কাজিরবাজার ডেস্ক :
সিঙ্গাপুরে দুই মাস ১০ দিন চিকিৎসা শেষে ফিরেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বুধবার বিকেল পাঁচটা ৫০ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে তিনি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। দেশে ফিরে নিজের শারীরিক সুস্থতা ফিরে পাওয়ায় চিকিৎসার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানালেন তিনি। জনগণের ভালোবাসায় নতুন জীবন পেয়েছি উল্লেখ করে নতুন উদ্যমে আওয়ামী লীগের পাশে থেকে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন ওবায়দুল কাদর।
এদিকে বিমানবন্দরে প্রিয় নেতাকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে জড়ো হয়েছিলেন বিপুলসংখ্যক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। বিমানবন্দরে প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে ওবায়দুল কাদের বেরিয়ে এলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এবং পরে দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। বিমানবন্দরে ওবায়দুল কাদেরকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আইন বিষয়ক সম্পদক এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মির্জা আজম, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) গোলাম রাব্বানী, সিলেট সিটির সাবেক মেয়র বদরুদ্দিন আহমেদ কামরান, আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ এমপি, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিয়া খাতুন, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার, সাধারণ সম্পাদক অপু উকিলসহ আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। এ সময় সময় প্রিয় নেতাকে ফুল দিয়ে তাকে স্বাগত জানান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী।
এ সময় বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি আবেগ ভরা কণ্ঠে তার চিকিৎসার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, তাকে (প্রধানমন্ত্রী) বলা হয় মাদার অব হিউম্যানিটি। আমার ওই সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরম মমতা নিয়ে এগিয়ে এসেছেন। তিনি একজন মমতাময়ী মা। তিনি সত্যিই মাদার অব হিউম্যানিটি। তার কাছে আমার ঋণের বোঝা আরও বেড়ে গেল। তার সুস্থতা কামনার জন্য বঙ্গবন্ধুর অপর কন্যা শেখ রেহানার কাছেও অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ওবায়দুল কাদের। এছাড়াও দলের সব নেতাকর্মীসহ যারা তার খোঁজ খবর রেখেছেন, সুস্থতা কামনা করে দোয়া করেছেন সবার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানান সেতুমন্ত্রী। তিনি বলেন, একজন রাজনীতিবিদের সবচেয়ে বড় অর্জন জনগণের ভালবাসা। জনগণের ভালবাসায় আমি নতুন জীবন পেয়েছি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমার দলের সব নেতাকর্মীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। যারা হাসপাতালে আমার ওই সময়ে ছুটে এসেছিলেন। ওই সময় আমার মধ্যে আমি ছিলাম না, আমি জানতাম না আমার কী হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা। জীবনটা আসলেই স্রোতের প্রতিকূলে চলার মতো। এই শিক্ষা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যা শেখ হাসিনার কাছ থেকে পেয়েছি। মৃত্যুপথযাত্রী অবস্থায় শুধু শেখ হাসিনা নাম ধরে ডেকেছিলেন এবং সে সময় আমি তার ডাকেও সাড়া দিয়েছিলাম।
৬৭ বছর বয়সী ওবায়দুল কাদের হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ছাড়াও শ্বাসতন্ত্রের জটিল রোগ সিওপিডিতে (ক্রনিক অবসট্রাকটিভপালমোনারি ডিজিজ) ভুগছেন। গত ৩ মার্চ সকালে বুকে প্রচন্ড ব্যথা নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ভর্তি হন ওবায়দুল কাদের। সেখানে এনজিওগ্রাম করার পর তার করোনারি ধমনিতে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। সেদিন তাকে দেখতে হাসপাতালে ছুটে যান রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে উপমহাদেশের বিখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দেবী শেঠির পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য ৪ মার্চ তাকে সিঙ্গাপুর নেয়া হয়। ওই রাতেই মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ডাঃ ফিলিপ কোহ’র নেতৃত্বে ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসায় একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়। ২০ মার্চ ওই হাসপাতালে তার বাইপাস সার্জারি করেন মেডিক্যাল বোর্ডের সিনিয়র সদস্য কার্ডিওথোরাসিক সার্জন ডাঃ সিবাস্টিন কুমার সামি। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে গত ২৬ মার্চ ওবায়দুল কাদেরকে হাসপাতালের আইসিইউ থেকে কেবিনে নেয়া হয়। এক মাস পর হাসপাতাল ছাড়লও চিকিৎসকরা ‘চেকআপের জন্য’ আরও কিছু দিন তাকে সিঙ্গাপুরে থাকার পরামর্শ দেন। এরপর একটি বাসা ভাড়া করে সিঙ্গাপুরে অবস্থান করেন ওবায়দুল কাদের।
সিঙ্গাপুরে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে ছিলেন তার সহধর্মিণী ইসরাতুন্নেসা কাদের, এপিএস মহিদুল হক, সেতু বিভাগের তথ্য কর্মকর্তা শেখ ওয়ালিদ ফাইয়াজ, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা সুখেন চাকমা, ব্যক্তিগত ফটোগ্রাফার মনসুরুল আলমসহ ঘনিষ্ঠ কয়েকজন।