৩ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ২০ জন নিহত ॥ অশিক্ষিত, অদক্ষ চালক ও অসচেতনতার কারণে সিলেটে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা

198

সিন্টু রঞ্জন চন্দ :
অসচেতনতা, অশিক্ষিত ও অদক্ষ চালকের কারণে সিলেট জেলায় সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৯ এর জানুয়ারী থেকে মার্চের ২৮ তারিখ পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ, বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ ছাত্র ও শিশুসহ ২০ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে সিলেটের ওসমানীনগর এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় বেশী লোকজন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় অর্ধশত।
চলতি মার্চ মাসের ২৮ তারিখ পর্যন্ত গোয়াইনঘাটে ১ জন, সদর উপজেলার ধুপাগুলে ১ জন, বিছানাকান্দি-জাফলং সড়কে সেনাবাহিনীর স্ত্রী-ছেলে ২ জন, শেরপুর ইচ্ছাকৃত ভাবে চলন্ত গাড়ীর নেচে ফেলে সিকৃবির ছাত্র ১ জন, বটেশ্বরে ১ বৃদ্ধা ও কমলগঞ্জে কলেজ ১ ছাত্র নিহত হন।
ফেব্র“য়ারীতে কানাইঘাটে নারী-শিশু ২ জন, ওসমানীনগরে ১ জন, ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কে নানি-নাতনি ২ জন, ওসমানীনগরে ১ জন মাদ্রাসা অধ্যক্ষ ও দক্ষিণ সুরমায় ৩ কলেজ ছাত্রী নিহত হন।
এছাড়া জানুয়ারী মাসে গোলাপগঞ্জে ২ জন, জৈন্তাপুরে ১ জন ও ওসমানীনগরে ১ জন নিহত হয়েছেন।
এসব দুর্ঘটনার জন্য দায়ী যানবাহন হচ্ছে বাস, ট্রাক, সিএনজি অটোরিক্সা, কাভার্ডভ্যান, মাইক্রোবাস, ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেল।
অশিক্ষিত চালক, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, জনগণের অসচেতনতা, অনিয়ন্ত্রিত গতি, রাস্তা নির্মাণে ত্রুটি, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব, আইন ও তার যথারীতি প্রয়োগ ইত্যাদি দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)।
এছাড়াও গাড়ী চালাতে অদক্ষ, ঘুষ দিয়ে চালকেরা গাড়ী লাইন্সেন পাওয়া, বেপোরোয়াভাবে গাড়ী চালনো, গাড়ী চালানোর সময় অভারটেক করা, চোখে ঘুম নিয়ে গাড়ী চালানো ও গাড়ীর কনডিশন ও ব্রেক না দেখে গাড়ী চালানো কারণে সড়ক দুর্ঘটনায় লোকজন নিহত হওয়ার কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন ভোক্তভোগীরা।
তারা দাবী করেছেন, এসব দিক বিবেচনা করে গাড়ীর মালিক ও সমিতির নেতৃবৃন্দরা গাড়ী চালকদের সড়কে গাড়ী চালানোর দিকটি বেশী করে নজরে রাখা। তাহলে কিছুটা হলেও সড়ক দুর্ঘটনা কমতে পারে।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) ২০১৮ সালে সিলেট বিভাগে সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই বছরে সিলেট বিভাগে মোট ১৬২টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে নিহত হন ১৯৫ জন এবং ৪৯৯ জন আহত হন।
এর মধ্যে সিলেট জেলায় ৫৫টি দুর্ঘটনায় নিহত হন ৭১ জন ও আহত হয়েছেন ২০৮ জন। সুনামগঞ্জ জেলায় ২৬টি দুর্ঘটনায় নিহত ২৯ জন ও আহত ১১০ জন, মৌলভীবাজার জেলায় ২২টি দুর্ঘটনায় নিহত ২৬ জন ও আহত ৩২ জন এবং হবিগঞ্জ জেলায় ৫৯টি দুর্ঘটনায় নিহত হন ৬৯ জন ও আহত ১৪৯ জন।
নিসচা কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য সচিব মো. জহিরুল ইসলাম মিশু বলেছিলেন, নিসচা ২০১২ সাল থেকে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন দিয়ে আসছে। সড়ক দুর্ঘটনারোধের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর ১৭ দফা নির্দেশনা ও সম্প্রতি পাশ হওয়া সড়ক পরিবহন আইনের দ্রুত বাস্তবায়ন করলে দুর্ঘটনা অনেক কমে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, গত ২৪ মার্চ রবিবার মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা সদরে দ্রুতগামী একটি সিএনজি অটোরিক্সার আঘাতে সুমন মিয়া (২৩) নামের এক কলেজ ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। বেলা সাড়ে ১২টায় কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের অদূরে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড টেকনোলজির সামনে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিহত সুমন শ্রীমঙ্গল সরকারী কলেজের বিএসসি শেষ বর্ষের ছাত্র। সে ভানুগাছ বাজারের রিক্সা ও সাইকেল মেইকার বাবুল মিয়ার পুত্র।
