কাজিরবাজার ডেস্ক :
বাবা ঠিক মা নয়। একটু দূরের। বাইরে বাইরেই বেশি থাকেন। কঠিন চেহারা। শক্ত চোয়াল। অত সহজে হাসেন না। বাবার সঙ্গে কথা বলতে হয় মেপে। ভুল শুদ্ধ হলেই বকা খাওয়ার ভয়। চার পাশে দেয়াল তুলে রাখা এই বাবাকে কোন না কোন সময় ঠিক চিনে ফেলে সন্তান। বাইরে তিনি যত কঠিন, ভেতরে ততটাই কোমল। সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য নিজের বর্তমানকে হাসিমুখে উৎসর্গ করা এই বাবাদের আজ আলাদাভাবে স্মরণ করার দিন। আজ রবিবার বিশ্ব বাবা দিবস।
প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রবিবার এই দিবসটি উদযাপন করা হয়। সে হিসেবে আজ ১৬ জুন বিশ্ব বাবা দিবস। পৃথিবীর অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি উদযাপিত হবে।
হ্যাঁ, প্রতিদিনই বাবার জন্য ভালোবাসা। তবে আজ বিশেষ দিবস। মুখ ফুটে ‘ভালোবাসি’ বলার দিন। আজ বাবাকে নিয়ে কেক কাটা হবে। ফুল, নতুন জামা, প্রিয় বই উপহার দেয়া হবে বাবাকে। আর যারা নিজেরাও বাবা হয়েছেন তারা ফিরে যাবেন শৈশবে। পুরনো স্মৃতি থেকে নতুন করে আবিষ্কার করবেন বাবাকে। প্রয়াত বাবার কথা ভেবে নীরবে চোখ মুছবেন অনেকে। বাবা কতদিন কতদিন দেখি না তোমায়…। এই দেখা আর হবে না। নিজের শিশু সন্তানকে বুকে টেনে নিয়ে কষ্ট ভোলার চেষ্টা করবেন কেউ কেউ।
আজ ফেসবুক টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে ঘুরে ফিরেই আসবেন বাবা। পিতার ছবি খুঁজে নিয়ে পোস্ট করবে সন্তান। নিজের ভেতরে বাবাকে নিয়ে যত আবেগ, লিখে তা প্রকাশ করার চেষ্টা করবে।
বাবা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপহারগুলোর নিঃসন্দেহে একটি। সন্তানের সকল বায়নাই মায়ের কাছে। এটা চাই। ওটা দাও। মা এসব আবেদন নিবেদন শোনেন। আর বাস্তবায়ন করেন বাবা। দিন-রাত পরিশ্রম। খাটুনি। এর সামান্যও নিজের জন্য নয়। বরং সন্তানের মুখে হাসি ফোটানোর সব চেষ্টা করেন তিনি। বাবাদের ভেঙে পড়তে নেই। কাঁদতে মানা। কারণ বাবা কাঁদলে বাবা ভেঙে পড়লে সন্তানদের আর আশা থাকে না কোন। কবির ভাষায় : ‘ঝিনুক নীরবে সহো/ঝিনুক নীরবে সহো,/ঝিনুক নীরবে সহে যাও/ভিতরে বিষের বালি, মুখ বুঁজে মুক্তা ফলাও!’ কবি আবুল হাসানের সেই ঝিনুকটিই যেন বাবা। সব কষ্ট একা বুকে বয়ে বেড়ান। সন্তানকে বুঝতে দেন না।
এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘লাইফ ইজ বিউটিফুল’র সেই বাবার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত চলচ্চিত্রে খুঁজে পাওয়া যায় অসাধারণ এই বাবাকে। অভিনেতা রবার্তো বেনিনির তুলে ধরা চরিত্রটির নাম গুইডো। শিশু সন্তানের নাম যশোয়া। জার্মান সেনারা ট্রেনে করে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে নিয়ে যায় পিতা পুত্রকে। অসহনীয় যন্ত্রণার জীবন। যে কোন মুহূর্তে মৃত্যু। কিন্তু ছেলেকে এই পরিস্থিতি এতটুকু বুঝতে দেননি বাবা। ছেলেকে তিনি বলার চেষ্টা করেন, এটা একটা খেলা। যে দ্রুত বেশি পয়েন্ট পাবে তাকে সত্যিকারের একটি ট্যাঙ্ক উপহার দেয়া হবে। বাবা ছেলেকে বলেন, সে যদি মায়ের কাছে যেতে চায়, খিদে পেলে খাওয়ার জন্য কান্না করে, আর ঘরে লক্ষ্মী ছেলের মতো লুকিয়ে না থাকে তাহলে পয়েন্ট কাটা যাবে। এভাবে বাবা করুণ মৃত্যুর শিকার হলেও, কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের আতঙ্ক থেকে সন্তানকে শতভাগ রক্ষা করেন।
প্রসঙ্গত, ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই আমেরিকার পশ্চিম ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টের এক গীর্জায় সর্বপ্রথম বাবা দিবস উদ্যাপিত হয় বলে তথ্য পাওয়া যায়। পাশাপাশি সনোরা স্মার্ট ডড নামের ওয়াশিংটনের এক ভদ্র মহিলার মাথাতেও বাবা দিবসের চিন্তা আসে। ১৯০৯ সালে ভার্জিনিয়ার বাবা দিবসের কথা তিনি জানতেন না। ডড এই ধারণা পান গীর্জার এক পুরোহিতের বক্তব্য থেকে। সেই পুরোহিত মা’কে নিয়ে অনেক ভাল ভাল কথা বলছিলেন। তখনই তার মনে হয়, বাবাদের নিয়েও কিছু করা দরকার। পরে তিনি সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগেই পরের বছর ১৯১০ সালের ১৯ জুন থেকে বাবা দিবস উদযাপন শুরু করেন। কালক্রমে এসেছে বাংলাদেশেও।