স্টাফ রিপোর্টার :
বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। বাঙালির সার্বজনীন উৎসবও এটি। আবেগ আর উচ্ছ্বাসে নতুন বছরকে বরণ করে নেয় বাঙালি। ১৪২৬ বাংলার আজ রবিবার নতুন বছরের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ। নববর্ষকে বরণ করতে প্রস্তুত সিলেট। নেওয়া হয়েছে নানা আয়োজন। নববর্ষ উৎসবকে নির্বিঘœ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকেও থাকছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সাংস্কৃতিক সংগঠন, সরকারি বেসরকারি অফিস, ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে জোরেশোরে বৈশাখের শেষ মুহূর্তের চলছে প্রস্তুতি। প্রতি বছরের মতো এবারও নববর্ষের সবচেয়ে বড় সমাগম ঘটবে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং এমসি কলেজে বর্ষবরণ উৎসবের জন্য প্রস্তুত থাকবে এই দুটি প্রতিষ্ঠানও। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সংগঠন আলাদা আলাদাভাবে বর্ষবরণে অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। সকালে সম্মিলিতভাবে আয়োজিত হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা।
সিলেটে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের কথা আসলেই উঠে আসে আনন্দলোকের নাম। এবারও এই সঙ্গীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি শ্রীহট্ট সংস্কৃত কলেজ মাঠে আয়োজন করেছে বর্ষবরণ উৎসবের। সকাল ৭টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত নাচে-গানে আনন্দলোক মাতিয়ে রাখবে সংস্কৃত কলেজ প্রাঙ্গণ। পাশেরই ব্লু বার্ড স্কুল মাঠে প্রতিবছরের মতো এবারও বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে শ্র“তি। সকাল ৬টা থেকে শুরু হওয়া এই আয়োজনকে সফল করতে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি সেরে নিয়েছে সংগঠনটি।
পহেলা বৈশাখের বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নানা অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেবে উদীচী।
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েও নানা আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করা হবে। মঙ্গলশোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক কলাকুশলী সবাই খুব ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। শেষ মুহূর্তে স্টল সাজসজ্জায়ও কাজ করছেন সবাই।
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে জনসংযোগ কর্মকর্তা ফয়সাল খলিলুর রহমান বলেন, বৈশাখকে বরণ করতে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে ক্যাম্পাসে। প্রাণের উৎসবকে বরণ করতে সবাই প্রাণ লাগিয়ে কাজ করছেন। সবই প্রস্তুত, এখন শুধু বৈশাখের অপেক্ষায় আছি আমরা।
বাংলা নতুন বছরকে বরণ করতে সিলেটের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরাও শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি সেরে নিয়েছে। শুধু বৈশাখ বরণ নয় চৈত্রকে বিদায় জানাতে প্রস্তুতি চলছে সাংস্কৃতিক কর্মীদের।
গতকাল শনিবার বিকেলে পুরাতন বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ করেত সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নৃত্যশৈলী আয়োজন করে ‘শেষ বিকালের রং’ শীর্ষক অনুষ্ঠান। ওই অনুষ্ঠানে নৃত্যশৈলীর নিয়মিত পরিবেশনার পাশাপাশি থাকবে লোকজ ধারার নাচ।
নৃত্যশৈলীর পরিচালক নিলাঞ্জনা জুই বলেন, পুরাতন বছরকে বিদায় জানাতে ও নতুন বছরকে বরণ করতেই আমাদের এই অনুষ্ঠান। বড় আয়োজন তাই প্রস্তুতিও বেশি। আমাদের শিল্পীরা সব ধরনের প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শেষ করেছেন। এখন শুধু চূড়ান্ত পরিবেশনার অপেক্ষা।
এদিকে লিডিং ইউনিভার্সিটি এবার বৈশাখ উপলক্ষে মেলা, বাউলগান, পুতুল নাচ, সাপ খেলা, বানর খেলা, জাগলিং, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, আনন্দ শোভাযাত্রা, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী জিনিসপত্রের প্রদর্শনীসহ বর্ণাঢ্য আয়োজন করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কালচারাল ক্লাবের উদ্যোগে এই আয়োজন করা হয়েছে।
লিডিং ইউনিভার্সিটি কালচারাল ক্লাবের সভাপতি এস এইচ নিরব বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আয়োজন করতে যাচ্ছি আমরা। সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে আছে। এবারের বৈশাখী মেলায় বাউলগান, পুতুল নাচ, সাপ খেলা, বানর খেলাসহ নানা আয়োজন থাকবে আমাদের বৈশাখের অনুষ্ঠানে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পরিবেশনায় থাকবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়ে গেছে। তবে আমাদের বৈশাখের আয়োজনের প্রধান আকর্ষণ গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী জিনিসপত্রের প্রদর্শনী। এজন্য বিভিন্ন এলাকা থেকে আমরা গরুর গাড়ি, মই, লাঙলসহ হারিয়ে যাওয়া অনেক জিনিস সংগ্রহ করেছি। আমাদের এই বৈশাখের আয়োজন সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। সকলের উপস্থিতি আমাদের আয়োজনকে সাফল্যমণ্ডিত করবে।