একইদিন সন্ধ্যা ৬টায় শাহপরাণ এলাকার বটেশ্বর জালালনগরে রাস্তা পারাপারের সময় একটি অজ্ঞাতনামা গাড়ীর ধাক্কায় নিহত হয়েছেন মন্তাজ বেগম (৬৫)। নিহত বৃদ্ধা জালালনগরের আব্দুর রহমানের স্ত্রী। আহত অবস্থায় মন্তাজ বেগমকে ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাত সাড়ে ৮টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
২৩ মার্চ শনিবার বাকবিতণ্ডার জেরে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) ওয়াসিম আফনান (২১) নামে এক ছাত্রকে ইচ্ছকৃতভাবে বাসের নিচে ফেলে হত্যা করা হয়। বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে বিকেলে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের শেরপুরে মুক্তিযোদ্ধা চত্বর এলাকায় উদার পরিবহনের (ঢাকা গ ১৪-১২৮০) নং বাসের চাপায় তার মৃত্যু হয়। ওয়াসিম হবিগঞ্জের রুদ্রগ্রাম এলাকার মাহবুব ঘুরির পুত্র ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের ফলাফল প্রত্যাশী শিক্ষার্থী। এ ঘটনার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা ও ক্লাস বর্জন করে ৩দিনের কর্মসূচী পালন করে, ক্যাম্পাসে মিছিল মিটিং, রাজপথ অবরোধসহ এই কয়েক দিন ছিল উত্তাল সিলেট।
তবে ঘটনার পর পরই আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ঘাতক বাস, গাড়ীর চালক ও হেলপারকে আটক করেছে। বর্তমানে চালক ও হেলপার পুলিশ রিমান্ডে রয়েছে।
সিলেট-ময়মনসিংহ রুটে চলাচলকারী উদার পরিবহনের বাসটির চালক ও হেলপারের সঙ্গে সিকৃবির ১০ জন ছাত্রের বাকবিতণ্ডা হয়। শিক্ষার্থীরা সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে নামতে চাইলে বাস থেকে কয়েকজনকে নামিয়ে দিয়েই দ্রুত গতিতে চলতে থাকে। এ সময় ওয়াসিম বাসের দরজার হাতল ধরে ঝুলতে থাকলে হেলপার গাড়ির দরজা লাগিয়ে দেন এবং চালক বাস না থামিয়ে চালাতে থাকেন। এতে ওয়াসিম বাসের নিচে চাপা পড়েন। পরে দ্রুত ওয়াসিমকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনার পর ২৫ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাদী হয়ে মৌলভীবাজার মডেল থানায় গাড়ির চালক জুয়েল, হেলপার মাসুক মিয়া এবং সুপারভাইজার সেবুল মিয়াকে আসামি করে হত্যা মামলা (মামলা নং-২২) দায়ের করে। তবে মামলার ওপর আসামি বাসের সুপারভাইজার সেবুল মিয়া পলাতক রয়েছেন। গ্রেফতারকৃত দুই আসামি পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা জানিয়েছেন। ধৃত চালক ও হেলপা কে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হলে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
গত ১৯ মার্চ মঙ্গলবার সিলেটে বেড়াতে এসে ট্রাক-সিএনজিচালিত অটোরিক্সা সংঘর্ষে সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী-ছেলে নিহত হয়েছেন। বিকেলে বিছানাকান্দি-জাফলং সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট সোজা আহমদের স্ত্রী ইলোরা পারভীন (৩৮) ও তাদের ছেলে সাজিদ মিয়া (৬)। এ সময় দুর্ঘটনায় সোজা আহমদের পরিবারের সঙ্গে থাকা মাহিন ও সজিব নামে ২জন আহত হন। ঢাকা সেনানিবাস থেকে তারা সিলেটে বেড়াতে এসেছিলেন। বিছানাকান্দিতে বেড়াতে গিয়ে ফেরার পথে ঘটনাস্থলে পৌছলে ট্রাকের ধাক্কায় অটোরিকশাটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়।
৮ মার্চ শুক্রবার সদর উপজেলার ধুপাগুল এলাকায় ট্রাকচাপায় মো. বাহার উদ্দিন (২২) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হন। বিকেলে সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। বাহার গোয়াইঘাট উপজেলার সালুটিকরের আঙ্গরজুর গ্রামের মো. আব্দুল মান্নানের পুত্র। সালুটিকর থেকে ছেড়ে আসা মালবাহী একটি ট্রাক ঘটনাস্থলে পৌঁছালে একটি মোটরসাইকেলকে চাপা দেয়। এতে গুরুতর আহত হন মোটরসাইকেল আরোহী বাহার। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। স্থানীয়রা ট্রাকটি আটক করলেও চালক ও হেলপার পালিয়ে যান।
