্থে অথবা প্রশাসনিক প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষ যে কোন সময় যে কাউকে যে কোন স্থানে বদলি করতে পারবেন। এই ক্ষেত্রে প্রশাসনিক প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করলেও জনস্বার্থের কোন সংজ্ঞা দেওয়া হয় নি। কী কী কারণকে জনস্বার্থ হিসেবে গণ্য করা হবে তা উল্লেখ না থাকা নীতিমালার চরম দুর্বলতা বলে মনে করছেন খাদ্য বিভাগের সাবেক এবং বর্তমান কর্মকর্তাগণ। নীতিমালা অনুসারে আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকে (আরসি-ফুড) নিজ বিভাগে, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে (ডিসি-ফুড) নিজ জেলায়, নবম গ্রেডের ক্যাডার এবং নন ক্যাডার পদে সিএসডি ম্যানেজার, এলএসডি’র ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নিজ জেলায় নিয়োগ দেয়া যাবে না। দশম থেকে থেকে ১৬তম গ্রেডের কর্মকর্তাদের নিজ উপজেলায় পোস্টিং দেয়া যাবে না। তবে যার বয়স ৫৮ বছর তাকে নিজ উপজেলায় বদলি করা যাবে। কোন কর্মকর্তা কর্মচারী লঘুদ-ে দ-িত হলে, দ- আরোপের পর থেকে এক বছর অতিক্রান্ত না হতে পুনরায় তাকে এলএসডি, সিএসডি, অথবা সাইলোতে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া যাবে না। কোন কর্মকর্তা নিজ জেলায় ওসিএলএসডি হতে পারবে না। এমনকি একবার ওসিএলএসডি হলে পরবর্তী মেয়াদে তিনি খাদ্যগুদামের চার্জ পাবেন না। অন্তত দুই বছর তাকে অন্য কোথাও চাকরি করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওসিএলএসডি হিসেবে পদায়নের তদ্বিরে বিব্রত খাদ্যমন্ত্রী। বিশেষ করে রাজনৈতিক নেতা কর্মী থেকে শুরু করে প্রভাবশালী অনেক নেতার কাছে প্রতিনিয়ত বিব্রত হতে হচ্ছে। আবার অসৎ, দুর্নীতিবাজ, বিতর্কিত কর্মকর্তাদের পক্ষে তদ্বির অনেক বেশি। রাজনৈতিক অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি তাদের লোকদের বিভিন্ন পদে বসাতে সরাসরি মন্ত্রী-সচিবের কাছে তদ্বির করছেন বলে জানা গেছে। এই সকল পরিস্থিতি সামাল দিতে এই নীতিমালা হচ্ছে।