ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভের একটি হচ্ছে যাকাত। প্রত্যেক স্বাধীন, পূর্ণবয়স্ক মুসলমান নর-নারীকে প্রতিবছর স্বীয় আয় ও সম্পত্তির একটি নির্দিষ্ট অংশ, যদিও তা ইসলামী শরিয়ত নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করে, তবে গরীব-দুস্থদের মধ্যে বিতরণের নিয়মকে যাকাত বলা হয়। সাধারণত নির্ধারিত সীমার বেশি সম্পত্তি হিজরি এক বছর ধরে থাকলে মোট সম্পত্তির ২.৫ শতাংশ বা ১/৪০ অংশ বিতরণ করতে হয়। যাকাত শুধু সম্পদশালীদের জন্য ফরজ বা আবশ্যক। জাকাত এমন একটি ব্যবস্থা, যার মধ্য দিয়ে সামাজিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা সম্ভব। কারণ যাকাত গরিবের প্রয়োজন মেটাতে সাহায্য করে। দারিদ্র্য বিমোচনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য সৃষ্টি করে। একই সঙ্গে রচিত হয় গরীব-ধনীর মধ্যে সেতুবন্ধ। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে প্রতিবছর রমজান মাসে জাকাত আদায় করা হয়। রমজান সামনে রেখে রাজধানীতে হয়ে গেল যাকাতবিষয়ক একটি সেমিনার। সেমিনারের মূল প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে প্রতিবছর ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি যাকাত ওঠানোর সক্ষমতা থাকলেও সরকারি সংস্থা যাকাত বোর্ড আদায় করছে মাত্র কয়েক কোটি টাকা। এ ছাড়া ব্যক্তি বা করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো বিচ্ছিন্নভাবে জাকাতের অর্থ বিতরণ করছে। বিচ্ছিন্নভাবে যাকাত বিতরণ হওয়ার কারণে দারিদ্র্য বিমোচন ও আয়বৈষম্য কমাতে যাকাত উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারছে না।’ এ অবস্থায় যাকাতের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের আহ্বান জানানো হয়েছে সেমিনারে পঠিত মূল প্রবন্ধে। সেমিনারে আলোচকরাও তাঁদের বক্তব্যে যাকাতের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তাঁরা বলেছেন, যাকাতের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন করা সম্ভব। আবার এটাও সত্য যে যাঁরা যাকাত দেন, তাঁদের একটি বড় অংশ যাকাতের বিষয়ে খুব বেশি সচেতন নন। অথচ ব্যক্তিগতভাবে এবং বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানসহ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো এককভাবে যাকাত দিচ্ছে। এতে সাময়িকভাবে দরিদ্র মানুষের উপকার হয়। কিন্তু টেকসই দারিদ্র্য বিমোচন হচ্ছে না। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যাকাত সংগ্রহ করে আয়বর্ধক কাজে দরিদ্র মানুষকে যুক্ত করা গেলে দারিদ্র্য বিমোচন সহজ হতো। বাংলাদেশের ২৫ শতাংশ মানুষ যাকাত দিতে পারে। সঠিকভাবে সমন্বয় করা গেলে সফলভাবে দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশে এখনো কেন্দ্রীয়ভাবে যাকাত ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। যাকাতের অর্থ সঠিকভাবে ও আয়কর্ধক প্রকল্পে ব্যবহার করতে হলে কেন্দ্রীয়ভাবে যাকাত ব্যবস্থাপনা জরুরি হয়ে পড়েছে। এ কাজটি সফলভাবে করার জন্য সরকারকে যেমন উদ্যোগ নিতে হবে, তেমনি যাকাতদাতাদেরও আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলগুলো নির্ধারণ করে যাকাতের অর্থ সেখানে আয়মূলক কাজে বিনিয়োগ করা যেতে পারে। এ জন্য সমাজের বিত্তশালী মানুষ, করপোরেট ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমন্বিতভাবে সরকারের নির্দিষ্ট করে দেওয়া ফান্ডে যাকাতের টাকা জমা দিতে হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে যাকাত ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে।