গত ৬ মার্চ বুধবার সিলেটে একটি প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে থাকা বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা গেলে জাহিদ হোসেন (৩০) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও তিনজন। জাহিদ হোসেন ঢাকার তুরাগ থানার উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরের বাইলঝুড়ি এলাকার কবির হোসেনের পুত্র। দুপুরে সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট উপজেলার বাগেরসড়ক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সিলেট থেকে জাফলংগামী (ঢাকা মেট্রো গ-২৯-০১৩০) একটি প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে থাকা বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে ঘটনাস্থলেই জাহিদ হোসেন মারা যান। আহত হন আরও ৩জন।
গত ১৬ ফেব্র“য়ারী শনিবার সিলেটে বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিক্সার মুখোমুখি সংঘর্ষে লিয়া বেগম (১৭) ও আয়শা সিদ্দিকা (১৮) নামে দুই কলেজছাত্রীসহ ৩ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো একজন। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বদিকোনা পশ্চিমপাড়া মারকাজের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা সম্পর্কে চাচাতো বোন।
নিহত লিয়া দক্ষিণ সুরমার মোহাম্মদপুর গ্রামের সৈয়দ মজলিস আলীর মেয়ে। সে দক্ষিণ সুরমা ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। আয়শা একই গ্রামের লিয়াকত হোসেনের মেয়ে। সে দক্ষিণ সুরমা নুরজাহান মেমোরিয়াল কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। এছাড়াও এ ঘটনায় লিয়া ও আয়েশার ভাবি তাসলিমা বেগম গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
বিকেলে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা একটি বাসের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই লিয়ার মৃত্যু হয়। এসময় গুরুতর আহত হন আয়শাসহ আরো ২ যাত্রী। তাদের উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে নেওয়ার পর পরই আয়শার মৃত্যু হয়। আর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তাসলিমা বেগম। এদিকে, দুর্ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতা সড়ক অবরোধ করলেও পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে অবরোধ তুলে নেন।
গত ১৪ ফেব্র“য়ারী বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ওসমানীনগর উপজেলার বুরুঙ্গা এলাকায় প্রাইভেটকারের ধাক্কায় মাওলানা শায়খুল ইসলাম (৫০) নামে মাদরাসার এক অধ্যক্ষ নিহত হয়েছেন। শায়খুল উপজেলার বুরুঙ্গা শেখ ফজিলাতুননেছা ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ। তিনি সুনামগঞ্জ জেলার বিশ্বম্বরপুর থানার ফতেপুর ইউপির অনন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা। দুপুরে মোটরসাইকেলে করে মাদরাসায় যাচ্ছিলেন শায়খুল। পথে বুরুঙ্গা এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি প্রাইভেটকার মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
গত ৫ ফেব্র“য়ারী মঙ্গলবার সিলেটে যাত্রীবাহি বাস ও সিএনজি অটোরিক্সার সংঘর্ষে শিশুসহ দু’জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো ৩ জন। নিহতরা সম্পর্কে নানি ও নাতনি। সন্ধ্যায় সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের হাজিগঞ্জ বাজারের ধরমতলা নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম মল্লিকপুর গ্রামের আহসান মিয়ার স্ত্রী ফরিদা বেগম (৪৫) ও তার নয় মাস বয়সী নাতনী ও সেলিম মিয়ার নয় মাস বয়সী শিশু কন্যা আফরোজা বেগম তিশা। দুর্ঘটনায় আহসান মিয়া ও তার মেয়ে, নিহত শিশুর মা ইয়াসমিন আক্তার এবং চালক আহত হয়েছেন।
সিএনজি অটোরিকশাটি সিলেট শহর থেকে ফেঞ্চুগঞ্জের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। ঘটনাস্থলে যাওয়া মাত্র বিপরীতগামী মিনিবাসের সঙ্গে সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে ফরিদা বেগম মারা যান। গুরুতর অবস্থায় আহতদের উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে নেওয়া হলে শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক। তবে দুর্ঘটনার পর আহতাবস্থায় অটোরিকশা চালক পালিয়ে যায়। দুর্ঘটনার আগে অটোরিকশা চালক ঘুম কাতুরে ছিল।
