কাজিরবাজার ডেস্ক :
‘মূলত প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতেই ২১ আগষ্টের গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। আর এ হামলার পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নের পেছনে ছিলেন তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, দেশের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তা, কয়েকজন শীর্ষ জঙ্গি আর একাত্তরের পরাজিত দেশ পাকিস্তান। পঁচাত্তরের ১৫ আগষ্টের মতোই ২১ আগষ্টের হামলার ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করা হয়েছিল। ওই সময়ের (২০০৪ সালের) কিছু সামরিক কর্মকর্তা আর জঙ্গি নেতাদের নিয়ে হাওয়া ভবনে বসে ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান সবকিছু চূড়ান্ত করেন। হামলায় অংশ নেয়া ব্যক্তিদের পাকিস্তানে ট্রেনিং দেয়া হয়। ট্রেনিংয়ের পর তাদের আর্জেস গ্রেনেডও সরবরাহ করে পাকিস্তান। আর হামলা শেষে পাকিস্তান ঘাতকদের আশ্রয়ও দেয়।’
২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট ভয়াল ও বীভৎস্য গ্রেনেড হামলা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী, আদালতে একাধিক সাক্ষী সাক্ষ্য এবং আসামিদের জবানবন্দীতে উঠে এসেছে নেপথ্যের ষড়যন্ত্রের কথা। মামলার তদন্ত প্রতিবেদন, গুরুত্বপূর্ণ নথি, সাক্ষীদের সাক্ষ্য এবং আসামিদের জবানবন্দী বিশ্লেষণ করেও দেখা গেছে, ওই সময় ক্ষমতাসীন একাধিক রাজনৈতিক দল, জঙ্গি সংগঠন ও গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে এবং পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থার মদদে ২১ আগষ্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাসহ পুরো আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতেই এই হামলা চালানো হয়েছিল।
আজ সেই রক্ত¯œাত ভয়াল-বিভীষিকাময় ২১ আগষ্ট। বারুদ আর রক্তমাখা বীভৎস রাজনৈতিক হত্যাযজ্ঞের দিন। মৃত্যু-ধ্বংস-রক্তস্রোতের নারকীয় গ্রেনেড হামলার ১৫তম বার্ষিকী। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ক্ষমতায় থাকাকালে সভ্যজগতের অকল্পনীয় এক নারকীয় হত্যাকান্ড চালানো হয় ২০০৪ সালের এই দিনে। গ্রেনেডের হিংস্র দানবীয় সন্ত্রাস আক্রান্ত করে মানবতাকে। রক্ত ঝড়ের প্রচ-তায় মলিন হয়ে গিয়েছিল বাংলা ও বাঙালির মুখ। জীবন্ত বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণ এদিন মুহূর্তেই পরিণত হয়েছিল মৃত্যুপুরীতে। সেদিন যদি ঘাতকদের নিক্ষিপ্ত গ্রেনেড সমাবেশের জন্য ব্যবহƒত ট্রাকে বিস্ফোরিত হতো তবে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের কোন সিনিয়র নেতাই প্রাণে রক্ষা পেতেন না। আর এটাই ছিল ঘাতকচক্রের মূল পরিকল্পনা।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রত্যক্ষ মদদ ও সক্রিয় অংশগ্রহণে যে এই ভয়াল গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল মামলার রায়েও তা প্রমাণিত হয়েছে। একুশ আগষ্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদন্ড এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দিয়ে গত বছরের ১০ অক্টোবর রায় দেন বিচারিক আদালত। এই রায়ের বিষয়ে হাইকোর্টে আপীল মামলা শুনানির অপেক্ষায় আছে। বর্তমানে শুনানির জন্য পেপারবুক তৈরির কাজ চলছে।
২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট সেদিনটি ছিল শনিবার। বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে সন্ত্রাস ও বোমা হামলার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সমাবেশ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা। হাজার হাজার মানুষের স্রোতে সমাবেশটিতে। প্রায় ৫০ হাজার মানুষের সমাগমে রীতিমতো মহাসমাবেশে রূপ নেয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের চতুর্দিক। সমাবেশ শেষে সন্ত্রাসবিরোধী মিছিল নিয়ে ধানম-ির ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে যাওয়ার কথা। তাই মঞ্চ নির্মাণ না করে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে একটি ট্রাককে মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বুলেটপ্রুফ মার্সিডিজ বেঞ্জ চেপে বিকেলে ৫টার একটু আগে সমাবেশস্থলে পৌঁছান তৎকালীন বিরোধীদলের নেতা শেখ হাসিনা। সমাবেশে অন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্যের পর শেখ হাসিনা বক্তব্য দিতে শুরু করেন।
