কাজিরবাজার ডেস্ক :
নতুন করে আর কোন মহাসড়কের অনুমোদন দেবে না সরকার। নতুন করে মহাসড়ক নির্মাণের প্রয়োজন নেই জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্টদের এবার রেলপথ-নদীপথের দিকে নজর দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে সারাদেশের নদী রক্ষা করার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। নদী রক্ষার পাশাপাশি ঢাকার বাইরে যে কোন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পুকুর-জলাশয় রক্ষা করে প্রকল্প বাস্তবায়নের নিদের্শনাও দেন সরকারপ্রধান।
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তিনি এসব নির্দেশনা দেন। একনেক চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাগুলো জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
একনেক সভায় মোট ৬ হাজার ২৭৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ৮টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। এর মধ্যে সরকার ব্যয় করবে প্রায় ৩ হাজার ৩১৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক ঋণে ২ হাজার ৯৬২ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয় হবে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। এসম তিনি বলেন, রেল, সড়ক ও নৌপথের সমন্বিত নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাজধানীর সঙ্গে দেশের বিভিন্ন জেলা ও আঞ্চলিক যোগাযোগের পরিসংখ্যান হিসেবে সারাদেশে মহাসড়কের পরিমাণ প্রায় ২২ হাজার কিলোমিটার। অভ্যন্তরীণ যোগাযোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা ছয়টি মহাসড়ক শেষ দশ বছরে উন্নীত হয়েছে চার লেনে। যা বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান উন্নতিরই স্মারক। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন এসব কারণেই সরকার হয়তো চায় না নতুন করে আর কোন মহাসড়ক তৈরি করতে। নদী ও রেলপথে এ কারণেই বিশেষ দৃষ্টি মনে করছেন অনেকেই। এদিকে একনেক সভায় ‘নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জাপানী অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন সড়কের প্রয়োজন নেই। আমাদের দেশে পর্যাপ্ত মহাসড়ক রয়েছে, এগুলো শুধু সংস্কার-মেরামত করতে হবে। এখন রেলওয়ের দিকে নজর দিতে হবে, পাশাপাশি নৌপথের দিকেও নজর দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর বরাতে মন্ত্রী আরও বলেন, সড়কের প্রকল্প আমরা নেব না তানা, কিন্তু রেল ও নৌপথে বেশি জোর দিতে চাই। যোগাযোগে ‘জাতীয় গ্রিড’ তৈরি করতে হবে। এছাড়াও পানি উন্নয়ন বোর্ডে একটি প্রকল্প ও ঢাকা সিটি নেইবারহুড আপগ্রেডিং প্রকল্প অনুমোদন দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী দেশের নদীগুলো রক্ষার কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু বড় বড় নদী নয়, ছোট নদীর দিকেও নজর দিতে হবে। সেই সঙ্গে ঢাকাসহ আশপাশের নদীগুলোকে রক্ষার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী সিটি কর্পোরেশনকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। ঢাকার বাইরে যে কোন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পুকুর-জলাশয় রক্ষা করে তা করার কথা বলেন।
বিভিন্ন প্রকল্পের বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, দেশে দ্রুত শিল্পায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছে। এ সব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পরিকল্পিত শিল্পায়নের মাধ্যমে দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে স্থানীয় এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সরকার খোলা দ্বার নীতি নিয়েছে। এই নীতির আলোকে অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো স্থানীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগে আকৃষ্ট করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া দেশের সুষম উন্নয়ন নিশ্চিতে সরকার বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে ২০১৫ সাল হতে ২০৩০ সালের মধ্যে ১৫ বছরে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের পরিকল্পনা নিয়েছে। এর মধ্যে ২০১৮ সালের জুনে মোট ৭৯টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেয়া হয়েছে যার মধ্যে ৫৬টি সরকারীভাবে এবং অবশিষ্ট ২৩টি বেসরকারীভাবে প্রতিষ্ঠা করা হবে। এদিন নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলায় জাপানিজ ও স্থানীয় বিনিয়োগ আকৃষ্ট করে শিল্পোৎপাদনের মাধ্যমে রফতানি আয় বৃদ্ধি এবং বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশীকে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে।
অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২ হাজার ৫৮২ কোটি ১৮ লাখ টাকা। তাঁতীদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে চলতি মূলধন সরবরাহ ও তাঁতের আধুনিকায়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১৫৮ কোটি টাকা।
এই প্রকল্প অনুমোদনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁতীদের তালিকা তৈরি করতে হবে। এরপরে তাঁতীদের উন্নয়ন করতে হবে। তাদের ঋণ ডেলিভারি সহজ করতে হবে। তারা যেন নিয়মিত ঋণ পায়, সেজন্য ১০ টাকার এ্যাকাউন্ট খুলে দিতে হবে। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা যখন বিদেশে যাই এবং বিদেশীদের তাঁতের উপহার সামগ্রী দিয়ে থাকি, তখন বিদেশীরা অনেক খুশি হয়।
এছাড়াও অনুমোদন দেয়া কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১৫৬ কোটি টাকা। জয়পুরহাট জেলায় তুলশী গঙ্গা, ছোট যমুনা, চিড়ি ও হারাবতী নদী পুনঃখনন প্রকল্পের খরচ ধরা হযেছে ১২৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। মূলত এই প্রকল্প নিয়ে কথা বলার সময়ই প্রধানমন্ত্রী বড় নদীর পাশাপাশি ছোট নদীর দিকেও নজর রাখার কথা বলেন। ছোট ছোট নদী রক্ষার জন্য প্রয়োজনে খনন করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়াও অনুমোদন পাওয়া উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রাম সড়কে অনুর্ধ ১০০ মিটার সেতু নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। ঢাকা সিটি নেইবারহুড আপগ্রেডিং প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৮৮০ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। সমগ্র দেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দির ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও সংস্কার প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২২৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের প্রোফাইল প্রণয়নে প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১৬৪ কোটি টাকা।
সভায় একনেকের বিকল্প চেয়ারম্যান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্শি, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।