কাজিরবাজার ডেস্ক :
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে বৈঠকের পর ঢাকায় ফিরে শুক্রবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বিবিসিকে বলেছেন, ভারত সীমান্তের পুরোটাতেই কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করতে চায়। জবাবে তিনি ভারতের মন্ত্রীকে বলেছেন, আইন অনুযায়ী করা হলে তাতে বাংলাদেশের আপত্তি করার কিছু নেই।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘এই বর্ডারকে তারা কাঁটাতারের আওতায় আনতে চাচ্ছে পুরোটাই। আমরা বলেছি জয়েন্ট বাউন্ডারি অ্যাক্ট অনুযায়ী আগে তারা যেভাবে করেছে সেভাবে বাকিটা করলে আমাদের অসুবিধা নেই।’
অনুপ্রবেশ ইস্যুতে মতবিরোধ : অমিত শাহ’র সঙ্গে তার আর কী কী বিষয়ে কথা হয়েছে- এই প্রশ্নে আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশিদের অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগ তুলে তা ঠেকাতে সীমান্তে বাংলাদেশকে ব্যবস্থা নিতে বলেছে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খান বলেছেন, তিনি ভারতকে জানিয়েছেন যে, বাংলাদেশ থেকে সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে কোনো বাংলাদেশি ভারতে যায় না।
বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দিল্লির বৈঠকে এসব আলোচনা হলেও অনুপ্রবেশ ইস্যুতে কোনো ঐকমত্য না হওয়ায় কোনো যৌথ বিবৃতি দেয়া হয়নি। দুই দেশে আলাদা আলাদাভাবে বক্তব্য তুলে ধরেছে।
অনুপ্রবেশ ইস্যু যৌথ বিবৃতিতে রাখার ব্যাপারে ভারতে দিক থেকে একটা চাপ তৈরি করা হয়েছিল বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
যদিও অবৈধ অনুপ্রবেশের বিষয়টি এবার বাংলাদেশ এবং ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে বৈঠকের আলোচ্য-সূচিতে ছিল না, কিন্তু ভারতের পক্ষ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশের গুরুত্ব দিয়ে তোলা হয় বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্রে জানা গেছে। ওই সূত্রগুলো বলেছে, অনুপ্রবেশ ইস্যুতে বাংলাদেশ ভারতের বক্তব্য গ্রহণ করেনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিবিসিকে বলেছেন, সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশের কোনো নাগরিক ভারতে যায় না, এটাই তিনি ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছেন।
‘অনুপ্রবেশের ব্যাপারে তারা যেটা আমাদেরকে বলছেন, যেটা ওনারা বলতে চাচ্ছেন, যে তোমাদের দেশ থেকেতো বহুলোক আসে। আমি সেখানে বলেছি, আমাদের দেশ থেকে এখন আর অবৈধভাবে যায় না। ভিসা নিয়েই যায়। অবৈধভাবে যাওয়ার কোন প্রশ্ন আসে না কারণ আমাদের দেশে মাথাপিছু আয় বেড়ে গেছে। প্রবৃদ্ধি বেড়ে গেছে।’
ভারতের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, গত বছর ২৩ লাখ লোক বৈধভাবে গিয়েছে।
‘তারাই স্বীকার করলেন, গত বছর নাকি আমাদের ১৪ লাখ লোককে তারা ভিসা দিয়েছেন। আর মাল্টিপল ভিসা দেয়া ছিল। সব মিলিয়ে ২৩ লাখ বাংলাদেশের নাগরিক গত বছর ভারত গিয়েছিল।’
পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচন প্রসঙ্গ : জানা গেছে, ভারতের পক্ষ থেকে পশ্চিম বাংলায় সামনের বিধানসভা নির্বাচনের সময় সীমান্তে নজরদারির জন্য বাংলাদেশকে বলা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিবিসিকে বলেন, ‘ওনারা (ভারত) বলছিলেন যে, পশ্চিম বাংলায় ইলেকশন হবে, সেই সময় বর্ডারটা নিয়ন্ত্রণে থাকে। আমি বলেছি, বর্ডার আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। আমি আরও বলেছি, আমাদের দেশ থেকে তোমাদের দেশে বেড়াতে যায়, চিকিৎসা সেবা নিতে যায় বা শিক্ষা সফরে যায়। নেক্সটডোর নেইবার (প্রতিবেশী) তোমরা, সেজন্যই যায়।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রুখসানা কিবরিয়া মনে করেন, সীমান্তে মানুষ হত্যাসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে ঢেকে দেয়ার জন্য ভারত তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়কে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় এনেছে। -বিবিসি বাংলা