সময় তখন বিকেল ৫টা ২২ মিনিট। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে বক্তৃতা শেষ করে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা তাঁর হাতে থাকা একটি কাগজ ভাঁজ করতে করতে এগুতে থাকলেন ট্রাক থেকে নামার সিঁড়ির কাছে। কয়েকজন ফটো সাংবাদিক বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে একটু দাঁড়াতে বললেন কতগুলো ছবি তোলার জন্য। মুহূর্তেই শুরু হলো নারকীয় গ্রেনেড হামলা। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে লাগল একের পর এক গ্রেনেড। আর জীবন্ত বঙ্গবন্ধু এভিনিউ মুহূর্তেই পরিণত হলো মৃত্যুপুরীতে। শেখ হাসিনাকে টার্গেট করে খই ফোটার মতো একের পর এক গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটায় ঘাতকরা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ১২-১৩টি গ্রেনেড হামলার বীভৎসতায় মুহূর্তেই রক্ত মাংসের স্তূপে পরিণত হয় সমাবেশস্থল। রক্তগঙ্গা বইয়ে যায় এলাকাজুড়ে।
ঘাতকদের প্রধান লক্ষ্যই ছিল শেখ হাসিনা। পরিস্থিতির তাৎপর্য বুঝতে পেরে ট্রাকে অবস্থানরত নেতৃবৃন্দ ও শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তারা মানবঢাল রচনা করে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেন বঙ্গবন্ধুর এই কন্যাকে। নেতা ও দেহরক্ষীদের আত্মত্যাগ ও পরম করুণাময়ের অশেষ রহমতে মৃত্যুজাল ছিন্ন করে অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষাপান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আরেকটি রক্তাক্ত ১৫ আগষ্ট ঘটাতেই শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে উপর্যুপরি ১৩টি গ্রেনেড মেরেই ক্ষান্ত হয়নি ঘাতকরা; গ্রেনেডের আঘাতে পরাস্ত করতে না পেরে ওইদিন শেখ হাসিনার গাড়িতে ঘাতকরা ছুড়েছিল বৃষ্টির মতো গুলি। একেবারে পরিকল্পিত ও টার্গেট করা ঘাতকদের নিক্ষিপ্ত গুলি ভেদ করতে পারেনি শেখ হাসিনাকে বহনকারী বুলেটপ্রুফ গাড়ির কাঁচ। শেখ হাসিনাকে আড়াল করে বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে জীবন বিলিয়ে দেন তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মী ল্যান্স কর্পোরাল (অব) মাহবুবুর রশীদ।
পরিকল্পিত হামলায় মৃত্যুর দুয়ার থেকে শেখ হাসিনা ফিরে এলেও ওইদিন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয় পুরো এলাকা। এই ভয়ঙ্কর গ্রেনেড হামলার পর সেদিন স্লিন্টারের আঘাতে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন শত শত মানুষ। আকস্মিক মৃত্যু আর রক্তস্রোতে লন্ডভন্ড শান্তি প্রিয় অসংখ্য মানুষের হাত-পা’সহ মানবদেহের বিভিন্ন অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। কারও হাত নেই, কারও পা উড়ে গেছে। রক্তে ভিজে লাল হয়ে যায় পিচঢালা কালো পথ। অস্থায়ী সভামঞ্চ ট্রাকের চারপাশে রক্তের অনাহূত আল্পনা, শত শত মানুষের আত্মচিৎকার। বেঁচে থাকার জন্য, প্রাণ বাঁচানোর জন্য মুমূর্ষদের আকুতি, কাতর আর্তনাদসহ অবর্ণনীয় মর্মান্তিক সেই দৃশ্য।
নারকীয় হামলা প্রতিহতে সেই সময়ে কোনই ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোটের পুলিশ বাহিনী। শত শত রক্তাক্ত-ছিন্নভিন্ন হওয়া মানুষগুলোকে উদ্ধারের পরিবর্তে পরিকল্পিতভাবে চতুর্দিক থেকে টিয়ারগ্যাস ছুড়ে ও আক্রান্তদের ওপর লাঠিচার্জ করে নির্বিঘেœ ঘাতকদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করা হয়। এমনকি অবিস্ফোরিত গ্রেনেড উদ্ধার করা হলেও আলামত নষ্ট করতে সেগুলোর বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। হামলাস্থলে থাকা সব আলামত একে একে ধ্বংস করা হয়।
