কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি সমাজ গড়তে চাইলে সেখানে নারী-পুরুষ সবার অধিকার থাকতে হবে উল্লেখ করে বলেছেন, একটি সমাজে শুধু একটা দিকেই উন্নতি করলে সমাজটা পঙ্গু হয়ে যাবে, উন্নতি হবে না। তাঁর সরকার নারী-পুরুষের সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করছে। তিনি বহুমুখী ব্যবসা উদ্যোগের জন্য নারীদের সমান ও দক্ষ করে গড়ে তোলার আহ্বান জানান। রবিবার গণভবনে জয়িতা ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্ণরস এর বিশেষ সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ অর্থনীতির গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি যে যদি গ্রামের অর্থনীতিকে শক্তিশালী না করি, গ্রামের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা না বাড়াই, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করি, তাহলে আমাদের অর্থনীতি কখনই উন্নতি হবে না। গ্রামের মেয়েদের জন্য আমরা কি কি কাজের ব্যবস্থা করতে পারি, এরই মধ্যে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রামের মেয়েদের মধ্যে যে মেধাটা আছে, যে শক্তিটা আছে তাদের ট্রেনিং দিলে তারা ভাল কাজ করতে পারে। তাদের নিজের উৎপাদিত পণ্যটা তারা নিজেরা বাজারজাত করতে পারে বা তারা নিজেরাও আর্থিকভাবে সচ্ছল হতে পারে। সংসারে অবদান রাখতে পারে। সেটা তারা কিভাবে করতে পারে এমন নানামুখী চিন্তা আমরা করেছি এবং সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জয়িতা ফাউন্ডেশনকে বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, তার সরকার নারী-পুরুষের সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করছে। তিনি বহুমুখী ব্যবসা উদ্যোগের জন্য নারীদের সমান ও দক্ষ করে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান হিসেবে জয়িতা ফাউন্ডেশনের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি এর আওতায় কর্মরত তৃণমূল পর্যায়ে যে উদ্যোক্তা রয়েছেন তাদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।
জয়িতা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জয়িতা নামটা দিয়েছিলাম মেয়েদের চিন্তা করে। একটা মেয়ে কাজের মধ্য দিয়ে যখন আর্থিক সচ্ছলতা অর্জন করবে, তার নিজের মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাস জেগে উঠবে। সে যেন নিজেকে অপাঙ্ক্তেয় মনে না করে। সমাজে তারও যে একটা গুরুত্ব আছে সেটা যেন মনে করতে পারে। সেও একটা ক্ষেত্রে জয়ী হলে সে কথটা চিন্তা করে কিন্তু আমরা এই নামটা দিয়েছিলাম।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জয়িতা ফাউন্ডেশন গঠনের লক্ষ্য ছিল আমরা একটা ব্যবস্থা করে দেই, তারা (মেয়েরা) উৎপাদনমুখী কাজ করবে, সেটাকে বাজারজাত করবে এবং তাদের আর্থিক সচ্ছলতা আসবে। আমাদের সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে হবে কারিগরি শিক্ষার ওপর যাদে কিছু কাজ তারা করে খেতে পারে। সেজন্য কারিগরি শিক্ষায় সবাই যেন সমান সুযোগ পায় সেজন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
সভায় প্রধানমন্ত্রী সকলের কাছে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, জয়িতা যে উৎপাদনগুলো করবে- তা শুধু কাপড়চোপড় না, খাবারের জিনিস, হাতের জিনিস, বহু জিনিস, এগুলো তৈরি করার মতো কিন্তু মেয়েদের যথেষ্ট দক্ষতা আছে। সামান্য একটু ট্রেনিং পেলে তারা অসাধ্য সাধন করতে পারে, তাদের একটু সুযোগ করে দেয়া এবং তাদের গাইডলাইন দেয়া।
দেশের মেয়েদের অবস্থা সুদৃঢ় করা এবং সম্মানজনক করার জন্যই জয়িতার সৃষ্টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তারা যেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে আবার পরিবারকেও সহযোগিতা করতে পারে সেই সুযোগ সৃষ্টি করাই আমাদের লক্ষ্য।
নারী উদ্যোক্তা ও কর্মীদের নারী-পুরুষের সুষম উন্নয়নের ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি সমাজকে গড়ে তুলতে হলে নারী-পুরুষ সবাইকে সঙ্গে নিয়েই একসঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে। কেউ পেছনে পড়ে থাকলে সমাজটা পঙ্গু হয়ে যাবে। নারী শিক্ষা এবং তাদের মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথ ধরেই তাঁর সরকার কাজ করছে।
নারীর উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর অবদান স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বীরাঙ্গনাদের সামাজিক মর্যাদা দিয়ে তাদের পুনর্বাসন করেন জাতির পিতা। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের পাশাপাশি নারীর কর্মসংস্থান ও ক্ষমতায়নের জন্য বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগের বিষয়গুলোও এ সময় তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
সভার শুরুতেই প্রদত্ত ভাষণে জয়িতা ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারীদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এ প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে সরকার। মেয়েরা যাতে আত্মসম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকতে পারে, স্বাবলম্বী হতে পারে এবং সংসারে যেন তাকে মর্যাদা দেয়া হয়। অর্থাৎ সেও একটি ক্ষেত্রে জয়ী হলো। যাতে নিজেকে আর অবহেলিত ভাবতে না পারে।
শেখ হাসিনা নারীর কল্যাণে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, স্বামী পরিত্যক্তা ভাতা, বিভিন্ন ধরনের বৃত্তি এবং উপবৃত্তি প্রদানসহ সরকারের সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের বিভিন্ন কর্মসূচীর প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। তিনি এ সময় মেয়েদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার সুযোগ করে দেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, না হলে তারা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়বে। এই সংগঠনটিকে (জয়িতা ফাউন্ডেশন) এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে সেখানে কর্মরত সব নারীই বলে উঠতে পারে আমিই জয়িতা।