কাজিরবাজার ডেস্ক :
উপজেলা নির্বাচনের পঞ্চম ও শেষ ধাপে ভোট গ্রহণ করা হচ্ছে আজ মঙ্গলবার। সকাল নয়টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হবে। তা বিরতি ছাড়া বেলা পাঁচটা পর্যন্ত চলবে। ইসি জানিয়েছে, ১৬ উপজেলায় এদিন নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করা হলেও আগের স্থগিত আরও ৫ উপজেলায় ভোট গ্রহণ করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে আজ ২১ উপজেলায় ভোট নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ইসি। গত রবিবার মধ্য রাতে এসব নির্বাচনী এলাকায় সব ধরনের প্রচার বন্ধ হয়ে গেছে। এখন অপেক্ষা শুরু নির্বাচনের।
ভোটের আগের দিন সোমবার ইসি সচিবালয়ের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সচিব মোঃ আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনে সহিংসতা নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে কমিশন তার দায়িত্ব পালন সঠিকভাবে পালন করবে। তিনি বলেন, নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন কমিশন সব প্রস্তুতি নিয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় অতিরিক্ত বিজিবি মোতায়েন করাও হয়েছে। কাজেই আশা করি উপজেলা নির্বাচনের পঞ্চম দফায় ভোটার উপস্থিতি বাড়বে। তিনি জানান, পঞ্চম দফায় চারটি উপজেলায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হবে। গাজীপুর সদর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর, নোয়াখালী সদর ও নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলায় ইভিএমে ভোট গ্রহণের সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সহিংসতার কারণে একজন প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি হাইকোর্ট থেকে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। আর অন্য একটি উপজেলায় অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ায় স্থানীয় প্রশাসনকে বদলি করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হয়েছে পঞ্চম ও শেষ ধাপের উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৬১ জন ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০১ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। এর মধ্যে নেয়াখালী সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে একজন প্রার্থী থাকায় তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়াও ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে মামলার কারণে নির্বাচন স্থগিত রয়েছে। অন্য পদে ভোট গ্রহণ করা হচ্ছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন নির্বাচনী কেন্দ্রে ব্যালট পেপারসহ ভোটার সরঞ্জাম কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে। নির্বাচনী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টহল দিচ্ছে। এছাড়াও নির্বাচনে কেন্দ্রভিত্তিক আলাদা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কোন অনিয়নের অভিযোগ পেলে সেই কেন্দ্রে নির্বাচন বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
পঞ্চম ও শেষ দফায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে রবিবার মধ্য রাত থেকেই সব ধরনের প্রচার কাজ শেষ হয়েছে। নির্বাচন উপলক্ষে ইতোমধ্যে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, নির্বাচনী উপকরণ পাঠানোসহ প্রায় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ইসি। ভোটের পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ রাখতে মাঠে নামছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও। ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখা জানিয়েছে, মঙ্গলবার ২১ উপজেলায় ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে ১৬ উপজেলায় ভোটগ্রহণের তফসিল দেয়া হয়েছিল। এরসঙ্গে আগে স্থগিত হওয়া উপজেলার ভোটও যোগ হয়েছে।
তফসিলের ১৬টি উপজেলা হলো- শেরপুরের নকলা, নাটোরের নলডাঙ্গা, সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী, বরগুনার তালতলী, নারায়ণগঞ্জের বন্দর, গাজীপুর সদর, রাজবাড়ীর কালুখালী, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ, মাদারীপুর সদর, ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার বাঞ্ছারামপুর ও বিজয়নগর, কুমিল্লার আদর্শ সদর ও সদর দক্ষিণ এবং নোয়াখালী সদর উপজেলা। এছাড়া এদিন আগে স্থগিত হয়ে যাওয়ায় নেত্রকোনার পূর্বধলা, সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া ও ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলায় ভোট নেয়া হচ্ছে।
নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, ভোটগ্রহণ শুরুর ৩২ ঘণ্টা আগে নির্বাচনের সব প্রচার বন্ধ রাখতে হয়। সে অনুযায়ী, রবিবার দিনগত মধ্যরাতেই শেষ হয়েছে প্রচার। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে পর গত ১০ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে ধাপে ধাপে উপজেলা নির্বাচন। ইতোমধ্যে ৪ দফায় উপজেলায় নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। আজ মঙ্গলবার শেষ দফায় ভোট গ্রহণ করা হচ্ছে। দ্বিতীয় ধাপে ১৮ মার্চ, তৃতীয় ধাপে ২৪ মার্চ, চতুর্থ ধাপে ৩১ মার্চ ভোটগ্রহণ করে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে চতুর্থ ধাপে ৩১ মার্চ ছয়টি উপজেলায় এবং ২৪ মার্চ তৃতীয় ধাপেও চারটি উপজেলায় ইভিএমে ভোটগ্রহণ করে ইসি। উপজেলায় নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে হলে এবারের ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হয়েছে উন্মুক্তভাবে। একাদশ জাতীয় নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করার পরপরই বিএনপি এই সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দেয়। ফলে উপজেলা নির্বাচনে অন্য কোন দলের প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেই। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পাশাপাশি দলটির বিদ্রোহী প্রার্থীরা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।