এমনকি শত শত আহতরা যেন চিকিৎসা না পায় সেজন্যও উপরের নির্দেশে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (তৎকালীন পিজি হাসপাতাল) সরকারী হাসপাতালগুলোর চিকিৎসকদের অলিখিত নিষেধাজ্ঞাও দেয়া হয়েছিল। হামলার পর অগণিত আহতদের নিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে নেয়া হলেও মূল প্রবেশদ্বার বন্ধ করে রাখা হয়। বিএনপি-জামায়াত জোট সমর্থক ড্যাবের চিকিৎসক নেতারাও চিকিৎসা দিতে গড়িমসি করে। ফলে আহত বেশিরভাগ নেতাকর্মীই সরকারী হাসপাতালের পরিবর্তে শিকদার মেডিক্যাল কলেজ, মিটফোর্ড হাসপাতালসহ নানা ক্লিনিকে ভর্তি হন। এমনকি নিহতদের লাশের ময়নাতদন্ত নিয়েও নানা ষড়যন্ত্র চক্রান্ত ঘটেছে ওই ভয়াল সময়েও।
২১ আগষ্টের সেই রক্তাক্ত ঘটনায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ১৬ জন। নারী নেত্রী আইভি রহমান ৫৮ ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ২৪ আগষ্ট মারা যান। আহত হওয়ার পর প্রায় দেড় বছর মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে হেরে যান আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতা ও প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ। রক্তাক্ত বীভৎস ওই ভয়াল গ্রেনেড হামলায় নিহত অন্যরা হলেনÑ শেখ হাসিনার দেহরক্ষী ল্যান্স কর্পোরাল (অব) মাহবুবুর রহমান, মোশতাক আহমেদ সেন্টু, হাসিনা মমতাজ রিনা, রিজিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (সবার প্রিয় আদা চাচা), রতন শিকদার, মোহাম্মদ হানিফ ওরফে মুক্তিযোদ্ধা হানিফ, লিটন মুনশি, আবদুল কুদ্দুছ পাটোয়ারী, বিল্লাল হোসেন, আব্বাছ উদ্দিন শিকদার, আতিক সরকার, মামুন মৃধা, নাসির উদ্দিন সরদার, আবুল কাসেম, আবুল কালাম আজাদ, আবদুর রহিম, আমিনুল ইসলাম মোয়াজ্জেম, জাহেদ আলী, মোতালেব ও সুফিয়া বেগম।
আহত হয়েছিলেনÑ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি (তৎকালীন সভাপতিমন্ডলীর সদস্য) জিল্লুর রহমান, প্রয়াত আবদুর রাজ্জাক, ঢাকার সাবেক মেয়র প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফ, আমির হোসেন আমু, প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ওবায়দুল কাদের, এডভোকেট সাহারা খাতুন, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, কাজী জাফর উল্লাহ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, এস এম কামাল হোসেন, পংকজ দেবনাথ, সাঈদ খোকন, নজরুল ইসলাম বাবু, নাসিমা ফেরদৌসী, শাহিদা তারেক দিপ্তী, উম্মে রাজিয়া কাজল, আসমা জেরিন ঝুমু, রাশেদা আক্তার রুমা, আবুল হোসেন মোল্লা, মামুন মল্লিক, কাজী মোয়াজ্জেম হোসেইন, হামিদা খানম মনিসহ পাঁচ শতাধিক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী।
বঙ্গবন্ধু হত্যার ঊনত্রিশ বছর পর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে আবারও ঘাতকদের দল এই আগষ্টেই জোট বেঁধেছিল। শোকাবহ-রক্তাক্ত আগষ্ট মাসেই আরেকটি ১৫ আগষ্ট ঘটানোর টার্গেট থেকে ঘাতক হায়েনার দল গ্রেনেড দিয়ে রক্ত¯্রােতের বন্যা বইয়ে দিয়েছিল বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সমাবেশস্থলে। টার্গেট ছিল এক ও অভিন্ন। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগকে সম্পূর্ণ নেতৃত্বশূন্য ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করতেই ঘাতকরা চালায় এই দানবীয় হত্যাযজ্ঞ।
আহত হওয়া পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীর অনেকেই ঘাতক গ্রেনেডের স্পিøন্টারের দুর্বিষহ যন্ত্রণা নিয়েই ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছেন মৃত্যুর দিকে। হাত-পা-চোখসহ দেশের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হারিয়ে অসংখ্য নেতাকর্মী পঙ্গুত্ববরণ করে জীবনধারণ করছেন। সর্বাঙ্গে বিঁধে থাকা স্পিøন্টারের জীবনযন্ত্রণা ভোগ করেই মারা গেছেন বর্ষীয়ান রাজনীতিক আবদুর রাজ্জাক, ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র ও আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ হানিফসহ অনেকেই।