কাজিরবাজার ডেস্ক :
চাঁদ দেখতে উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্র কিনতে যাচ্ছে সরকার। এ ব্যাপারে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে উদ্যোগ নিয়েছে। এবার ঈদুল ফিতরের আগে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।
সোমবার (১০ জুন) জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
কমিটির সভাপতি রুহুল আমীন মাদানী বলেন, শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা নিয়ে বিতর্কের প্রেক্ষাপটে ভবিষ্যতে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের সমস্যা আর যাতে না হয় সেজন্য চাঁদ দেখার জন্য সনাতন পদ্ধতি থেকে আধুনিক পদ্ধতিতে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছি। মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে উদ্যোগ নিয়েছে বলে আমাদের জানিয়েছে।’
প্রসঙ্গত, এবারের শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা নিয়ে দুটি ঘোষণা আসে। জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি গত ২৯ রমজান রাত পৌনে ৯টায় প্রথমে ঘোষণা দেয় দেশের কোথাও শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। ঈদ হবে ৬ জুন। পরে তারারির নামাজের পর রাত ১১টার দিকে আবার কমিটি ঘোষণা দেয় চাঁদ দেখা গেছে। ঈদ হবে ৫ জুন। শেষ পর্যন্ত ৫ জুন দেশে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়।
বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে কমিটির একাধিক সদস্য এবারের ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা নিয়ে কেন এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সে প্রশ্ন তোলেন। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহর অনুপস্থিতিতে মন্ত্রণালয়ের সচিব আনিছুর রহমান বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন। তিনি কমিটিকে বলেন, ৪০–৪৫ জন আলেমের পরামর্শে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রথমবার দেওয়া ঘোষণার আগে দেশের কোথাও চাঁদ দেখা যায়নি। তখন আলেম-ওলামারা মত দেন, সৌদি আরবে চাঁদ দেখার সঙ্গে এ দেশের ঈদের সম্পর্ক নেই। দেশে চাঁদ দেখা যেতে হবে। এ কারণে প্রথম ঘোষণা আসে। পরে ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তি চাঁদ দেখতে পেয়েছেন। এ কারণে চাঁদ দেখার ঘোষণা দেওয়া হয়।
বৈঠক সূত্র জানায়, চাঁদ দেখার বিষয়ে আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার নিয়ে বৈঠকে প্রশ্ন ওঠে। তখন ধর্ম সচিব জানান, চাঁদ দেখার জন্য থিওডোলাইট জাতীয় যন্ত্র কেনা হবে। প্রতিটির দাম পড়বে ৫০ লাখ টাকার মতো।
সভাপতি রুহুল আমীন মাদানী বলেন, চাঁদ দেখা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। মন্ত্রী যেটা করেছেন তা আলেমদের সঙ্গে পরামর্শ করেই করেছেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে চাঁদ দেখার খবর আসার পর তিনি ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়েছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চাঁদ দেখা নিয়ে এ ধরনের সমস্যা বিশ্বের অনেক দেশেই হয়। সৌদি আরবেও চাঁদ দেখা নিয়ে ভুল হওয়ার কারণে কয়েক মিলিয়ন ডলার কাফফারা দিতে হয়েছে।
তিনি বলেন, তারা মন্ত্রণালয়কে সতর্ক করে দিয়েছেন, যাতে আগামীতে এ ধরনের বিতর্ক তৈরি না হয়। ভবিষ্যতে উন্নত প্রযুক্তির টেলিস্কোপ ব্যবহার করার প্রস্তাব দিয়েছে সংসদীয় কমিটি। টেলিস্কোপ থাকলেও তা আধুনিক নয়। মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা চাঁদ দেখার জন্য আধুনিক যন্ত্র কিনবে।
এছাড়া বৈঠকে আসন্ন পবিত্র হজ্ব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কমিটির সভাপতি বলেন, হজ্ব যাতে সুষ্ঠু হয়, সে বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে সার্বিক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। হজ্বের সময় আমাদের ইমিগ্রেশন সৌদি আরবে হতো। এতে অনেক কষ্ট করতে হতো। হাজিদের সুবিধার্থে এ বছর এটি ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে।
হজ্ব ফ্লাইটে সিট ফাঁকা থাকার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এই বিষয়টি জানিয়েছি। আশা করি এ বছর এটা আর হবে না।
সংসদ সচিবালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হজ্ব ক্যাম্পের সিটসহ অন্যান্য সমস্যা, ফ্লাইটের সিডিউল সঠিক সময়ে না হওয়া এবং সৌদি আরব যাওয়ার পর বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে তা নিরসন করতে সংসদীয় কমিটি ও মন্ত্রণালয় একসঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত হয়।
রুহুল আমীন মাদানীর সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য শওকত হাচানুর রহমান, মনোরঞ্জন শীল গোপাল, মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী, মো. ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ, এইচ এম ইব্রাহিম, তাহমিনা বেগম ও বেগম রতœা আহমেদ অংশ নেন।