ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা

20

ডেঙ্গুরোগের প্রকোপ ও বিস্তার। গত কয়েক বছর ধরেই এটা প্রায় নিয়মিত হচ্ছে বিশেষ করে বর্ষা ঋতুর শুরু ও শেষে। ডেঙ্গুর আরও একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এটি একটি নগরকেন্দ্রিক রোগব্যাধি। গ্রামাঞ্চলে মশার উপদ্রব থাকলেও সচরাচর ডেঙ্গু তেমন প্রকট আকারে দেখা দেয় না। অন্যান্য প্রজাতির মশার মাধ্যমে ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়াসহ অন্যান্য রোগব্যাধি ছড়ালেও ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ ও বিস্তার ঘটে থাকে প্রধানত এডিস মশার মাধ্যমে। এই মশার একটি বৈশিষ্ট্য হলো, এরা মানুষকে প্রধানত কামরায় দিনের বেলায়, সকাল ও সন্ধ্যায়। প্রজনন মৌসুমে ডিম পাড়ে অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছ ও পরিষ্কার পানিতে, যা জমে থাকে ফুলগাছের টবে, পরিত্যক্ত টায়ার টিউব, ডাবের খোসা, ফ্রিজের পানি ইত্যাদিতে। আর এ কারণেই শহর-নগরের অধিবাসীরা ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ায় বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। এক হিসাবে জানা যায়, রাজধানীর দুই সিটির অন্তত চার লাখ বাসাবাড়ি ও অফিস রয়েছে ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে। তবে মশার অভ্যাস হলো উড়ে বেড়ানো এবং তা ডেঙ্গুবাহিত হলে রোগ ছড়িয়ে দেয়। সুতরাং মহানগরীর কোন এলাকা নিরাপদ, এমন বলা যাবে না।
প্রতিবছরই ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ ঘটে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামে। তবে এবার সংক্রমণটি একটু বেশি। স্বাস্থ্যমন্ত্রীও তা স্বীকার করেছেন। তাই বলে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। শরীর ব্যথাসহ জ্বরে আক্রান্ত হলেই সতর্ক ও সাবধান হতে হবে, অবহেলা না করে। খেতে হবে প্রচুর পানি, খাবার স্যালাইন ও ব্যথানাশক। সর্বোপরি মশা নিরোধে মশারি তো আছেই। তবে হেমোরেজিক ডেঙ্গু হলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া আবশ্যক।
ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে কার্যকর ওষুধ ও টিকা অদ্যাবধি না পাওয়া গেলেও সময়োপযোগী সুচিকিৎসার মাধ্যমে ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণে আনা অনেকটাই সম্ভব। ডেঙ্গু প্রতিরোধে বাংলাদেশেও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম বাড়ানো অত্যাবশ্যক। কেননা এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া প্রায়ই এখানে হামলা করে থাকে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত খরা, অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, ভূমিকম্পসহ অপুষ্টি ও অনাহারও কম নয়। এর পাশাপাশি বাড়তি উপদ্রব নিত্যনতুন রোগব্যাধি, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, এইচআইভি এইডস, সোয়াইন ফ্লু, বার্ড ফ্লু, এ্যানথ্রাক্স, ইবোলা ভাইরাস, জিকা ভাইরাস ইত্যাদি। পুরনো ওষুধবিষুধ, এ্যান্টিবায়োটিক ও প্রতিষেধক বাতিল হয়ে যাচ্ছে। সে অবস্থায় নতুন রোগব্যাধির বিরুদ্ধে নতুন প্রতিষেধক আবিষ্কার এখন সময়ের দাবি।