গত ১ ফেব্র“য়ারী শুক্রবার অটোরিকশায় মায়ের কোলে চড়ে চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছিল অসুস্থ রিফাত (৮)। সঙ্গে ছিলেন বাবাও। হঠাৎ বাসের ধাক্কায় মায়ের কোল থেকে রিফাতকে কেড়ে নিলো সড়ক দুঘর্টনায়। রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ওসমানীনগর উপজেলার কুরুয়া এলাকায় বাসের ধাক্কায় প্রাণ যায় শিশুটির। এ সময় আহত হন তার বাবা-মা ও অটোরিক্সাচালক। নিহত রিফাত বালাগঞ্জ উপজেলার দেওয়ানবাজার ইউনিয়নের তালতলা গ্রামের সাইদুর রহমানের পুত্র।
একইদিন ১ ফেব্র“য়ারী কানাইঘাট উপজেলায় পৃথক দুর্ঘটনায় একটি শিশু ও এক নারীর মৃত্যু হয়। সন্ধ্যায় সীমান্তবর্তী কানাইঘাট উপজেলার বড় চতুল ইউনিয়নের মালীগ্রামে ও বিকেলে কানাইঘাট পৌরসভার দুর্লভপুর গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন-উপজেলার বড়চতুল ইউনিয়নের মালীগ্রামের মৃত আব্দুল ওয়াহিদের স্ত্রী ছফাই বিবি (৪৫) ও সাতবাঁক ইউনিয়নের সাতপারি গ্রামের নুরুল আলমের পুত্র রুহেল আহমদ (৭)। বাড়ি থেকে এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাচ্ছিলেন ছফাই বিবি। পথে উপজেলার বাসস্ট্যান্ড রোডে সিএনজি চালিত অটোরিক্সার ধাক্কায় তিনি গুরুতর আহত হন। এ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে আসার সময় তিনি মারা যান। এদিকে, বিকেলে উপজেলার সাতবাঁক ইউনিয়নের সাতপারি গ্রামে লেগুনার ধাক্কায় রুহেল আহমদ মারা যায়।
গত ৩১ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার সিলেটে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি যাত্রীবাহী হিউম্যান হলার (লেগুনা) রাস্তার পাশে দোকানে ঢুকে গেলে ফয়ছল আহমদ (২০) নামে এক যুবক নিহত হন। এ সময় আহত হয়েছেন চালকসহ আরো দু’জন। রাত পৌনে ১০টার দিকে সিলেট-তামাবিল সড়কের জৈন্তাপুর উপজেলায় হেমু করিচর ব্রিজ এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। ফয়সাল গোয়াইনঘাট উপজেলার বাসিন্দা। জৈন্তাপুর থেকে সিলেট শহরের উদ্দেশে ছেড়ে আসা লেগুনাটি ঘটনাস্থলে পৌঁছালে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের একটি দোকানকে চাপা দেয়। এতে লেগুনাচাপায় ঘটনাস্থলেই মারা যান ফয়সাল।
২৭ জানুয়ারি রবিবার ওসমানীনগর উপজেলার সোয়ারগাঁও এলাকায় ট্রাকের ধাক্কায় খোকন দেব (৩৫) নামে এক সিএনজিচালিত অটোরিক্সা চালকের মৃত্যু হয়। সকালে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত খোকন উপজেলার গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের একারাই গ্রামের ঝন্টু দেবের ছেলে। সিএনজি ফিলিং স্টেশন থেকে অটোরিক্সা সিলিন্ডারে গ্যাস লোড করে ফিরছিলেন চালক খোকন দেব। ঘটনাস্থলে এলে সিলেটগামী একটি ট্রাক ধাক্কা দেয়। এ সময় চালক খোকনের মৃত্যু হয়।
গত ৯ জানুয়ারি বুধবার গোলাপগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের চৌঘরী এলাকায় বাসচাপায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার দুই যাত্রী নিহত ও ৩ জন আহত হয়েছেন। সন্ধ্যায় সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত জয়নুল ইসলামের বাড়ি জকিগঞ্জ উপজেলার শাহবাগপুর মুহিতপুর গ্রামে ও আল আমিন (২৮) গোলাপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের স্বরসতী গ্রামের ইব্রাহিম আলীর পুত্র। আহতরা জকিগঞ্জ উপজেলার শাহবাগ মুহিতপুর গ্রামের এহিয়া আহমদ (১৮)। ওইদিন বিকেলে জকিগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা একটি যাত্রীবাহী বাস ও বিপরীত দিক থেকে আসা একটি সিএনজিচালিত অটোরিক্সা চাপা দেয়। এতে সিএনজি অটোরিক্সায় থাকা জইনুল ইসলাম ঘটনাস্থলে নিহত হন। আহত হন অন্য ৪ যাত্রী। ঘটনার পর স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে পাঠায়। পরে সেখানে আরও একজনের মৃত্যু হয়।