কানাইঘাটে স্ত্রীর পরকীয়ায় বাধা দেয়ায় স্বামীকে জবাই করে হত্যা

150
কানাইঘাটে নিহত ফারুকের জবাইকৃত লাশ ও আটক পাষন্ড স্ত্রী হোসনা বেগম।

কানাইঘাট থেকে সংবাদদাতা :
কানাইঘাটে পরকীয়া প্রেমে বাধা দেওয়ায় ফারুক আহমদ নামে এক যুবক কে গলা কেটে হত্যা করেছে তার স্ত্রী হোসনা বেগম সহ তার পরকীয়া প্রেমিক মোস্তফা ও তার সহযোগীরা। কানাইঘাট থানা পুলিশ স্ত্রীকে আটকের পর তার স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দীর সূত্র ধরে হত্যাকান্ডের দু’দিন পর গতকাল বুধবার ভোরে সেফটি ট্যাংকির ভিতর থেকে নিহত ফারুক আহমদ (৩০) এর লাশ উদ্ধার করেছে। এ নিমর্ম হত্যাকান্ডটি ঘটেছে গত রবিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে উপজেলার লক্ষ্মীপ্রসাদ পশ্চিম ইউপির বাউরভাগ ২য় খন্ড গ্রামে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ফারুক আহমদের স্ত্রী ৪ সন্তানের জননী হোসনা বেগম (২৮) এর সাথে তার স্বামীর চাচাতো ভাই প্রতিবেশি মোস্তফা (২৭) এর পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিল। স্ত্রী হোসনা বেগম কে এ পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে কয়েকবার শাসন করেন প্রবাস ফেরত স্বামী ফারুক আহমদ। তিনি তার স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমিক মোস্তফা কে ও শাসান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে স্ত্রী হোসনা ও তার পরকীয়া প্রেমিক মোস্তফা, ফারুককে খুন করার পরিকল্পনা করে। গত রবিবার গভীর রাথে ফারুক আহমদ যখন তার নিজ বসত ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন, তখন স্ত্রী হোসনা বেগম, প্রেমিক মোস্তফা ও তাদের অপর দুই সহযোগী মিলে বসত ঘরের একটি কক্ষে ঘুমন্ত অবস্থায় ফারুক কে খুন করার জন্য ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ী আঘাত শুরু করে। এক পর্যায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে তারা পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করে ফারুককে। হত্যা করার পর তার রক্তাক্ত লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে পাশর্^বর্তী গোরকপুর গ্রামের প্রবাসী মাসুক আহমদের বাড়ীর একটি সেফটি ট্যাংকিতে ফেলে রেখে হত্যাকারীরা মুখ ঢেকে রাখে। ফারুক আহমদের কোন সন্ধান না পেয়ে তার স্বজনরা স্ত্রী হোসনা বেগমকে ফারুক কোথায় রয়েছে জানতে চাইলে সে বলে গত রবিবার ভোরে উঠে তিনি কাজের উদ্দেশ্যে গেছেন, তারপর আর বাড়ী ফেরেনি। ফারুককে খোঁজাখুঁজি করে কোথাও না পেয়ে গত মঙ্গলবার রাতে ফারুক আহমদের চাচা সমছুল হক কানাইঘাট থানায় একটি সাধারণ ডায়রী করতে আসলে থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুল আহাদ ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে তাৎক্ষণিক ফারুক আহমদের বাড়ীতে থানার এসআই সুরঞ্জিত তালুকদার কে পাঠান এবং পুরো বিষয়টি মনিটরিং করেন। এসআই সুরঞ্জিত ঘটনাস্থলে গিয়ে ফারুক আহমদের বসত ঘরে ঢুকে দেখতে পান তার বিছানার খাঁটের উপর রক্তের দাগ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে, ঘরের মেঝেতেও রক্তের দাগ ও পায়ের চিহ্ন পেয়ে তিনি তার স্ত্রী হোসনা বেগমকে ঘরে রক্তের দাগ কেন ফারুক কোথায় জানতে চাইলে সে একেক বার একেক ধরনের কথাবার্তা বললে সন্দেহের তীর হোসনা বেগমমের দিকে পড়লে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। থানায় নিয়ে আসার পর ওসি আব্দুল আহাদ হোসনা বেগম কে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলে এক পর্যায়ে অকপটে স্বীকার করে কি ভাবে সে সহ তার পরকীয়া প্রেমিক মোস্তফা ও তার দুই সহযোগি মিলে হত্যা করে। হত্যার পর পার্শ্ববতী গোরকপুর গ্রামের প্রবাসী মাসুক আহমদের বাড়ীর সেফটি ট্যাংকীর ভিতরে ফারুকের লাশ গুম করে রেখেছে। তার জবানবন্দীর সূত্র ধরে ওসি আব্দুল আহাদ সহ একদল পুলিশ গতকাল বুধবার ভোরে জবাইকৃত ফারুক আহমদের লাশ সেফটি ট্যাংকির ভিতর থেকে উদ্ধার করে প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করে সিওমেক মর্গে প্রেরন করেন। ওসি আব্দুল আহাদ জানিয়েছেন, ফারুক আহমদকে তার স্ত্রী হোসনা বেগম ও তার পরকীয়া প্রেমিক মোস্তফা সহ অপর সহযোগিরা মিলে জবাই করে হত্যা করেছে। নিহতের স্ত্রী হোসনা বেগমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত মোস্তফা সহ তার সহযোগীদের গ্রেফতার করতে পুলিশি অভিযান চলছে। স্ত্রীর পরকীয়ায় বাঁধা দেওয়ায় এ হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে বলে তিনি জানান। এ ঘটনায় থানায় নিহতের চাচা সামছুল হক বাদী হয়ে হোসনা বেগম, মোস্তফা সহ আরো ২ জনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।