নববর্ষ উপলক্ষে সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নগরীর চাঁদনীঘাট এলাকায় আয়োজন করা হয়েছে সপ্তাহব্যাপী মেলার। এছাড়া প্রতিবারের মত সিসিক এবারও বছরের নতুন সূর্যকে বরণ করতে পহেলা বৈশাখ সকাল ৯ টায় নগরীতে আনন্দ শোভাযাত্রা বের করবে। এছাড়া সকাল ১০ টায় নগর ভবনে শিশু কিশোরদের মধ্যে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। পহেলা বৈশাখ থেকে সপ্তাহ ব্যাপী ঐতিহাসিক সারদা হলের সামনে শুরু হবে বৈশাখী মেলা। এসব অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
এদিকে বাংলা নববর্ষ ১৪২৬ উপলক্ষে সর্বস্তরের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও সবধরণের বিশৃঙ্খলতা এড়াতে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৯) বিশেষ নিরাপত্তা কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এর প্রেক্ষিতে গতকাল শনিবার নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ টহল দিয়েছে র্যাব। নগরীর বন্দরবাজার এলাকায় সাজোয়া বহর নিয়ে বিশেষ টহল দিতে দেখা যায় র্যাবের একটি দলকে।
র্যাব জানায়, উৎসব অনুষ্ঠানের সময় বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন, চরমপন্থী বা স্বার্থান্বেষী মহল যাতে যে কোন ধরনের অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি সৃষ্টি না করতে পারে সে জন্য র্যাব-৯, সিলেট কর্তৃক ৩ স্থরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করেছে। র্যাবের বিশেষ টহলের পাশাপাশি সাদা পোশাকে ও মোটর সাইকেল টহলসহ র্যাব সদস্যগণ সিলেট নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সতর্কতার সাথে অবস্থান করবে।
নববর্ষকে নির্বিঘœ করতে এসএমপি’র ১৩ নির্দেশনা: পহেলা বৈশাখে এসএমপি পুলিশের পক্ষ থেকে নগরবাসীর জন্য ১৩টি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ১৩টি নির্দেশনার মধ্যে মোটরসাইকেল চলাচলের ক্ষেত্রে বিশেষ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
এছাড়া মোটরসাইকেলে স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে বসতে পারবেন। অন্যথায় চালক ছাড়া অন্য কোন আরোহী বহন করা যাবে না। মোটরসাইকেলে একযোগে বা দলগতভাবে চালিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি বা যান চলাচলের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পহেলা বৈশাখে উৎসবে নির্বিঘœ করতে সিলেটে জুড়ে নিরাপত্তা ছক চূড়ান্ত করেছে। এসব নির্দেশনার বাইরে কেউ কোনও ধরনের কার্যক্রম কিংবা অপচেষ্টা করলে সঙ্গে সঙ্গে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশনাও দেওয়া হয়। সিলেট জুড়ে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি কয়েক দফায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সিলেটে অনুষ্ঠান চলাকালিন সময়ে অনুষ্ঠান মঞ্চের আশপাশে থাকবে র্যাবের সাদা পোশাকের গোয়েন্দা টিম। নববর্ষের আগের দিন শনিবার থেকে পুলিশের কর্মকর্তারাও মহানগরজুড়ে তল্লাশি অভিযান চলে। মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে বাসানো হয় পুলিশের বিশেষ নিরাপত্তা চৌকি। গোয়েন্দা সংস্থার কয়েকটি ইউনিট সার্বিক অবস্থা তদারকি করছে।
মহানগরী এলাকায় সব ধরণের বর্ষবরণের অনুষ্ঠান সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে শেষ করার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মহানগর পুলিশের ছয়টি থানাকে নিজ নিজ এলাকার নিরাপত্তা জোরদার ও অনুষ্ঠান আয়োজকদের সর্তক থাকার পাশাপাশি অনুষ্ঠান চলাকালিন সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও সিলেট মহানগরী এলাকায় সব ধরণের বর্ষবরণের অনুষ্ঠান সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে শেষ করার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার জেদান আল মুসা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মহানগরীর বাসিন্দাদের সর্তক করে ১৩টি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বর্ষবরণের দিন কোনও ধরণের আতশবাজি, পটকা ফাটিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা যাবে না। পুলিশের নির্দেশনার বাইরে কেউ কোনও কাজ করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অনুষ্ঠানে ব্যাগ, থলে, পোটলা, সুটকেস, টিফিন ক্যারিয়ার বা এ জাতীয় কোন বস্তু বহন না করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও খোলা ট্রাকে বাদ্যযন্ত্র বা সাউন্ড বক্স নিয়ে সিলেট মহানগর এলাকায় প্রবেশ করা যাবে না এবং কোনও ধরণের রং ছিটানো যাবে না। অনুমোদিত অনুষ্ঠান আয়োজনকারী কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সিসিটিভি স্থাপন/ ভিডিওচিত্র ধারণ এর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পুলিশের দেওয়া নির্দেশনা আজ রবিবার রাত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।