বাংলাদেশ সরকারের পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন ও সিলেট চেম্বার এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত “স্টেকহোল্ডার কনসালটেশন ওয়ার্কশপ অন পিপিপি প্রজেক্ট্স ইন ট্যুরিজম সেক্টর” শীর্ষক এক কর্মশালায় সিলেট পর্যটন মোটেলকে পিপিপি’র আওতায় আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। সিলেটকে ভূস্বর্গ উল্লেখ করে বলা হয় দেশী বিদেশী বিনিয়োগকারীরা পর্যটন ক্ষেত্রে এগিয়ে আসলে পুরো দেশের চিত্র বদলে যাবে। সিলেটের সৌন্দর্য্য বিশ্ব দরবারে তুলে ধরা সম্ভব হবে। বিশেষ করে সিলেটে পর্যটনের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে বিনিয়োগও হবে লাভজনক।
বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ ২০১৯) সিলেট চেম্বারের কনফারেন্স হলে আয়োজিত সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা এই অভিমত ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত সচিব) মুহাম্মদ আলকামা সিদ্দিকী।
কর্মশালায় পিপিপি কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা বলেন, পিপিপি’র মাধ্যমে সিলেটের পর্যটন মোটেলকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ট্যুরিজম কমপ্লেক্স হিসেবে গড়ে তোলা হবে। পর্যটন মোটেলের নিষ্কন্ঠক প্রায় ২৮ একর জমি রয়েছে। পিপিপি’র আওতায় বিনিয়োগকারীদের ৪৫ বছরের জন্য তা লীজ দেওয়া হবে। অন্তত একশ কোটি টাকা বিনিয়োগে সক্ষম উদ্যোক্তাদের এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য দরপত্র আহবান করা হচ্ছে। এখানে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ নিরাপদ থাকবে এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের পক্ষ থেকে সবধরণের সহযোগিতা করবে কর্তৃপক্ষ। ২০১৫ সালে পিপিপি আইন করা হয়েছে বিনিয়োগকে সুরক্ষিত করার জন্য। পিপিপি’র আওতায় মৌলভীবাজারে অবসর নামে একটি প্রকল্প প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহে গড়ে তোলা হচ্ছে। প্রবাসীদের আহবানেই প্রবীণদের নিরাপদ আবাসনস্থল হিসেবে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক এম. কাজী এমদাদুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিলেট চেম্বার সভাপতি খন্দকার সিপার আহমদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিপিপি কর্তৃপক্ষের মহাপরিচালক মোঃ আবুল বাসার। কর্মশালার বিষয়বস্তু তুলে ধরেন পিপিপি কর্তৃপক্ষের পরিচালক মিরানা মাহরুখ এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিপিপি কর্তৃপক্ষের পরামর্শক মোঃ মোর্শেদ হায়দার।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত সচিব) মুহাম্মদ আলকামা সিদ্দিকী বলেন, বঙ্গবন্ধুর আজীবন লালিত স্বপ্ন প্রকৃত অর্থে নবরূপে বাস্তবায়নের জন্য সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ গঠনে কর্মসূচী ঘোষণা করেছেন। প্রধামন্ত্রীর এই কর্মসূচী বাস্তবায়নে রাস্তা-ঘাট ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি মানুষের সার্বিক চাহিদা পূরণেও প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, পর্যটনকে প্রধানমন্ত্রী নিজে ধারণ করেন বলেই এসব বাস্তবায়নে নিজের কার্যালয়ের অধীনে রেখেছেন পিপিপি কর্তৃপক্ষকে। তিনি বলেন, সরকারের একার পক্ষে সব কর্মসূচী বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলেই বেসরকারী উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, সিলেট চেম্বার উদ্যোগ নিলে পিপিপি’র মাধ্যমে সিলেটে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সহজ হবে।
সরকার তাদেরকে সবধরণের সহযোগিতা করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পিপিপি কর্তৃপক্ষ বিনিয়োগ করবেনা তবে উদ্যোক্তাদের সবধরণের সহযোগিতা দেবে। তিনি সিলেটকে দেশের অন্যতম আধ্যাত্মিক ও পর্যটন এলাকা উল্লেখ করে এখানে বিনিয়োগের জন্য দেশী-বিদেশী উদ্যোক্তাদের আহবান জানান। তিনি “ট্যুরিজম ওয়েব পোর্টাল” চালু করে সিলেট অঞ্চলের সব পর্যটন এলাকার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
কর্মশালায় আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের ম্যানেজার প্ল্যানিং মোঃ নুরুল ইসলাম, সিলেট চেম্বারের সহ সভাপতি মোঃ এমদাদ হোসেন, পরিচালক ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ, সিলেট উইমেন চেম্বারের সভাপতি স্বর্ণলতা রায়, কলামিস্ট আফতাব চৌধুরী, অধ্যাপক শফিকুর রহমান, মোঃ আব্দুল হান্নান, ইছমত হানিফা, হুমায়ুন কবির চৌধুরী, রুহুল আমিন প্রমুখ।
কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকরামুল কবির, সিলেট চেম্বারের পরিচালক মোঃ সাহিদুর রহমান, আমিরুজ্জামান চৌধুরী, এহতেশামুল হক চৌধুরী, মুকির হোসেন চৌধুরী, আব্দুর রহমান, চন্দন সাহা, মুজিবুর রহমান মিন্টু, সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বারের সহ সভাপতি হুরায়রা ইফতার হোসেন। এছাড়াও সিলেট বিভাগের বিভিন্ন রিসোর্ট, হোটেল ও মোটেলের প্রতিনিধিবৃন্দ, পর্যটন খাতের উদ্যোক্তাবৃন্দ, সরকারী কর্মকর্তাবৃন্দ, সিলেট চেম্বারের সদস্যবৃন্দ, এবং প্রেস ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি